Dhaka মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একটা জাতি যেখানে দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না : জামায়াত আমির

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটা জাতি যেখানে দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের সবাইকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু এই যাওয়াটা যেন প্রশান্তির হয়। শহীদের রক্ত শুকিয়ে গেছে, কিন্তু এটা যেন আমাদের অন্তর থেকে চলে না যায়। এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা মারা গেছেন, নাকি বেঁচে আছেন তা কেউই জানে না। ওই রাতগুলোতে অনেক কিছু ঘটেছে, যা আরেকবার ঘটেছিল ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে। যেখানে হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত হয়েছিলেন। ওই রাতে তাঁদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে, লাশগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে তা কেউ জানে না। কিন্তু আল্লাহ তো সবকিছু জানেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিনগর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। দ্বিতীয় স্বাধীনতায় অবদান রাখা আমাদের শহীদদের অবদান পাঠ্যপুস্তকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় স্থান করে দিতে হবে। এটা শহীদদের পরিবারের চাহিদা নয়, এটা আগামী প্রজন্মের চাহিদা। যেন পরের প্রজন্ম জানতে পারে, আমাদের আগের প্রজন্মের যুবকেরা, মানুষেরা হকের পক্ষে নিজেদের বুক পেতে দিয়েছিল।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমার আফসোস এই যুদ্ধের শহীদদের মধ্যে আমি একজন হতে পারলাম না। এই সৌভাগ্য আল্লাহ যাদের দান করেছেন তাদের জন্য আমার ঈর্ষা হয়। এই আন্দোলনে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আহত-নিহত হয়েছে। এই জাতি আজীবন তাদের কাছে ঋনী।

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ভাইদের দেখতে গিয়েছিলাম, কালিজা ফেটে গেছে। এক ভাইয়ের দুই চোখে গুলি লেগে অন্ধ হয়ে গেছে, সে তো আর এই দুনিয়ার আলো দেখবে না। এদের মা-বাবাকে আমরা কী শান্তনা দেবো। কত মায়ের বুক তারা খালি করে দিলো, একটা বারও কি তারা চিন্তা করল না।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহী গিয়েছিলাম। শুনতে পারলাম, আন্দোলনে এক রিকশাচালক ভাই কলসিতে পানি ও গ্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পানি খাওয়াতে বেড়িয়েছিল। একপর্যায়ে হটাৎ পর পর তিনটা বুলেট তারা শরীর ভেদ করে চলে যায়। সে বিয়ে করেছিল মাত্র এক বছর, তার স্ত্রী ছয় মাসের গর্ভবতী। সে আমাকে বলল, নিজেকে নয় গর্ভের সন্তান নিয়ে চিন্তিত। আমি বললাম, তোমাদের আল্লাহই পথ দেখাবেন। আর মানুষ হিসেবে আমরা পাশে থাকব। প্রতি মাসে সম্মানের সহিত চলার মতো একটি অংশ তোমাদের কাছে পৌঁছে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের সাথে বসেছিলাম। আমরা বলেছি, যেই পরিবারগুলোর আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন আপনারা তাদের সহযোগিতা করুন। আহতদের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করুন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। বীরদের বীরত্বগাঁথা আমাদের পাঠ্যপুস্তকসহ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান করে দিতে হবে। এটা তাদের পরিবারের চাহিদা নয়, এটা আগামী প্রজন্মের চাহিদা। তারা যাতে জানতে পারে, তাদের পূর্বের যুবকরা জালেমের সামনে বুক পেতে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা বলেছিল, বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’

শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে শহীদ পরিবারের কাছেই যাই, সেখানে কান্না ধরে রাখতে পারি না। আমাদের তো এত টাকাপয়সা নেই। কিন্তু আল্লাহর ভান্ডারে কোনো কমতি নেই। আমরা তাঁর ওপর ভরসা করেই কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ যেন আমাদের ওয়াদা ঠিক রাখার তৌফিক দেন। অনেক শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমাদের মোলাকাত করার সুযোগ হয়েছিল। এই জাতি যেন আমাদের এই শহীদ সন্তানদের ভুলে না যায়।

নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈন উদ্দিন আহমাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মুমিনুল হক সরকার, মহানগরীর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, মহানগরীর সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইন, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাকির হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সভাপতি আসাদুজ্জামান রাকিব, জেলা সভাপতি ছাত্রনেতা আবু সুফিয়ান, মহানগর ও জেলা সহকারী সেক্রেটারি জামাল হোসাইন ও আবু সাঈদ মুন্না, জেলা, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমিরসহ স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিরা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

একটা জাতি যেখানে দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না : জামায়াত আমির

প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটা জাতি যেখানে দাঁড়িয়ে যায়, সেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। আমাদের সবাইকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু এই যাওয়াটা যেন প্রশান্তির হয়। শহীদের রক্ত শুকিয়ে গেছে, কিন্তু এটা যেন আমাদের অন্তর থেকে চলে না যায়। এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা মারা গেছেন, নাকি বেঁচে আছেন তা কেউই জানে না। ওই রাতগুলোতে অনেক কিছু ঘটেছে, যা আরেকবার ঘটেছিল ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে। যেখানে হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত হয়েছিলেন। ওই রাতে তাঁদের সঙ্গে যে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে, লাশগুলো কোথায় নেওয়া হয়েছে তা কেউ জানে না। কিন্তু আল্লাহ তো সবকিছু জানেন।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিনগর এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। দ্বিতীয় স্বাধীনতায় অবদান রাখা আমাদের শহীদদের অবদান পাঠ্যপুস্তকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় স্থান করে দিতে হবে। এটা শহীদদের পরিবারের চাহিদা নয়, এটা আগামী প্রজন্মের চাহিদা। যেন পরের প্রজন্ম জানতে পারে, আমাদের আগের প্রজন্মের যুবকেরা, মানুষেরা হকের পক্ষে নিজেদের বুক পেতে দিয়েছিল।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমার আফসোস এই যুদ্ধের শহীদদের মধ্যে আমি একজন হতে পারলাম না। এই সৌভাগ্য আল্লাহ যাদের দান করেছেন তাদের জন্য আমার ঈর্ষা হয়। এই আন্দোলনে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আহত-নিহত হয়েছে। এই জাতি আজীবন তাদের কাছে ঋনী।

আমিরে জামায়াত বলেন, ‘বিভিন্ন হাসপাতালে আহত ভাইদের দেখতে গিয়েছিলাম, কালিজা ফেটে গেছে। এক ভাইয়ের দুই চোখে গুলি লেগে অন্ধ হয়ে গেছে, সে তো আর এই দুনিয়ার আলো দেখবে না। এদের মা-বাবাকে আমরা কী শান্তনা দেবো। কত মায়ের বুক তারা খালি করে দিলো, একটা বারও কি তারা চিন্তা করল না।’

তিনি বলেন, ‘রাজশাহী গিয়েছিলাম। শুনতে পারলাম, আন্দোলনে এক রিকশাচালক ভাই কলসিতে পানি ও গ্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পানি খাওয়াতে বেড়িয়েছিল। একপর্যায়ে হটাৎ পর পর তিনটা বুলেট তারা শরীর ভেদ করে চলে যায়। সে বিয়ে করেছিল মাত্র এক বছর, তার স্ত্রী ছয় মাসের গর্ভবতী। সে আমাকে বলল, নিজেকে নয় গর্ভের সন্তান নিয়ে চিন্তিত। আমি বললাম, তোমাদের আল্লাহই পথ দেখাবেন। আর মানুষ হিসেবে আমরা পাশে থাকব। প্রতি মাসে সম্মানের সহিত চলার মতো একটি অংশ তোমাদের কাছে পৌঁছে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের সাথে বসেছিলাম। আমরা বলেছি, যেই পরিবারগুলোর আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন আপনারা তাদের সহযোগিতা করুন। আহতদের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করুন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। বীরদের বীরত্বগাঁথা আমাদের পাঠ্যপুস্তকসহ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান করে দিতে হবে। এটা তাদের পরিবারের চাহিদা নয়, এটা আগামী প্রজন্মের চাহিদা। তারা যাতে জানতে পারে, তাদের পূর্বের যুবকরা জালেমের সামনে বুক পেতে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা বলেছিল, বুকের ভেতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’

শহীদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে শহীদ পরিবারের কাছেই যাই, সেখানে কান্না ধরে রাখতে পারি না। আমাদের তো এত টাকাপয়সা নেই। কিন্তু আল্লাহর ভান্ডারে কোনো কমতি নেই। আমরা তাঁর ওপর ভরসা করেই কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছি। আল্লাহ যেন আমাদের ওয়াদা ঠিক রাখার তৌফিক দেন। অনেক শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমাদের মোলাকাত করার সুযোগ হয়েছিল। এই জাতি যেন আমাদের এই শহীদ সন্তানদের ভুলে না যায়।

নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মঈন উদ্দিন আহমাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মুমিনুল হক সরকার, মহানগরীর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, মহানগরীর সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইন, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাকির হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবির নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সভাপতি আসাদুজ্জামান রাকিব, জেলা সভাপতি ছাত্রনেতা আবু সুফিয়ান, মহানগর ও জেলা সহকারী সেক্রেটারি জামাল হোসাইন ও আবু সাঈদ মুন্না, জেলা, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য ও থানা আমিরসহ স্থানীয় বিভিন্ন ব্যক্তিরা।