Dhaka শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪০ হাজার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে এ পর্যন্ত গত ১০ মাসে গাজায় মোট নিহত হয়েছেন ৪০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। সেই সঙ্গে মোট আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯২ হাজার।

যুদ্ধে অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনীর সেনা সদস্যরাও নিহত হয়েছেন। গত দশ মাসের যুদ্ধে গাজায় নিহত হয়েছেন ৩ শতাধিক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গাজায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪০ হাজার ৫ জন এবং আহত হয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৪০১ ফিলিস্তিনি। এই নিহত এবং আহতদের মধ্যে সামরিক-বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের অনুপাত কত— তা আলাদা করা হয়নি; তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার হতাহতদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, গাজা যুদ্ধ শেষ করতে মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে শুক্রবার আলোচনা আবার শুরু হবে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা বৃহস্পতিবার একটি গঠনমূলক দিনের আলোচনা শেষ করেছে এবং আলোচনা আজও চলবে।

জেনেভা-ভিত্তিক ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যা ভয়ঙ্কর এবং আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে এই সংখ্যা নজিরবিহীন বলা যায়।

গাজায় সেখানে মসজিদ, স্কুল, হাসপাতালসহ এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে হামলা চালানো হয়নি। গাজার সর্বত্রই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার (১০ আগস্ট) গাজার একটি স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১০০ জনেরও বেশি নিহত হয়। স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিল। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাতিসংঘ।

ইসরায়েলের এই হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট পার্থী কমলা হ্যারিসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফিল গর্ডন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটি বলেছে, গত কয়েকদিনে গাজার সাতটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের উচিত, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া। কারণ এসব অস্ত্র ব্যবহার করে নেতানিয়াহু বাহিনী আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে।

তাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে এবং নিজেদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে গত জুলাই মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা ও পিআর রিভিউ সাময়িকী ল্যানসেট। সেখানে দাবি করা হয়, যুদ্ধের গত দশ মাসে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস এবং তাদের মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের ১ হাজার যোদ্ধা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে মোট নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন। সেই সঙ্গে ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

আকস্মিক এই হামলার পর ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতা এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য অভিযানের শুরু থেকে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার— ৩ দেশ। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য দু’পক্ষকে একটি নতুন চুক্তির আওতায় আনতে চেষ্টা করছেন মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। গতকাল ১৫ আগস্ট ছিল সেই চুক্তি প্রস্তুত সংক্রান্ত বৈঠক। ইসরায়েল এবং হামাস নেতাদের সেই বৈঠকে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছিল।

সেই বৈঠকে আসতে সম্মত হয়েছিল ইসরায়েল। তবে হামাসের হাইকমান্ড জানিয়েছে, তারা আর নতুন কোনো বৈঠক চায় না; এর পরিবর্তে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় যে তিন স্তরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, সেটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪০ হাজার

প্রকাশের সময় : ১১:১১:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে এ পর্যন্ত গত ১০ মাসে গাজায় মোট নিহত হয়েছেন ৪০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। সেই সঙ্গে মোট আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯২ হাজার।

যুদ্ধে অবশ্য ইসরায়েলি বাহিনীর সেনা সদস্যরাও নিহত হয়েছেন। গত দশ মাসের যুদ্ধে গাজায় নিহত হয়েছেন ৩ শতাধিক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গাজায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪০ হাজার ৫ জন এবং আহত হয়েছেন মোট ৯২ হাজার ৪০১ ফিলিস্তিনি। এই নিহত এবং আহতদের মধ্যে সামরিক-বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের অনুপাত কত— তা আলাদা করা হয়নি; তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার হতাহতদের অধিকাংশই নারী এবং শিশু।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেছেন, গাজা যুদ্ধ শেষ করতে মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে শুক্রবার আলোচনা আবার শুরু হবে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গাজা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কাতার, মিশর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা বৃহস্পতিবার একটি গঠনমূলক দিনের আলোচনা শেষ করেছে এবং আলোচনা আজও চলবে।

জেনেভা-ভিত্তিক ইউরো-ভূমধ্যসাগরীয় মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের সংখ্যা ভয়ঙ্কর এবং আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে এই সংখ্যা নজিরবিহীন বলা যায়।

গাজায় সেখানে মসজিদ, স্কুল, হাসপাতালসহ এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে হামলা চালানো হয়নি। গাজার সর্বত্রই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।

এর আগে গত শনিবার (১০ আগস্ট) গাজার একটি স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১০০ জনেরও বেশি নিহত হয়। স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা আশ্রয় নিয়েছিল। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও জাতিসংঘ।

ইসরায়েলের এই হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট পার্থী কমলা হ্যারিসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ফিল গর্ডন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা অ্যাকশন ফর হিউম্যানিটি বলেছে, গত কয়েকদিনে গাজার সাতটি স্কুলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের উচিত, ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া। কারণ এসব অস্ত্র ব্যবহার করে নেতানিয়াহু বাহিনী আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে।

তাদের এই বক্তব্যকে সমর্থন করে এবং নিজেদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে গত জুলাই মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা ও পিআর রিভিউ সাময়িকী ল্যানসেট। সেখানে দাবি করা হয়, যুদ্ধের গত দশ মাসে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ১ লাখ ৮৬ হাজারের বেশি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস এবং তাদের মিত্রগোষ্ঠী প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদের ১ হাজার যোদ্ধা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে মোট নিহত হন ১ হাজার ২০০ জন। সেই সঙ্গে ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় যোদ্ধারা।

আকস্মিক এই হামলার পর ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা এখনও চলছে।

হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমঝোতা এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য অভিযানের শুরু থেকে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর এবং কাতার— ৩ দেশ। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য দু’পক্ষকে একটি নতুন চুক্তির আওতায় আনতে চেষ্টা করছেন মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। গতকাল ১৫ আগস্ট ছিল সেই চুক্তি প্রস্তুত সংক্রান্ত বৈঠক। ইসরায়েল এবং হামাস নেতাদের সেই বৈঠকে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছিল।

সেই বৈঠকে আসতে সম্মত হয়েছিল ইসরায়েল। তবে হামাসের হাইকমান্ড জানিয়েছে, তারা আর নতুন কোনো বৈঠক চায় না; এর পরিবর্তে গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় যে তিন স্তরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, সেটির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।