Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপ সরিয়ে নিচ্ছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়ার

সাভার উপজেলা প্রতিনিধি : 

একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ। ওই ভ্যানে আরো একটি লাশ তুলছে পুলিশ- এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওটি সাভারের আশুলিয়া থানার।

ভিডিওতে একটি পোস্টার দেখে ঘটনাটি আশুলিয়া থানার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সারা দিন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে লাশ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায় ।

ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও ৯ নম্বর চৌরাওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। ওখানে এখনো সেই পোস্টারটি দেয়ালে রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ওই বাড়ির একাধিক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বললেও ভিডিওর ব্যাপারে জানা যায়নি।

স্থানীয় দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। এসময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পরেও আন্দোলনকারী থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তারা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে কেউ মুখ খোলেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ঘটনাটি বিকেল ৪টার দিকে ঘটেছে। এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারীরা থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তবে ভ্যানে লাশ স্তূপ করার ঘটনাটি তিনি দেখেননি বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈন বলেন, আজ সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালিসিস করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এঘটনায় ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ১৫ জনের মৃত্যু হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপ সরিয়ে নিচ্ছে পুলিশ, ভাইরাল ভিডিওটি আশুলিয়ার

প্রকাশের সময় : ১২:৪৮:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

সাভার উপজেলা প্রতিনিধি : 

একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ। ওই ভ্যানে আরো একটি লাশ তুলছে পুলিশ- এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওটি সাভারের আশুলিয়া থানার।

ভিডিওতে একটি পোস্টার দেখে ঘটনাটি আশুলিয়া থানার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়া গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে আশুলিয়া থানার সামনে গিয়ে ঘটনাস্থলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এর আগে শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সারা দিন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ভিডিওটি আশুলিয়া থানার সামনের ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে ধারণ করা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুইজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা ধরে লাশ ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে কিছুসংখ্যক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায় ।

ভিডিওর ১ মিনিট ৬ সেকেন্ডে একটি পোস্টার দেখা যায়, যা স্থানীয় যুবলীগের ধামসোনা ইউনিয়ন সভাপতি ও ৯ নম্বর চৌরাওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী আবুল হোসেনের। সেই পোস্টারটি দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ভিডিওটির ঘটনাস্থল আশুলিয়া থানার পাশে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের পেছনের সড়ক দিয়ে থানা রোড অতিক্রম করে এসবি অফিসের দিকে যাওয়ার সময় ডান পাশের দেয়ালটি হুবহু ভিডিওর সঙ্গে মিল পাওয়া গেছে। ওখানে এখনো সেই পোস্টারটি দেয়ালে রয়েছে। মহাসড়ক থেকে থানার দিকে অগ্রসর হয়ে এসবি অফিসের দিকে চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ওই বাড়ির একাধিক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথা বললেও ভিডিওর ব্যাপারে জানা যায়নি।

স্থানীয় দোকানদারের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সকাল থেকেই নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা থানার চারপাশ দিয়ে ঘিরে ফেলে। এসময় পুলিশ মসজিদের মাইক ও হ্যান্ডমাইক দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের পরেও আন্দোলনকারী থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় পুলিশ গুলি চালাতে থাকে। তখন তারা দোকান বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে সরে যান।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে কেউ মুখ খোলেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ঘটনাটি বিকেল ৪টার দিকে ঘটেছে। এ সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনকারীরা থানায় হামলার চেষ্টা করলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তবে ভ্যানে লাশ স্তূপ করার ঘটনাটি তিনি দেখেননি বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈন বলেন, আজ সকালে ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি অ্যানালিসিস করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এঘটনায় ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ১৫ জনের মৃত্যু হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)।