বিনোদন ডেস্ক :
জেমস! নামটি শুনলেই মনে এখনও বেজে ওঠে ‘মীরাবাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’র মত কিছু গান। বলছি, যুগ যুগ ধরে সকলের কাছে ‘গুরু’ খ্যাতি পেয়ে আসা এক রকস্টারের কথা। নব্বই দশকের ক্যাসেটের যুগে আলোড়ন তোলা ‘দশ মাস দশ দিন’, ‘বাবা’, ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘পদ্ম পাতার জল’, ‘সুন্দরীতমা’, ‘এক নদী যমুনা’, ‘হতেও পারে’- এ সকল গানের রূপকার জেমস। বলা বাহুল্য, এমন অসংখ্য গান এখনও পুরোনো হয়নি শ্রোতাদের কাছে।
সংগীত জীবনে একাধিক নাম, তকমার অধিকারী হয়েছেন জেমস। ভক্তদের কাছে তার একটাই পরিচয়, ‘গুরু’। উপমহাদেশের বিখ্যাত এই রকস্টারকে নগরবাউল হিসেবেও চেনেন অনেকে। তবে জেমস এর মূল নাম ফারুক মাহফুজ আনাম।
বুধবার (২ অক্টোবর) নন্দিত এই ব্যান্ড সংগীতশিল্পী জেমসের জন্মদিন। ৬১ বছরে পা দিলেন তিনি।
মঞ্চ মাতাতে এখনও সেই গুরু হয়েই ভক্তদের কাছে ধরা দেন জেমস। দুই হাত উঁচিয়ে ভক্তদের সম্মান জানিয়ে এখনও তাকে বলতে শোনা সেই চিরচেনা কথাটি- ‘আমি তোমাদেরই লোক’।
তবে এই ‘গুরু’কে কনসার্ট ছাড়া বাইরে কোথাও দেখা যায় না। ফেসবুকে থাকলেও খুব একটা নিয়মিত নন তিনি। জন্মদিন নিয়ে তার কী প্ল্যান, সে বিষয়েও জানা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে তার অনুরাগীরা যেন থেমে নেই। সামাজিক মাধ্যমে জেমস এর গান, ছবি দিয়ে প্রিয় শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ভক্তরা।
বাংলা ব্যান্ডসংগীতে মাদকতা ছড়ানো নাম জেমস। ফারুক মাহফুজ আনাম জেমসকে ভক্তরা ‘গুরু’ বলে ডাকেন। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে অবিশ্রান্ত গান শুনিয়ে যাচ্ছেন এই রকস্টার। নানান কারণে কনসার্ট আর আগের মতো হচ্ছে না দেশে। ফলে জেমসের কনসার্টও খানিকটা কমে গেছে। নেই অ্যালবাম, ইউটিউবেও নেই নতুন গান। তবে সম্প্রতি কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। এখন তিনি গাইতে যাচ্ছেন দেশের বাইরে।
অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিদের গান শুনিয়েছেন জেমস। এখনো ঠিক আগের মতোই মঞ্চে উঠে কাঁপন ধরিয়ে যাচ্ছেন বাঙালির হৃদয়ে। গিটারে ঝংকার তুলে জেমস যখন ‘মীরাবাঈ’, ‘বিজলি’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘পাগলা হাওয়ার তোড়ে’, ‘লিখতে পারি না কোন গান’ কণ্ঠে তোলেন, তখন তার কনসার্ট উত্তাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। জেমস এবং শ্রোতাদের কণ্ঠ এক মোহনায় মিলে যেন সমুদ্রের গর্জন তোলে। দীর্ঘদিন নতুন গান প্রকাশ করছেন না জেমস। তার বহুল শ্রুত পুরোনো গানগুলোই ভক্তদের উন্মাদনা দিয়ে যাচ্ছে আজও।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বসুন্ধরা ডিজিটালের ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ‘আই লাভ ইউ’ ও ‘সবই ভুল’ শিরোনামে দুটি গান প্রকাশিত হয় জেমসের। তবে সেই গানে শ্রোতারা আগের জেমসকে পায়নি।
নতুন গান তেমন সাড়া না ফেলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংগীতবোদ্ধারা। কেউ বলছেন, জেমসের কণ্ঠে আগের মতো গান তুলে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে বলছেন, জেমস যে মানের শিল্পী, সেই মানের কথা ও সুর তৈরি করে দিলে আবারও নতুন করে জ্বলে উঠবেন তিনি।
১৯৬৪ সালে ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। কিন্তু তার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে চট্টগ্রামের সৈকতের বালুচরে কেটেছে তার দুরন্ত শৈশব। জেমসের বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরিবারের কেউ চাইতো না গানের অঙ্গনে তিনি ক্যারিয়ার গড়ুন। নিজের সিদ্ধান্তেই তিনি সংগীতচর্চা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি গানের জন্য ঘর ছাড়েন।
১৯৮০ সালে জেমস প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। সাত বছর পর এই ব্যান্ডের হয়ে প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ প্রকাশ করেন। এর কিছু গান দারুণ সাড়া ফেলে। পরের বছর ‘অনন্যা’ নামের একটি একক অ্যালবাম নিয়ে আসেন তিনি, যা তাকে গানের ভুবনে স্থায়ী আসন করে দেয়।
১৯৯০ সালে ‘জেল থেকে বলছি’, ১৯৯৬ সালে ‘নগর বাউল’, ১৯৯৮ সালে ‘লেইস ফিতা লেইস’, ১৯৯৯ সালে ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো প্রকাশিত হয়। তারপর ‘ফিলিংস’ ভেঙে জেমস গড়ে তোলেন নতুন ব্যান্ড ‘নগর বাউল’। এই ব্যান্ড থেকে প্রকাশিত ‘দুষ্টু ছেলের দল’ এবং ‘বিজলি’ শিরোনামের অ্যালবাম দুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
অ্যালবামে গান গেয়ে যেমন তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, তেমনি বাংলা সিনেমার গানেও সবার নজর কেড়েছেন জেমস। ২০০০ সালে ‘কষ্ট’ সিনেমা দিয়ে তিনি সিনেমার গানে নাম লেখান। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মনের সাথে যুদ্ধ’ সিনেমার ‘আসবার কালে আসলাম একা’ গানটি আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করে। সিনেমার গানের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন।
২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় প্লেব্যাক করেন জেমস। সেই সিনেমায় তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শুধু তাই নয়, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। পরে ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’ সিনেমায় ‘রিশতে’ এবং ‘আলবিদা’ গানগুলো গেয়েও আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১৭ সালে ‘সত্ত্বা’ সিনেমায় গেয়েছিলেন ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’। এটিও জনপ্রিয়তা পায়।
আজকের দিনটি জেমস কীভাবে কাটাবেন? জানতে চাওয়া হয় তার ব্যবস্থাপক ও দীর্ঘদিনের সহচর রবীন ঠাকুরের কাছে। জাগো নিউজকে তিনি জানান, কয়েকদিন আগে তিনি (জেমস) লন্ডন থেকে কনসার্ট শেষ করে দেশে ফিরেছেন। শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। বিদেশ সফর শেষে বিশ্রাম নিচ্ছেন। এ জন্মদিনে তিনি বাসায় সময় কাটাবেন। কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
জেমসের গাওয়া উল্লেখযোগ্য গান হলো— ‘বাংলাদেশ’, ‘জেল থেকে আমি বলছি, মা’, ‘দুখিনী দুঃখ করো না’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘বাবা কতো দিন’, ‘বিজলী’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘মিরাবাঈ’, ‘পাগলা হাওয়া’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া’ প্রভৃতি।
নগর বাউল থেকে প্রকাশিত অ্যালবামগুলো হলো— ‘স্টেশন রোড’ (১৯৮৭), ‘জেল থেকে বলছি’ (১৯৯৩), ‘নগর বাউল’ (১৯৯৬), ‘লেইস ফিতা লেইস’ (১৯৯৮), ‘দুষ্ট ছেলের দল’ (২০০১)। জেমসের একক অ্যালবামগুলো হলো— ‘অনন্যা’ (১৯৮৯), ‘পালাবে কোথায়’ (১৯৯৫), ‘দুঃখিনি দুঃখ করোনা’ (১৯৯৭), ‘ঠিক আছে বন্ধু’ (১৯৯৯), ‘আমি তোমাদেরই লোক’ (২০০৩), ‘জনতা এক্সপ্রেস’ (২০০৫), ‘তুফান’ (২০০৭), ‘কাল যমুনা’ (২০০৮)।