Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাহিদ-আসিফদের গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কার্যক্রম স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রতিষ্ঠার এক বছর না পেরোতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে ছাত্রসংগঠনটির ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এ কথা জানানো হয়।

ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো, সেই আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা। এ সংগঠনের দুই নেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আন্দোলনের কারণে প্রায় আড়াই মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর আগে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ দাবিতে গত কয়েক দিনে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও করেছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের গণমাধ্যমে যে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন, তার ৭ নম্বর দাবিটি ছিল—সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা। ছাত্রশক্তির নেতা কাদেরের ঘোষিত ৯ দফার ভিত্তিতে ৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন চলে। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদের বিলোপের এক দফা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ও ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব নাহিদ ইসলাম।

সরকার পতনের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হন। প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হলেও পরে ক্যাম্পাসে একাধিক মানববন্ধন-বিক্ষোভও করেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের ওই অংশ বলছে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ফিরে যাবেন না। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানাতে থাকেন কিছু শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির সমন্বয়কদের প্রায় সবাই ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ছাত্রশক্তির ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে লেখা হয়, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’ তবে কী কারণে এটি করা হলো, তা স্পষ্ট করা হয়নি। গত বছরের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ও ছাত্রশক্তির পদধারী নেতা আজ শনিবার বিকেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত চলমান বিতর্ক এড়াতে চেয়েছেন। আন্দোলনের সময় যেহেতু তাঁরা দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের একটি দাবি রেখেছিলেন, সেই জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁরা পরিষ্কার থাকতে চান।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য স্থগিত হওয়া কমিটির সদস্যসচিব আবু বাকের মজুমদারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মোটামুটি বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রশক্তির কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করার কথা ভাবছিলাম। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ৯ বা ১০ আগস্ট আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। অবশেষে শুক্রবার ছাত্রশক্তির কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। এর পেছনে আসলে বিশেষ কোনো কারণ নেই।’

ছাত্রশক্তির রাজনৈতিক যাত্রা এখানেই শেষ কি না, জানতে চাইলে বাকের মজুমদার বলেন, বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। আমাদের চাওয়া, ছাত্র সংসদভিত্তিক গঠনমূলক রাজনীতি।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নাহিদ-আসিফদের গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কার্যক্রম স্থগিত

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৯:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রতিষ্ঠার এক বছর না পেরোতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে ছাত্রসংগঠনটির ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে এ কথা জানানো হয়।

ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলো, সেই আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির নেতারা। এ সংগঠনের দুই নেতা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আন্দোলনের কারণে প্রায় আড়াই মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এর আগে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ দাবিতে গত কয়েক দিনে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও করেছেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের গণমাধ্যমে যে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করেছিলেন, তার ৭ নম্বর দাবিটি ছিল—সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা। ছাত্রশক্তির নেতা কাদেরের ঘোষিত ৯ দফার ভিত্তিতে ৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন চলে। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও ফ্যাসিবাদের বিলোপের এক দফা ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ ও ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব নাহিদ ইসলাম।

সরকার পতনের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্যাম্পাসে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হন। প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হলেও পরে ক্যাম্পাসে একাধিক মানববন্ধন-বিক্ষোভও করেন তাঁরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস শুরুর তারিখ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের ওই অংশ বলছে, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ফিরে যাবেন না। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানাতে থাকেন কিছু শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির সমন্বয়কদের প্রায় সবাই ছাত্রশক্তির সঙ্গে যুক্ত।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ছাত্রশক্তির ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে লেখা হয়, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির সব কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’ তবে কী কারণে এটি করা হলো, তা স্পষ্ট করা হয়নি। গত বছরের ৪ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ও ছাত্রশক্তির পদধারী নেতা আজ শনিবার বিকেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত চলমান বিতর্ক এড়াতে চেয়েছেন। আন্দোলনের সময় যেহেতু তাঁরা দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের একটি দাবি রেখেছিলেন, সেই জায়গা থেকে শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁরা পরিষ্কার থাকতে চান।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ছাত্রশক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য স্থগিত হওয়া কমিটির সদস্যসচিব আবু বাকের মজুমদারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মোটামুটি বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই ছাত্রশক্তির কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করার কথা ভাবছিলাম। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ৯ বা ১০ আগস্ট আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। অবশেষে শুক্রবার ছাত্রশক্তির কমিটি ও কার্যক্রম স্থগিত করা হলো। এর পেছনে আসলে বিশেষ কোনো কারণ নেই।’

ছাত্রশক্তির রাজনৈতিক যাত্রা এখানেই শেষ কি না, জানতে চাইলে বাকের মজুমদার বলেন, বিষয়টি আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চাই না। আমাদের চাওয়া, ছাত্র সংসদভিত্তিক গঠনমূলক রাজনীতি।’