স্পোর্টস ডেস্ক :
গত বছর ভারতের মাটিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে নিজের অবসর পরিকল্পনা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন সাকিব আল হাসান। এবার চলমান ভারত সফরের দ্বিতীয় টেস্টের আগে একেবারে অবসরের ঘোষণাই দিয়ে দিলেন তিনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আর দেখা যাবে না তাকে, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন অক্টোবরেই ঘরের মাটিতে।
চলতি বছর অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই দেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। আর অক্টোবরে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়েই সাদা পোশাকের ক্রিকেটকেও বিদায় জানাবেন তিনি।
একই সঙ্গে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়েই ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বলে জানিয়েছেন সাকিব আল হাসান। ভারতের বিপক্ষে চলমান সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার আগে এসব জানিয়েছেন সাকিব।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভারতের কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন টাইগার অলরাউন্ডার। ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামার একদিন আগে এমন ঘোষণা দিলেন ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা ক্রিকেটার।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বিষয়ে সাকিব বলেন, আমি আসলে জাতীয় দলের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছি। সেটা গত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সাথে।
সাকিবের ভাষায়, যদি আমার ফিটনেস লেভেল ঠিক থাকে এবং খেলার মতো অবস্থায় থাকি আর বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে আমি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার ব্যাপারটা পুন:বিবেচনা করে দেখবো।
সাদা পোশাকেও ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন সাকিব। সুযোগ পেলে দেশের মাটিতেই লাল বলের ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন সিরিজকেই নিজের বিদায়ের মঞ্চ হিসেবে পছন্দ সাকিবের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো এভেলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।
এভাবেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর ভাবে আয়োজন করা যায়।’-যোগ করেন সাকিব।
এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়েও শঙ্কায় সাকিব। যে কারণে দেশে ফেরার আগে ভাবতে হচ্ছে তাকে। এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘এভাবেই ফারুক (বিসিবি সভাপতি) ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দর ভাবে আয়োজন করা যায়।’
‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোন সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাঁরা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব’-বলেছেন সাকিব।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও ঘরোয়া ও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবেন সাকিব। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) কিংবা বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতেও দেখা যাবে দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকাকে।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই ছিল ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সাকিব আল হাসানের শেষ ম্যাচ। যেখানে ব্যাট হাতে গোল্ডেন ডাক খেয়েছিলেন তিনি। আর বল হাতে ১৯ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
২০০৬ সালের ৬ অগাস্ট ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন সাকিব। ২০০৬ সালে খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছিল সাকিবের। প্রায় ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ১২৯ ম্যাচ খেলেছেন এই সংস্করণে। বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান (২৫৫১) ও উইকেটের (১৪৯) মালিক তিনি। গত জুনে সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচটি হয়ে থাকছে তার শেষ টি-টোয়েন্টি।
২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৮ মে টেস্ট অভিষেক বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। এখন পর্যন্ত ৭০ টেস্ট খেলে ৩৮.৩৩ গড়ে ৪৬০০। সেঞ্চুরি আছে ৫টি, অর্ধশতক ৩১টি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করা সাকিব বল হাতে নিয়েছেন ২৪২ উইকেট। তিনিই অন্য দুই সংস্করণের মতন টেস্টেও দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।