Dhaka সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রবীণ রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হলে সকালে মতিয়া চৌধুরীকে হাসপাতালে আনা হয়। এরপরই আমরা ইসিজি করে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করি। শেষ পর্যন্ত আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সফল হতে পারিনি। দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পরিবারের এক সদস্য বলেন, মতিয়া চৌধুরী দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাঝে তাকে বাসায় আনা হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় আবার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানাচ্ছেন।

‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের টিকিটে গত জানুয়ারির নির্বাচনে শেরপুর-২ আসনে ষষ্ঠবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্বাদশ সংসদের উপনেতা নির্বাচিত হন। এর আগের সংসদে উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথম বার সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পান।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের। এরপর থেকে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ প্রায় সব নেতাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়েও চলে গেছেন। মতিয়া চৌধুরীও আত্মগোপনে ছিলেন। সেই অবস্থাতেই অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী রাজনীতি দিয়ে। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সদস্য ছিলেন, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।

তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন মতিয়া। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি আওয়ামী লীগের ১নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে পুনরায় সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পান।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

প্রবীণ রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন

প্রকাশের সময় : ০২:৪৬:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :

‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না লিল্লাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হলে সকালে মতিয়া চৌধুরীকে হাসপাতালে আনা হয়। এরপরই আমরা ইসিজি করে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করি। শেষ পর্যন্ত আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সফল হতে পারিনি। দুপুর ১২টা ৫৭ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

পরিবারের এক সদস্য বলেন, মতিয়া চৌধুরী দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাঝে তাকে বাসায় আনা হয়েছিল। কিন্তু শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় আবার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মতিয়া চৌধুরীর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানাচ্ছেন।

‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের টিকিটে গত জানুয়ারির নির্বাচনে শেরপুর-২ আসনে ষষ্ঠবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি দ্বাদশ সংসদের উপনেতা নির্বাচিত হন। এর আগের সংসদে উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর প্রথম বার সংসদের উপনেতার দায়িত্ব পান।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে টানা চার মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের। এরপর থেকে দলটির শীর্ষ নেতৃত্বসহ প্রায় সব নেতাই আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়েও চলে গেছেন। মতিয়া চৌধুরীও আত্মগোপনে ছিলেন। সেই অবস্থাতেই অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় বামপন্থী রাজনীতি দিয়ে। তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সদস্য ছিলেন, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।

তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ব্যক্তিজীবনে ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও দৈনিক সংবাদের সাবেক সম্পাদক বজলুর রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন মতিয়া। ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘অগ্নিকন্যা’ নামে পরিচিত মতিয়া পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন এবং এর কার্যকরী কমিটির সদস্য হন। ১৯৭০ ও ১৯৭১ এর মাঝামাঝি সময়ে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রচারণা, তদবির এবং আহতদের শুশ্রুষায় সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।

১৯৭১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়কালে তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হন।

১৯৯৬ ও ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি আওয়ামী লীগের ১নং প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১২ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরে তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে পুনরায় সংসদ উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পান।