নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি :
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মামুনুল হক বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালেও তিনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পালায় না। কিন্তু ৫ আগস্ট দুপুরে ঠিকই তিনি দেশের মাটি ছেড়ে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছেড়ে পালিয়েছেন।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নেত্রকোণা শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সংঘটিত গণহত্যার বিচার ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে গণ সমাবেশ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ৫০ বছরের রাজনীতির অভিপ্রায়ই ছিল প্রতিশোধের। তাই তিনি নানাভাবে প্রতিশোধ নিয়েছেন। এ দেশের জনগণের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার দল আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকেও তিনি প্রতিশোধ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের রাজনীতি করেছিল, তার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল, প্রতিশোধের রাজনীতি। সে প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের কাছ থেকে। এই দেশটাকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করতে যা যা করা লাগে তিনি সব করেছেন। শেখ হাসিনা শুধু এই দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তিনি তার দল আওয়ামী লীগ থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে।
মামুনুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিন পর বিজয়কে ছিনতাই করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট এর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল সে স্বাধীনতাকেও পরাজিত শক্তির দোসররা ইসলামবিদ্বেষী করার চেষ্টা করছে। শেখ হাসিনা দেশে প্রতিশোধের রাজনীতি করেছিলেন। সে প্রতিশোধ নিয়েছেন মানুষের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, স্বৈরশাসক হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ গ্রেফতার হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। কিন্তু তিনি দলের নেতাকর্মীদের ছেড়ে পালিয়ে যাননি। খালেদা জিয়া একাধিকবার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু তিনিও দেশ ছেড়ে পালাননি। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও তিনি বছরের পর বছর অসুস্থ অবস্থায় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। শেখ হাসিনাকে নিজের তল্পিতল্পাসহ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এ পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ঐতিহ্যবাহী দলটি সারাদেশের মানুষের সামনে কলঙ্কিত করে তুলেছে।
মামুনুল হক বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর আওয়ামী লীগ যে নির্যাতন চালিয়েছে তার নজির ইতিহাসে পাওয়া কঠিন। আওয়ামী লীগ যেটা করত, রাতের আঁধারে কালনাগিনী হয়ে সংখ্যালঘুদের ছোবল মারতো। আর দিনের আলোতে তারাই আবার ওঝা হয়ে ঝাড়তে আসতো। এভাবে নাটক সাজিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন চালিয়ে, তাদের বাড়িঘর দখল করে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে। আবার তারা মায়াকান্না করে সংখ্যালঘুদের সহানুভূতি অর্জন করে তা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। এখন বাংলাদেশে শেখ হাসিনাও নেই, আওয়ামী লীগের রাজনীতিও নেই, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও নেই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে মামুনুল হক বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমরা আপনাদের সহযোগিতা করছি, এখনো করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো এ ধরনের ইচ্ছা আমাদের রয়েছে। তবে সরকারকে আমাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের মানুষের প্রশ্নে, দেশের মানুষের স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে, ইসলামের প্রশ্নে কারো চেহারা দিকে তাকিয়ে কথা বলার ফুরসত আমাদের নাই।
দেশের আইনে বেশ কিছু বিষয়কে অন্তর্ভুক্তি করার পাঁয়তারা চলছে। তার মধ্যে একটা হল ট্রান্সজেন্ডার। সমকামিতাসহ পশ্চিমা অসভ্যতা ট্রান্সজেন্ডারের নামে আমার বাংলাদেশে যদি আমদানি করার পাঁয়তারা করা হয়, বুকের রক্ত দিয়ে আমরা প্রতিহত করব ইনশাল্লাহ। আরেকটি হচ্ছে, বৈবাহিক ধর্ষণের নামে বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বামী-স্ত্রীদের সম্পর্কটাকে একটা বিতৃষ্ণ সম্পর্কে এবং ঘরে ঘরে অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দেওয়ার পঁয়তারা চলছে। এই বিষয়গুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে, আল্লাহ প্রদত্ত স্বামীর অধিকারকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঘরে ঘরে দাম্পত্যের আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। পশ্চিমা বিশ্বের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে। এখন তারা চায় মুসলিম বিশ্বের পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে।
ভারতে নবীকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করে মামুনুল হক বলেন, প্রয়োজনে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করুন। ওরা আপনার নবীকে গালি দেবে, আর আপনারা তাদের ইলিশ মাছ পাঠাবেন, এ দেশের মানুষ সেটাকে ভালো চোখে দেখে না।
যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়তে চাই। বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই, তাহলে আল্লাহর জমিনে মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে সেটা সম্ভব হবে না। পূর্ণাঙ্গ ইনসাফভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাইলে এই জমিনে আল্লাহ প্রদত্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্তু খেলাফতের রাজনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
খেলাফত মজলিস নেত্রকোনার সভাপতি শাইখুল হাদিস আল্লামা জিয়া উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমাদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসনাত জালালী, সহ-বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।