নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
দুর্গাপূজা ঘিরে ঢাকা মহানগরীতে কোনও হামলার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের জানামতে এমন কোনও আশঙ্কা নেই। এখন পর্যন্ত কোনও ধরনের ঝুঁকি আমরা দেখছি না। আশা করি সবাই সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করবেন। তবুও আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত কাজ করবো।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এ বছর ২৫৩টি স্থানে মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩১টি ও উত্তর সিটিতে ১২২টি স্থানে পূজা উদযাপন হবে। ঢাকাসহ সারাদেশে এ পূজা যেন শান্তিপূর্ণ ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করতে পারে, সেজন্য আমরা বিভিন্ন সমন্বয় সভা করেছি।
মাইনুল হাসান বলেন, প্রতিটি পূজা মণ্ডপে ফিক্সড পুলিশ মোতায়েন থাকবে, থানা পুলিশ কর্তৃক অধিক টহল ও চেকপোস্ট স্থাপন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে চেকিং ব্যবস্থা থাকবে। সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ র্যাবের সদস্যরা টহল ও অন্যান্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজায় মণ্ডপ এলাকা, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় সব ধরনের মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একইসঙ্গে সব ধরনের পটকা ও আতশবাজির ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
মো. মাইনুল হাসান বলেন, বিসর্জনের সময় উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে না। যারা সাঁতার জানেন না তাদের বিসর্জনের সময় পানিতে না নামার অনুরোধ করছি।
বিসর্জনে ঢাকা মহানগরীতে ১৫টি স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রায় ডিএমপির বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিসর্জনের জন্য পূজা কমিটি ও ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানান মাইনুল হাসান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রতিবছর পূজা বিসর্জনের সময় নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে এবার নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পূজা শেষে বিসর্জনের জন্য ঢাকা মহানগরীতে ১৫টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এই তালিকায় পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, ওয়াইজঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী ও ডেমরাসহ আরও অন্যান্য স্থান রয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বিসর্জনের স্থানগুলোতে নৌ পুলিশের টহলের পাশাপাশি ফায়ার ব্রিগেডকে অনুরোধ করেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। পূজামণ্ডপগুলোতে তল্লাশির সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে ব্যক্তিদের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান তিনি।
পূজা বিসর্জনের দিন সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বিসর্জনের সকল কার্যক্রম শেষ করা, পূজা উদযাপন, বিসর্জন এবং বিসর্জনের শোভাযাত্রার সময় সকল ধরনের আতশবাজি এবং পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকা ছাড়াও বিসর্জনের সময় মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
পুলিশ সদস্যদের মনোবল ফিরেছে কিনা জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, ৬ আগস্টে পুলিশের অবস্থা এবং আজের পুলিশের অবস্থা আপনারা (সাংবাদিক) বিচার করুন। পুলিশ কী অবস্থায় আছে। এক সময় পুলিশ কর্মবিরতি দিয়েছিল, তারাও কাজ শুরু করেছে। পুলিশ অনেক এক্টিভ রোলে ফিরে এসেছে। পূজায় আমরা দৃঢ় মনোবল নিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো। এতে কোনও ব্যত্যয় ঘটবে না।
সরকার পতনের আন্দোলন ও গত ৫ আগস্টে ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ সদস্য হত্যার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় ঘটনা ঘটেছে, সেসব জায়গায় পুলিশ কেস হয়েছে।’