খুলনা জেলা প্রতিনিধি :
সাদা পোশাকে কাউকেই গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) খুলনার শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলার পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ সকল সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নির্ধারিত পোশাক পড়তে হবে। বাংলাদেশের অনেক থানা থেকে হাতিয়ার লুট হয়েছে। তবে অভিযানের পরেও আশানুরূপ অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা উদ্ধার করতে হবে।
তিনি বলেন, থানা থেকে লুট হওয়া অনেক অস্ত্রই এখনও উদ্ধার হয়নি। খোয়া যাওয়া সেসব অস্ত্র উদ্ধার হলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোন ভুয়া মামলা হলে সেই বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আসামিদেরও অহেতুক হয়রানি করা যাবে না।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দলকে বাড়তি সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেলবাজি বন্ধ করতে হবে।
পার্শ্ববর্তী দেশের বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তাদের দেশের মিডিয়া গুজব ছড়াচ্ছে। আমাদের দেশের মিডিয়ার উচিত দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সত্য তথ্য উপস্থাপন করা।
সীমান্তে হত্যা নিয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা পিঠ দেখাবো না। তবে আমাদের দেশের নাগরিকদের পাচার কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আগামী বছর পেয়াঁজ আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে সয়াবিন তেল সিন্ডিকেট প্রতিরোধে প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
এ সময় এবারের বিজয় দিবস পালনে আনন্দ মেলা করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ৬ শতাধিক প্রভাবশালীদের তালিকা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের পোশাকের পরিবর্তনের বিষয়ে কাজ চলছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বিগত পনের বছরে আমাদের দেশ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সকল সুবিধা নিয়েছে। লুটপাট করে অনেকে এখন সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন তারা বাড়তি সুযোগ না পেয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার কঠোর বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সকল প্রকার সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে হবে। কোন রাজনৈতিক দলকে বাড়তি সুযোগ দেওয়া হবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল প্রকার চাঁদাবাজি বন্ধে আরও কঠোর হতে হবে।
মাদকের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে অন্যান্য সংস্থা সহযোগিতা করবে। যতদিন পর্যন্ত তাদেরকে হাতিয়ার না দেওয়া হয় ততদিন তারা পুলিশ বা অন্য কোন বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করবে।’
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের পর অনেক থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে। এগুলো উদ্ধার না হওয়ায় আইন-শৃংখলা রক্ষায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটতে পারে এমন আশংকা করে তিনি বলেন, ‘এজন্য আরো কঠোর হয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাতে হবে।
যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী ২০/২৫ বছর ধরে কারাভোগ করে এখন মুক্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারেও আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সজাগ থাকার আহবান জানার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।’
সাম্প্রতিক সময়ে মব জাস্টিস বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেকেই আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। তা বন্ধ করতে সকলের কাছে আহবান জানান তিনি। তবে পোষাক ছাড়া কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার না করারও নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।’
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে বিবাদে জড়ানো যাবে না। সকলকে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকারও আহবান জানান তিনি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় মিডিয়াগুলোর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য সংবাদ তুলে ধরতে হবে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার আহবান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘আলু, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম অনেকটাই বেড়েছে। গত দুই বছর আলুর দাম বাড়লেও কৃষকের থেকে বেশি লাভবান হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। তবে আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের আইজি মো. বাহারুল আলম বলেন, ‘সকলের আন্তরিক সহযোগিতা নিয়ে আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।’
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হকের সভাপতিত্বে এসময় স্বাগত বক্তৃতা করেন, বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার।
মতবিনিময় সভায় খুলনা নেভাল এরিয়া কামান্ডার রিয়ার এডমিরাল গোলাম সাদেক, বিজিবি মহাপরিচালক জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র্যাবের মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান, ১০৫ ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী,
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, ডিজিএফআই খুলনার কর্ণেল জিএস সৈয়দ আসাদুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার টিএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখসহ খুলনা বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সিভির ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।