পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি :
নেতাকর্মীদের খোলা মাঠে রেখে শেখ হাসিনা ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজ মাঠে মাসব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাসমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হাসিনার ওপর এত ভরসা করত, কিন্তু তাদের খোলা মাঠে রেখে ভয়ে হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। এখানে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আছে, সেই শিক্ষা আমাদের নিতে হবে। এই একই কাজ যেন আমরা ভবিষ্যতে না করি। যারা ভালো, যারা ভালো কাজ করেছে, কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল না, কোনো ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ছিল না—তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের সঙ্গে যেন নতুন করে অন্যায় না হয়।
সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জেল খাটিয়েছে, গুম করেছে, খুন করেছে, নির্যাতন করেছে, বাড়িতে থাকতে দেয় নাই। বউ-বাচ্চাসহ বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, এই ফ্যাসিস্ট, খুনি হাসিনা প্রশাসনকে অপব্যবহার করে যে কাজগুলো করছে, এই কাজের ফল কী হতে পারে?
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ কীভাবে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যে মামলা দিয়েছে, গুম, খুন ও নির্যাতন করেছে। যেইসব নেতাকর্মীরা তার ওপর ভরসা করতো তাদের রেখে ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আছে। এ শিক্ষাটা আমাদের নিতে হবে। একই কাজ যেন আমরাও না করি। হাসিনার কোনো দোসর যদি বিগত সময়ে অন্যায়, অত্যাচার ও অপকর্ম করে থাকে তাদের আইনগতভাবে যে শাস্তি হওয়া দরকার সেটিই যেন হয়। একইভাবে কোনো নির্দোষ মানুষ যেন অন্যায়ের শিকার না হয়।
তিনি আরো বলেন, যখন কেউ দুই বছর, তিন বছর, পাঁচ বছর পর ক্ষমতায় আসবে, ১০-২০ বছর পরে ক্ষমতায় আসবে, তাঁরা যদি একই কাজ করে; তাহলে গ্রামের ভাষায় বলি, এক দলের সঙ্গে আরেক দলের কামড়াকামড়ির সারা জীবন চলতে থাকবে। সুস্থ পরিবেশ রাজনৈতিক চর্চা কোনো দিন এস্টাবলিশ হবে না।
অন্যায়-অত্যাচারকারীদের শাস্তির আওতায় আনা দর উল্লেখ করে সারজিস আলম আরও বলেন, আর কোনো দোসর যদি বিগত সময়ে অন্যায় করে, থাকে অত্যাচার করে থাকে, কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকে—তাদের আইনগতভাবে যে শাস্তি হওয়া উচিত, সেই শাস্তি যেন হয়। কিন্তু একইভাবে কোনো নির্দোষ মানুষ যেন কোনোভাবে অন্যায়ের শিকার না হয়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই হোটেলের পাশাপাশি চেয়ারে বসে, একই বাড়িতে একই টেবিলে পাশাপাশি বসে খাওয়াদাওয়া করি, আড্ডা দেই, রাতে এক বিছানায় ঘুমাই। এই ধর্মীয় সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয়। কেউ যেন এটাকে ব্যবহার করে আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি না করতে পারে।
সারজিস বলেন, উত্তরবঙ্গের মানুষ ভালো, মন মানসিকতা ভালো। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সামান্য কিছুতেই আমাদের মধ্যে প্রচুর মনোমালিন্য, প্রচুর বিভাজন। এই চিন্তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। মাদকের সঙ্গে যারাই যুক্ত থাকবে, তার পেছনে যেই থাকুন না কেন, সে যত বড়ই কিছুই হোক না কেন, যেই পদধারী হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক বলেন, আমি তখনি কারো সুনাম করব, সে যেই দলেরই হোক না কেন যদি তার কাজ ভালো হয়। কাউকে আমি সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করব, সে যে দলেরই হোক না কেন যদি তার কাজ খারাপ হয়। প্রত্যেকের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। কেউ একজন অন্যদল করে সে প্রতিপক্ষ ও শত্রু, এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সব শেষে বলেন, আমাদের এই মেলা চিত্ত বিনোদনের একটা জায়গা হোক। কিন্তু মেলার কোনো একটি উপকরণ যেন তরুণ সমাজকে বিপথে না নেয় এবং বিপথে নিতে প্ররোচিত না করে। এমন উপকরণ থাকা যাবে না।
এসময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সীসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও মেলা কমিটির সদস্যরা।