Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জ্বালানী দূষণ যানজটে রোজ ক্ষতি ১৫৩ কোটি টাকা!

ফাইল ছবি

রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পাঁচটি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

খাতগুলো হলো-যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশদূষণ ও দূষণের ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যানজটে আটকা পড়ে সিগন্যাল থেকে বের হওয়ার পর দ্রুত গাড়ি চালানোয় জানমালের ক্ষতি এবং যানজটে সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাওয়া। এই পাঁচ খাত মিলিয়ে রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

রাজধানীর সড়কে গবেষণাটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)।

এই পাঁচ খাত মিলিয়ে রাজধানীর সড়কে বছরে আনুমানিক ক্ষতির একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বছরে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

গবেষণার এই ফলাফল দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন এআরআইয়ের পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান।

প্রতিটি খাতে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গবেষণাটি করা হয়েছে এক দিনের গড় হিসাব করে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের যানবাহনের দুই কোটি ৫০ লাখ ট্রিপের সংখ্যা মাথায় রাখা হয়েছে। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে প্রতিদিন ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা হিসাব করা হয়েছে।

রাস্তায় অস্বাভাবিক যানজট না হলে যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ হতো, এ সময় তার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি জ্বালানি খরচ হয়েছে। ফলে গ্যাস, ডিজেল, অকটেন ও পেট্রলের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় হিসাবে ক্ষতি হয়েছে প্রতিদিন গড়ে চার কোটি ১৫ লাখ টাকা। পরিবেশদূষণ এবং এই দূষণের ফলে বহু মানুষ নানাভাবে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েছে।

তাদের চিকিৎসার পেছনে ব্যয়সহ পরিবেশের ক্ষতি হিসাব করা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে আট কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া যানজটের সময় সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমেছে ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ। এতে করে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয়েছে আট লাখ ২২ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন : রাজধানীর যেখানে সেখানে পার্কিং: বাড়ছে যানজট দুর্ভোগ

আর জীবনের মূল্য কখনো টাকার অঙ্কে হিসাব করা যায় না। তার পরও দ্রুত গাড়ি চালানোর ফলে প্রতিদিন জানমালের ক্ষতি হিসাব করা হয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মোট এই পাঁচ খাতে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয়েছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে ক্ষতির পরিমাণ দেড় গুণ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক মনে হলেও সামনে কোনো সুখবর আছে বলে মনে করেন না ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, সড়কে যেভাবে ক্রমাগত সমস্যা বাড়ছে, তাতে করে ২০৩৫ সালে মানুষের হাঁটার গতি আর গাড়ি চলার গতি সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে এবারের গবেষণায় নতুন দুটি খাত যুক্ত করা হয়েছে। যানজটে আটকা পড়ে সিগন্যাল থেকে বের হওয়ার পর দ্রুত গাড়ি চালানোয় জানমালের ক্ষতি এবং যানজটে সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাওয়া।

করোনা মহামারির কারণে টানা কয়েক মাস রাজধানীর সড়কে গাড়ি চলেনি, তবুও ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি কেন জানতে চাইলে ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ঠিক তাই। করোনার কারণে তিন-চার মাস সড়কে গাড়ি চলেনি। আমাদের এই হিসাবের মধ্যে ওই কয়েক মাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি একটি গড় হিসাব। করোনা-পরবর্তী সময়ে সড়কে গাড়ির যে চাপ লক্ষ্য করা গেছে, সেখান থেকেই প্রতিদিনের একটা গড় হিসাব করে ৩৬৫ দিনের হিসাব দেখানো হয়েছে।

ক্ষতির এই পরিমাণ কিভাবে কমিয়ে আনা যায় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গণপরিবহনবান্ধব সড়ক ও পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আর্থিক এই ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবে না। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। মেট্রো রেলসহ অন্যান্য উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা সফল করতে প্রথমে সংযোগ ফুটপাত তৈরি করতে হবে।

যেন মানুষ হেঁটে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এ ছাড়া গণপরিবহনের আরো সুন্দর নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। বিআরটি, এমআরটিয়ের মতো বড় প্রকল্পগুলো যানজট কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে তার আগে মানুষের হাঁটার পথ তৈরি করতে হবে। না হয় বড় প্রকল্পগুলোর সুফল পাওয়া যাবে না। বিআরটি, এমআরটি থেকে ডোর টু ডোর সার্ভিস পাওয়া যাবে না। গণপরিবহনই নগরবাসীকে বাসার সবচেয়ে কাছের স্টেশনে পৌঁছে দেবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

জ্বালানী দূষণ যানজটে রোজ ক্ষতি ১৫৩ কোটি টাকা!

প্রকাশের সময় : ০৮:৫৭:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পাঁচটি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

খাতগুলো হলো-যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জ্বালানির ব্যবহার, পরিবেশদূষণ ও দূষণের ফলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যানজটে আটকা পড়ে সিগন্যাল থেকে বের হওয়ার পর দ্রুত গাড়ি চালানোয় জানমালের ক্ষতি এবং যানজটে সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাওয়া। এই পাঁচ খাত মিলিয়ে রাজধানীর সড়কে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

রাজধানীর সড়কে গবেষণাটি পরিচালনা করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)।

এই পাঁচ খাত মিলিয়ে রাজধানীর সড়কে বছরে আনুমানিক ক্ষতির একটা চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে বছরে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫ হাজার ৬৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

গবেষণার এই ফলাফল দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করার কথা রয়েছে। তবে তার আগেই সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন এআরআইয়ের পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান।

প্রতিটি খাতে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গবেষণাটি করা হয়েছে এক দিনের গড় হিসাব করে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের যানবাহনের দুই কোটি ৫০ লাখ ট্রিপের সংখ্যা মাথায় রাখা হয়েছে। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে প্রতিদিন ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা হিসাব করা হয়েছে।

রাস্তায় অস্বাভাবিক যানজট না হলে যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ হতো, এ সময় তার চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি জ্বালানি খরচ হয়েছে। ফলে গ্যাস, ডিজেল, অকটেন ও পেট্রলের পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় হিসাবে ক্ষতি হয়েছে প্রতিদিন গড়ে চার কোটি ১৫ লাখ টাকা। পরিবেশদূষণ এবং এই দূষণের ফলে বহু মানুষ নানাভাবে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েছে।

তাদের চিকিৎসার পেছনে ব্যয়সহ পরিবেশের ক্ষতি হিসাব করা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে আট কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া যানজটের সময় সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমেছে ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ। এতে করে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয়েছে আট লাখ ২২ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন : রাজধানীর যেখানে সেখানে পার্কিং: বাড়ছে যানজট দুর্ভোগ

আর জীবনের মূল্য কখনো টাকার অঙ্কে হিসাব করা যায় না। তার পরও দ্রুত গাড়ি চালানোর ফলে প্রতিদিন জানমালের ক্ষতি হিসাব করা হয়েছে এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা। মোট এই পাঁচ খাতে প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয়েছে ১৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৮ সালে এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা। দুই বছরের ব্যবধানে ক্ষতির পরিমাণ দেড় গুণ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক মনে হলেও সামনে কোনো সুখবর আছে বলে মনে করেন না ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, সড়কে যেভাবে ক্রমাগত সমস্যা বাড়ছে, তাতে করে ২০৩৫ সালে মানুষের হাঁটার গতি আর গাড়ি চলার গতি সমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে এবারের গবেষণায় নতুন দুটি খাত যুক্ত করা হয়েছে। যানজটে আটকা পড়ে সিগন্যাল থেকে বের হওয়ার পর দ্রুত গাড়ি চালানোয় জানমালের ক্ষতি এবং যানজটে সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপের ফলে রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যাওয়া।

করোনা মহামারির কারণে টানা কয়েক মাস রাজধানীর সড়কে গাড়ি চলেনি, তবুও ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি কেন জানতে চাইলে ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ঠিক তাই। করোনার কারণে তিন-চার মাস সড়কে গাড়ি চলেনি। আমাদের এই হিসাবের মধ্যে ওই কয়েক মাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি একটি গড় হিসাব। করোনা-পরবর্তী সময়ে সড়কে গাড়ির যে চাপ লক্ষ্য করা গেছে, সেখান থেকেই প্রতিদিনের একটা গড় হিসাব করে ৩৬৫ দিনের হিসাব দেখানো হয়েছে।

ক্ষতির এই পরিমাণ কিভাবে কমিয়ে আনা যায় প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গণপরিবহনবান্ধব সড়ক ও পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আর্থিক এই ক্ষতির পরিমাণ কমানো যাবে না। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। মেট্রো রেলসহ অন্যান্য উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা সফল করতে প্রথমে সংযোগ ফুটপাত তৈরি করতে হবে।

যেন মানুষ হেঁটে অনেক দূর পর্যন্ত যেতে পারে। এ ছাড়া গণপরিবহনের আরো সুন্দর নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। বিআরটি, এমআরটিয়ের মতো বড় প্রকল্পগুলো যানজট কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। তবে তার আগে মানুষের হাঁটার পথ তৈরি করতে হবে। না হয় বড় প্রকল্পগুলোর সুফল পাওয়া যাবে না। বিআরটি, এমআরটি থেকে ডোর টু ডোর সার্ভিস পাওয়া যাবে না। গণপরিবহনই নগরবাসীকে বাসার সবচেয়ে কাছের স্টেশনে পৌঁছে দেবে।