স্পোর্টস ডেস্ক :
পাকিস্তানের শুরুর চাপ দ্রুতই সামলে নিল বাংলাদেশ। এরপর প্রতিপক্ষের বক্সে বারবার হানা দিতে থাকলেন সাবিনা খাতুন, শামুন্নাহার জুনিয়র, ঋতুপর্ণা চাকমারা; কিন্তু ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতা পিছু ছাড়ল না। উল্টো রক্ষণের ভুলে পাল্টা আক্রমণ থেকে গোল হজম করে বসল বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে পাকিস্তানের রক্ষণের প্রতিরোধ ভেঙে গোলের দেখা পেল দল; স্বস্তির ড্রয়ে সেমি-ফাইনালে খেলার আশাও বাঁচিয়ে রাখল পিটার বাটলারের দল।
রোববার (২০ অক্টোবর) নেপালের কাঠমাণ্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানের সাথে ১-১ ড্র করেছে বাংলাদেশ। গত আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে পাকিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সাবিনারা। এবার তাদের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াতে পারল তারা।
৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পয়েন্ট ১ করে। আগামী বুধবার ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ ড্র করলে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হবে মেয়েদের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যেত মুকুট ধরে রাখার অভিযানে নামা বাংলাদেশের। এই সমীকরণ মেয়েরা মেলাতে পারেনি ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায়।
শুরুর দিকে বাংলাদেশের রক্ষণে দুইবার হানা দেয় পাকিস্তান। কিন্তু ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় সুবিধা করতে পারেননি নাহিদা খান। অষ্টম মিনিট প্রথম আক্রমণ শাণায় বাংলাদেশ। ঋতুপর্নার ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র প্রথম হেড করলে বল উঁচুতে উঠে যায়, এরপর শামসুন্নাহার লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন।
ওই সময়ই পাকিস্তানের অধিনায়ক মারিয়া জামিলা খান ও গোলরক্ষক নিশা আশারাফের বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে সংঘর্ষ হয়। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকার পর চিকিৎসা নিয়ে দুজনেই খেলা চালিয়ে যান।
২০তম মিনিটে বক্সের একটু ওপর থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের শট উড়ে যায়। একটু পর দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে প্রয়োজনীয় আলতো টোকা দিতে পারেননি তহুরা।
দুই মিনিট পর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল নিয়ে ছুটতে থাকা ঋতুপর্ণা ঠিক বক্সের ওপরে ফাউলের শিকার হন। সাবিনার ফ্রি কিক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়।
পাকিস্তান ২৫তম মিনিটে বাংলাদেশের ত্রিসীমায় ফের হানা দেয়, আনমল হিরার দুরপাল্লার শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গত সাফের সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমা। একটু পর সাবিনার সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে শামসুন্নাহার জুনিয়রের শট জমে যায় নিশার গ্লাভসে।
৩২তম মিনিটে নিজেদের ভুলে গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। রামিন ফারিদের লং পাসের পিছে ছুটছিলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার শিউলি আজিম ও পাকিস্তানের জাহমিনা সামিন মালিক। বলের নাগাল পেলেও শিউলি গোলকিপারকে বাড়াতে গিয়ে দুর্বল টোকায় তুলে দেন জাহমিনার পায়ে। সৌদি আরবের লিগে খেলা এই ফরোয়ার্ড নিখুঁত শটে অনায়াসে পরাস্ত করেন রূপনাকে।
৪৩তম মিনিটে বাংলাদেশের হতাশা আরও বাড়ে। ঋতুপর্ণার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ক্রসবারের লেগে প্রতিহত হয়। যেখানে গত আসরে তৃতীয় মিনিটে পাকিস্তানের জালে গোল পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেখানে এবার পিছিয়ে থেকে বিরতিতে গেল মেয়েরা।
দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুতেই ঋতুপর্ণার ক্রসে মাথা ছোঁয়ানোর কেউ ছিল না দূরের পোস্টে। ৫৯তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে আবারও দারুণ ক্রস বাড়ান ঋতুপর্না, কিন্তু তহুরা পাননি বলের নাগাল।
৭০তম মিনিটে অধিনায়ক সাবিনাকে তুলে কৃষ্ণা রানীকে নামান বাটলার। এরপরই স্বপ্না রানী শট পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। ৭২তম মিনিটে মনিকা চাকমার শট গোলরক্ষেকের গ্লাভস গলে বেরিয়ে যাওয়ার পর ক্লিয়ার করেন জামিলা খান।
রক্ষণের দৃঢ়তা ধরে রেখে পাল্টা আক্রমণ নির্ভর খেলার ছকে থাকা পাকিস্তান সময় গড়ানোর সাথে সাথে আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে। ৭৭তম মিনিটে আবারও রক্ষণের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল বাংলাদেশ। সতীর্থের রক্ষণচেরা পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন আমিনা হানিফ, তবে তিনি শট নেওয়ার আগেই দ্রুত পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে গ্লাভসে নেন রূপনা।
এরপর তহুরাকে তুলে সাগরিকাকে নামান বাংলাদেশ কোচ। ৮২তম মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র শট নেন গোলরক্ষক বরাবর। এরপর মনিকা চাকমার বদলি নামেন মারিয়া মান্দা। ৮৪তম মিনিটে ঋতুপর্নার শট পাকিস্তান গোলরক্ষকের গ্লাভস গলে বেরিয়ে কর্নার হয়ে যায়।
ছয় মিনিটের যোগ করা সময়ে অবশেষে গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। বাঁ দিক থেকে ঋতুপর্নার ক্রসে গোলমুখে থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। সমতার স্বস্তির শ্বাস নেওয়ার সুযোগ মেলে বাংলাদেশের। টিকে থাকে বাটলারের দলের সেমি-ফাইনালে খেলার আশাও।