Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগ যদি প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না : সমন্বয়ক সারজিস

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৩:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
  • ২০৩ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ যদি প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তাই দেশ নিয়ে ছেলেখেলা না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সারজিস এমন হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সারজিসের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। মিনিট পাঁচেক শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে মিছিল নিয়ে তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে এসে অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী যে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে এরপর আর আমাদের রাজপথে নামার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ওই কুচক্রী মহল ও ফ্যাসিজমের দোসররা এখনো চক্রান্ত করছে। তারা দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অপকর্ম করছে। তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করে যে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে, সেটি প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্র-জনতাকে আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না আমাদের রাস্তায় নামার মাধ্যমে আমাদের একজন ভাই-বোনের চলাফেরায় বিন্দুমাত্র অসুবিধা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন আমাদের কষ্ট করে হলেও রাস্তায় নামতে হয়। কারণ দেশ যদি দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সে জায়গা থেকে আমরা ছাত্র-জনতা আজকে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি।

সারজিস বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আমার রাস্তায় নামার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কুচক্রী মহল ফ্যাসিবাদের দোসররা তাদের কুচক্র এখনো শেষ করেনি। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করার চেষ্টা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না, আমাদের রাস্তায় নামার কারণে আমাদের একজন ভাইবোনেরও সমস্যা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন কষ্ট হলেও আমাদের রাস্তায় নামতে হয়। কারণ, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।

১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারের দোসররা একটা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে, বিভিন্ন মহল থেকে এমন খবর পাচ্ছেন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে তাদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, যে অস্তিত্ব নিয়ে ১০০ বছর পরে হলেও তারা বাংলাদেশে এসে দাঁড়াতে পারবে। তাদের সাবধান করে দিতে চাই, এই দেশ নিয়ে আর কোনো ছেলেখেলা করবেন না। ছাত্র-জনতা মিলে এ দেশকে যেদিকে যাওয়া প্রয়োজন, সেদিকে নিয়ে যাবে। এর জন্য যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার দফার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এই ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দিয়েছি এই জায়গা থেকে যে, বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে কিছু দোসর শয়তানকে নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) এই সপ্তাহে একটি পাল্টা গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে। চায় সেই জায়গা থেকে আমাদের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দেওয়া। তারা যদি তাদের জায়গা থেকে কোনো নোংরা পরিকল্পনা করে, এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য আমরা ছাত্র-জনতা এই ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার রয়েছে আমরা বিশ্বাস করি সেটি ছাত্র জনতার সরকার। আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করবো, চাপে রাখবো। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, তাদের সদিচ্ছা রয়েছে। তারা আমাদের দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেনে নিবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে দাবিগুলো জানিয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে, তাদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। আমাদের এই সরকারের উপর আস্থা আছে। কিন্তু তাদের মধ্য যদি আমরা কোন দীর্ঘসূত্রিতা দেখি, আমরা বলে দিচ্ছি, আমরা তাদেরকে যেমন ওই গদিতে বসাতে পারি, তাদেরকে আমরা নামাতেও পারি। আমরা তাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমরা জানি কোন কাজটা করতে কতটুকু সময় লাগে। ততটুকু সময়ের মধ্যে এই কাজটি অবশ্যই হতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতা এই শাহবাগের মঞ্চ থেকে পুরো বাংলাদেশে আবার তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলবে।

শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেখেছেন কোথাও যদি একটি পিলারও হয় সেই পিলারের ক্রেডিট ওই হাসিনাকে দেওয়া হতো। তাহলে এই দেশে নামে-বেনামে, হিসাবে-বেহিসাবে হাজারের উপর যে আমার ভাই বোনকে হত্যা করা হয়েছে তার ক্রেডিটটিও ওই খুনি হাসিনার কাছে যায়। এই সাম্যের বাংলাদেশে আমরা চাই ওই খুনি হাসিনার এমন একটি বিচার হোক, যেটি এক পেশে নয়। পুরো বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর মানুষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে তার বিচার করুক। ওই খুনির জন্য আমরা ন্যায্যতার কথা বলছি বলে, আমরা তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার কথা বলেছি।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয় দাবি জানাবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেদিন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত তাই করেছি যা দেশের জনগণ চায়। এদেশের জনগণ যদি মনে করে এই খুনের দোসরদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই, তাহলে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা সেই দাবি তুলবো।

সারজিস বলেন, গত দেড় মাসে বাংলাদেশে যতগুলো হত্যা হয়েছে, সেগুলোর হুকুম কোথায় থেকে এসেছে আমরা জানি। স্পষ্ট কথা হচ্ছে, আমরা ওই খুনি হাসিনার বিচার চাই। সে তার আমলে যতগুলো বিচার করেছে; এর মধ্যে অসংখ্য বিচার করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, হিংসার বশবর্তী হয়ে, তার মতো প্রহসনের বিচার এই বাংলাদেশে আমরা করতে চাই না। আমরা আদালতকে ইচ্ছা মতো ব্যবহার করতে চাই না। আমরা এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করব, পুরো পৃথিবীর মানুষ যেন প্রশ্ন করতে না পারে।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে। আমরা চাই, পুরো বিশ্ব দেখুক, সে কত বড় একজন খুনি ছিল। কীভাবে এ দেশের মানুষকে শুধুমাত্র ক্ষমতায় বসে থাকার জন্য খুন করেছে।

‘মৃত্যুর মিছিল যাতে আর দেখতে না হয়, সে জন্য আমি পদত্যাগ করেছি’ শেখ হাসিনার এই মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে সারজিস বলেন, এখন ১৯৭১ সাল নয়, ১৯৯০ সাল নয়। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে কে কী বলছে, কে কী করছে, কার উদ্দেশ্য কী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মানুষও সেটি জানে। সে যে ক্ষমতায় থাকার জন্য আরও ১০-২০, ৫০ হাজার মানুষের লাশ ফেলার জন্য প্রস্তুত ছিল সেটি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ জানে। এতটাই ক্ষমতা পিপাসু হয়ে গিয়েছিল যে, আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্সকে হুমকি দিয়েছিল, যেন যে কোনো উপায়ে তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা হয়। তিন বাহিনী যদি তার কথার বিরুদ্ধে না দাঁড়াতো, বাংলাদেশে অনেক বড় বিভীষিকা হতে পারতো।

তিনি বলেন, সেদিন ঢাকা শহরের প্রতিটি প্রান্ত থেকে যদি লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় না নামতো, এই সংখ্যাটা যদি হাজারে হতো, খুনি হাসিনা বিভিন্ন ফোর্সকে বাধ্য করতো গুলি চালাতে।
সারজিস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখন আর শিশু নেই। বাংলাদেশের ওই গ্রামের মানুষ এখন যা বোঝাবেন তাই বুঝবে, এই দিন আর নেই।’

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে সারজিস বলেন, কেউ যদি প্রতিবিপ্লবের কথা ভুলেও মুখে নেয়, তার মানে বাংলাদেশের পুরো ছাত্র-জনতার বিপক্ষে ঘোষণা দিচ্ছে। এই ঘোষণা যারা দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। তাদের উদ্দেশ্য এ দেশের ছাত্র-জনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বরং দেশের মানুষকে শোষণ করার সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের বাইরে কিছু অপশক্তির হাতে আংশিক বা সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেওয়া যে তাদের স্বার্থ, সেটি আমরা বুঝে যাই। কেউ যদি পুনরায় এই সাহসটুকু করে, প্রতিবিপ্লবের চেষ্টাটুকু করে; ৫ আগস্ট দেখেছেন, এর পরে যা হবে, আপনাদের অস্তিত্বও থাকবে না।

দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগের জাদুঘরের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি চলছে। অন্যদিকে শাহবাগের ফুলের দোকানে সামনে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করছে বৈষম্য বিরোধী সাংস্কৃতিক জোট।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

আওয়ামী লীগ যদি প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না : সমন্বয়ক সারজিস

প্রকাশের সময় : ০৩:১৩:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আওয়ামী লীগ যদি প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তাই দেশ নিয়ে ছেলেখেলা না করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সারজিস এমন হুঁশিয়ারি দেন। এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সারজিসের নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। মিনিট পাঁচেক শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করে মিছিল নিয়ে তাঁরা জাতীয় জাদুঘরের সামনে এসে অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী যে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে এরপর আর আমাদের রাজপথে নামার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ওই কুচক্রী মহল ও ফ্যাসিজমের দোসররা এখনো চক্রান্ত করছে। তারা দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে বিভিন্ন জনের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন অপকর্ম করছে। তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করে যে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে, সেটি প্রতিরোধ করার জন্য ছাত্র-জনতাকে আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না আমাদের রাস্তায় নামার মাধ্যমে আমাদের একজন ভাই-বোনের চলাফেরায় বিন্দুমাত্র অসুবিধা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন আমাদের কষ্ট করে হলেও রাস্তায় নামতে হয়। কারণ দেশ যদি দিন শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। সে জায়গা থেকে আমরা ছাত্র-জনতা আজকে আবার রাস্তায় নেমে এসেছি।

সারজিস বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আমার রাস্তায় নামার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু কুচক্রী মহল ফ্যাসিবাদের দোসররা তাদের কুচক্র এখনো শেষ করেনি। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে তারা বিভিন্ন অপচেষ্টা করার চেষ্টা করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আবার রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে। আমরা চাই না, আমাদের রাস্তায় নামার কারণে আমাদের একজন ভাইবোনেরও সমস্যা হোক। কিন্তু দেশ যখন সংকটে পড়ে যায়, তখন কষ্ট হলেও আমাদের রাস্তায় নামতে হয়। কারণ, দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।

১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ থেকে শুরু করে স্বৈরাচারের দোসররা একটা পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছে, বিভিন্ন মহল থেকে এমন খবর পাচ্ছেন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে তাদের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না, যে অস্তিত্ব নিয়ে ১০০ বছর পরে হলেও তারা বাংলাদেশে এসে দাঁড়াতে পারবে। তাদের সাবধান করে দিতে চাই, এই দেশ নিয়ে আর কোনো ছেলেখেলা করবেন না। ছাত্র-জনতা মিলে এ দেশকে যেদিকে যাওয়া প্রয়োজন, সেদিকে নিয়ে যাবে। এর জন্য যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার দফার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এই ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দিয়েছি এই জায়গা থেকে যে, বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে কিছু দোসর শয়তানকে নিয়ে তারা (আওয়ামী লীগ) এই সপ্তাহে একটি পাল্টা গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে। চায় সেই জায়গা থেকে আমাদের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ দেওয়া। তারা যদি তাদের জায়গা থেকে কোনো নোংরা পরিকল্পনা করে, এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য আমরা ছাত্র-জনতা এই ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার রয়েছে আমরা বিশ্বাস করি সেটি ছাত্র জনতার সরকার। আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে তাদেরকে প্রশ্ন করবো, চাপে রাখবো। আমরা এটাও বিশ্বাস করি, তাদের সদিচ্ছা রয়েছে। তারা আমাদের দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেনে নিবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে যে দাবিগুলো জানিয়েছি, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে, তাদের ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। আমাদের এই সরকারের উপর আস্থা আছে। কিন্তু তাদের মধ্য যদি আমরা কোন দীর্ঘসূত্রিতা দেখি, আমরা বলে দিচ্ছি, আমরা তাদেরকে যেমন ওই গদিতে বসাতে পারি, তাদেরকে আমরা নামাতেও পারি। আমরা তাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমরা জানি কোন কাজটা করতে কতটুকু সময় লাগে। ততটুকু সময়ের মধ্যে এই কাজটি অবশ্যই হতে হবে। তা না হলে ছাত্র-জনতা এই শাহবাগের মঞ্চ থেকে পুরো বাংলাদেশে আবার তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলবে।

শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে দেখেছেন কোথাও যদি একটি পিলারও হয় সেই পিলারের ক্রেডিট ওই হাসিনাকে দেওয়া হতো। তাহলে এই দেশে নামে-বেনামে, হিসাবে-বেহিসাবে হাজারের উপর যে আমার ভাই বোনকে হত্যা করা হয়েছে তার ক্রেডিটটিও ওই খুনি হাসিনার কাছে যায়। এই সাম্যের বাংলাদেশে আমরা চাই ওই খুনি হাসিনার এমন একটি বিচার হোক, যেটি এক পেশে নয়। পুরো বাংলাদেশ পুরো পৃথিবীর মানুষ ন্যায্যতার ভিত্তিতে তার বিচার করুক। ওই খুনির জন্য আমরা ন্যায্যতার কথা বলছি বলে, আমরা তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার কথা বলেছি।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয় দাবি জানাবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেদিন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত তাই করেছি যা দেশের জনগণ চায়। এদেশের জনগণ যদি মনে করে এই খুনের দোসরদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই, তাহলে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা সেই দাবি তুলবো।

সারজিস বলেন, গত দেড় মাসে বাংলাদেশে যতগুলো হত্যা হয়েছে, সেগুলোর হুকুম কোথায় থেকে এসেছে আমরা জানি। স্পষ্ট কথা হচ্ছে, আমরা ওই খুনি হাসিনার বিচার চাই। সে তার আমলে যতগুলো বিচার করেছে; এর মধ্যে অসংখ্য বিচার করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, হিংসার বশবর্তী হয়ে, তার মতো প্রহসনের বিচার এই বাংলাদেশে আমরা করতে চাই না। আমরা আদালতকে ইচ্ছা মতো ব্যবহার করতে চাই না। আমরা এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের বিচার নিশ্চিত করব, পুরো পৃথিবীর মানুষ যেন প্রশ্ন করতে না পারে।

তিনি বলেন, আমাদের দাবি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে। আমরা চাই, পুরো বিশ্ব দেখুক, সে কত বড় একজন খুনি ছিল। কীভাবে এ দেশের মানুষকে শুধুমাত্র ক্ষমতায় বসে থাকার জন্য খুন করেছে।

‘মৃত্যুর মিছিল যাতে আর দেখতে না হয়, সে জন্য আমি পদত্যাগ করেছি’ শেখ হাসিনার এই মন্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে সারজিস বলেন, এখন ১৯৭১ সাল নয়, ১৯৯০ সাল নয়। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে কে কী বলছে, কে কী করছে, কার উদ্দেশ্য কী বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মানুষও সেটি জানে। সে যে ক্ষমতায় থাকার জন্য আরও ১০-২০, ৫০ হাজার মানুষের লাশ ফেলার জন্য প্রস্তুত ছিল সেটি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ জানে। এতটাই ক্ষমতা পিপাসু হয়ে গিয়েছিল যে, আর্মি, নেভি, এয়ার ফোর্সকে হুমকি দিয়েছিল, যেন যে কোনো উপায়ে তাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা হয়। তিন বাহিনী যদি তার কথার বিরুদ্ধে না দাঁড়াতো, বাংলাদেশে অনেক বড় বিভীষিকা হতে পারতো।

তিনি বলেন, সেদিন ঢাকা শহরের প্রতিটি প্রান্ত থেকে যদি লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় না নামতো, এই সংখ্যাটা যদি হাজারে হতো, খুনি হাসিনা বিভিন্ন ফোর্সকে বাধ্য করতো গুলি চালাতে।
সারজিস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এখন আর শিশু নেই। বাংলাদেশের ওই গ্রামের মানুষ এখন যা বোঝাবেন তাই বুঝবে, এই দিন আর নেই।’

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রতিবিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে—এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে সারজিস বলেন, কেউ যদি প্রতিবিপ্লবের কথা ভুলেও মুখে নেয়, তার মানে বাংলাদেশের পুরো ছাত্র-জনতার বিপক্ষে ঘোষণা দিচ্ছে। এই ঘোষণা যারা দিচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য সৎ নয়। তাদের উদ্দেশ্য এ দেশের ছাত্র-জনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, বরং দেশের মানুষকে শোষণ করার সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশের বাইরে কিছু অপশক্তির হাতে আংশিক বা সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেওয়া যে তাদের স্বার্থ, সেটি আমরা বুঝে যাই। কেউ যদি পুনরায় এই সাহসটুকু করে, প্রতিবিপ্লবের চেষ্টাটুকু করে; ৫ আগস্ট দেখেছেন, এর পরে যা হবে, আপনাদের অস্তিত্বও থাকবে না।

দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শাহবাগের জাদুঘরের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি চলছে। অন্যদিকে শাহবাগের ফুলের দোকানে সামনে সাংস্কৃতিক সমাবেশ করছে বৈষম্য বিরোধী সাংস্কৃতিক জোট।