Dhaka রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর সমগ্র জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ ডা. মিলন দিবস ২০২৪ উপলক্ষে ‘স্বৈরাচারের পতন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। রক্তে ভেসে গেছে বাংলাদেশের রাজপথ। দেশের মানুষ বারবার দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ?

তিনি বলেন, তিন মাসও হয়নি এখন রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ শুরু হয়েছে, একজন আরেক জনের রক্ত ঝরাচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কোন বাংলাদেশ? গত ৫ আগস্টের আগে এই বাংলাদেশকে চিনতাম। কেন এই ভয়াবহ বিভেদ-হিংসা? আজকে কেন এতো ভয়াবহ অস্থিরতা? সমস্যাটা কোথায়? আমাদের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামীদের আত্মত্যাগকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রুপ দিতে পারেনি। ৯০-এ স্বৈরাচার আন্দোলনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। আর ২০২৪ সালেও গণতন্ত্রের জন্য আবারও প্রাণ দিতে হলো। কোন জাতি আমরা?

তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। আজকে কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও এসব কথাবার্তা লিখছেন। খেয়াল করছেন এরা কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের খুব জনপ্রিয় মনে করেন, সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন। গোটা জাতিকে তারা বিভাজন করে, একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আপনারা আজকে চিন্তা করবেন, যারা বিভাজনের দিকে ঠেলছে তারা আসলে আমাদের শত্রু না মিত্র?

তিনি আরও বলেন, যতই আমরা বড় বড় কথা বলি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি না কেন যদি আমার নিজের ঘরেই বিভেদ থেকে যায়। আমি সেটা কখনোই ঠিক করতে পারবো না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাই মিলে আমরা একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে। এই রকম চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সফল হওয়া যাবে না। যতই বড় কথা বলি বা বক্তব্য দিই না কেন কাজ হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে? এটা কি চিন্তা করতে পারেন? গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। গত কয়েকদিন নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য লড়াই করেছি, আজকে সেই মিডিয়ার পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই না। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য মিডিয়াতে যে ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে তার নিন্দা জানাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কারও একক নয়। অসংখ্য তরুণ-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। কারো কাছে মাথানত করবেন না।

ডা. মিলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তার অবদান কখনও ম্লান হবে না। গণতন্ত্রের সকল শহীদকে শ্রদ্ধা জানাই। আসুন ডা. মিলন যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছেন সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি। যার জন্য জীবন দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে কাটিয়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমাদের ব্যর্থতা যে শহীদ ডা. মিলনের স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপদান করতে পারিনি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এতে আরও বক্তব্য রাখেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি একেএম আজিজুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গম আমদানির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কিছু মানুষ জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৩:৩০:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর সমগ্র জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ ডা. মিলন দিবস ২০২৪ উপলক্ষে ‘স্বৈরাচারের পতন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাষ্ট্র গঠনে চিকিৎসক সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। রক্তে ভেসে গেছে বাংলাদেশের রাজপথ। দেশের মানুষ বারবার দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দিয়েছে। তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ?

তিনি বলেন, তিন মাসও হয়নি এখন রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ শুরু হয়েছে, একজন আরেক জনের রক্ত ঝরাচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কোন বাংলাদেশ? গত ৫ আগস্টের আগে এই বাংলাদেশকে চিনতাম। কেন এই ভয়াবহ বিভেদ-হিংসা? আজকে কেন এতো ভয়াবহ অস্থিরতা? সমস্যাটা কোথায়? আমাদের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামীদের আত্মত্যাগকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রুপ দিতে পারেনি। ৯০-এ স্বৈরাচার আন্দোলনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। আর ২০২৪ সালেও গণতন্ত্রের জন্য আবারও প্রাণ দিতে হলো। কোন জাতি আমরা?

তিনি আরো বলেন, গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। আজকে কিছু মানুষ নিজেদেরকে বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন। আর গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, কিছু সংখ্যক মানুষ আছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পুড়িয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও এসব কথাবার্তা লিখছেন। খেয়াল করছেন এরা কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে?

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছু সংখ্যক মানুষ নিজেদের খুব জনপ্রিয় মনে করেন, সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন। গোটা জাতিকে তারা বিভাজন করে, একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আপনারা আজকে চিন্তা করবেন, যারা বিভাজনের দিকে ঠেলছে তারা আসলে আমাদের শত্রু না মিত্র?

তিনি আরও বলেন, যতই আমরা বড় বড় কথা বলি, বিশ্বকে এক করার চেষ্টা করি না কেন যদি আমার নিজের ঘরেই বিভেদ থেকে যায়। আমি সেটা কখনোই ঠিক করতে পারবো না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাই মিলে আমরা একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু হয়েছে। এই রকম চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সফল হওয়া যাবে না। যতই বড় কথা বলি বা বক্তব্য দিই না কেন কাজ হবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে? এটা কি চিন্তা করতে পারেন? গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন এবং আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন কথা বলতে হবে। গত কয়েকদিন নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য লড়াই করেছি, আজকে সেই মিডিয়ার পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই না। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য মিডিয়াতে যে ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে তার নিন্দা জানাই।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কারও একক নয়। অসংখ্য তরুণ-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। কারো কাছে মাথানত করবেন না।

ডা. মিলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তার অবদান কখনও ম্লান হবে না। গণতন্ত্রের সকল শহীদকে শ্রদ্ধা জানাই। আসুন ডা. মিলন যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছেন সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি। যার জন্য জীবন দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে কাটিয়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমাদের ব্যর্থতা যে শহীদ ডা. মিলনের স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপদান করতে পারিনি।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এতে আরও বক্তব্য রাখেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা.এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি একেএম আজিজুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।