রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, যারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিচ্ছে, তারা যদি তার কথা শুনে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে আখেরে ভালো হবে না।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজশাহীর ভুবন মোহন পার্কে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আয়োজনে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অন্য কোনো দেশ থেকে প্রেসক্রিপশন দেওয়া যাবে না। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছেন ভালো কথা, তবে আশ্রয় দিয়ে তার কথামতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল কিছু করতে চাইলে আখেরে ফলাফল ভালো হবে না। বাংলাদেশ সিকিম বা ভুটান নয়। অন্য কোনো দেশের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না। তাই কেউ বাইরে থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীল কিছু করতে চাইলে আখেরে তার ফলাফল ভালো হবে না। কোনো তাবেদার দিল্লির গোলামকে বাংলাদেশের জনগণের ওপর আর রাজত্ব করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার আমলে কিসের উন্নয়ন হয়েছে? তার আমলে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার লোন করা হয়েছে। আর ১৭ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এটা কিসের উন্নয়ন! তিনি তার লোকজনদের বিদেশে কালো টাকা পাচার করার সুযোগ দিয়েছেন; লুট করার সুযোগ দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনাকে টিকেয়ে রাখতে যেসব আমলা, ডিসি ও সচিবরা চেষ্টা করেছিলেন এরা তো নিশ্চয়ই আছেন। তারা কাজও করছেন। অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টরা সংস্কারের কথাও বলছেন। তবে এই সমস্ত প্রেতাত্মারা যদি থেকে যায় তাহলে আপনারা যে সংস্কারের কথা বলছেন, সেটি প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়ন হবে না। তারা কেউ কেউ এই সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য ভেতর থেকে চেষ্টা করতে পারে। আর আপনারা আওয়ামী সরকারের যেসব অস্ত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন সেগুলো কিন্তু উদ্ধার করতে পারেননি। অবৈধ অস্ত্র এখনও যুবলীগ-ছাত্রলীগের হাতে আছে। সেই অস্ত্র শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। এগুলো উদ্ধার করতে হবে। তা না হলে তারা ফের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
রিজভী আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারে ফ্যাসিবাদের দোসর রেখে সংস্কার সফল হবে না, এই বিষয়টি ড. ইউনূসকে স্মরণ রাখতে হবে। এই সরকার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করলেও অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি। এগুলো এখনও যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কাছে। এই অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। না হলে আবার অস্থিতিশীলতা তৈরি করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, নেতাকর্মীদের পাত্তা না দিয়ে শেখ হাসিনা ও তার বোন দুইজন পালিয়ে গেছেন ভারতে। শেখ হাসিনা হাজার হাজার টাকা উন্নয়নের নামে ঋণ নিয়েছেন। ঘনিষ্ঠজনদের সেই টাকা থেকে কালো টাকা আয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন বিদেশে রেখে আসার জন্য। বিপদে পড়লে যেন তিনি নিতে পারেন। যারা তার পক্ষে ছিল তাদের অবাধে লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছেন।
রাজশাহী নিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ভয়ংকর দোজখ থেকে পরিত্রাণ পেয়েছি। আগে রাজশাহীতে এসে প্রাণ নিয়ে ফিরে যেতে পারব কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকত। বিএনপির সাংগঠনিক সংগঠনের বাইরে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে বিএনপির নির্যাতিত, নিহত পরিবারকে তারেক রহমান ১৫ বছর ধরে দেখে আসছেন।
প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করলেও তা উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন, কেন উদ্ধার হবে না সেটি জানতে চাই। অস্ত্র উদ্ধার না হলে দেশ অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় হবে। শেখ হাসিনা কি ভারতে থেকে উপলব্ধি করছেন জুলুম করে, নির্যাতন করে, জনগণের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না?
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মামুন-অর-রশীদের সঞ্চালনায় সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদাসহ দলটির কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী জেলা, মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎ গ্রহণ শেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজশাহীর নিহত তিনজনের পরিবারের হাতে দলটির পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।
রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি 























