Dhaka শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাত্রদের বিজয়ে তারকার ফেসবুক উল্লাস

  • বিনোদন ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৫৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪
  • ২২২ জন দেখেছেন

বিনোদন ডেস্ক : 

সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। ছাত্র আন্দোলনের কাছে পরাজিত হয়ে সরকার পতনের ঘটনা ইতিহাস হয়ে থাকবে। বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা।

এ খবরে আন্দোলনরত ছাত্ররা আনন্দ মিছিল শুরু করে রাজপথে। যে সকল শোবিজ তারকারা শুরু থেকেই এই ছাত্র আন্দোলনের পাশে থেকেছেন, দিয়ে এসেছেন অনুপ্রেরণা, তাদের অনেকেই এ খবর শোনার পর ফেসবুকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। দেখে নিন তারকার ফেসবুক পোস্টের

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জোরালো অবস্থানে দেখা গেছেন গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘৪২০’খ্যাত এ নির্মাতা লেখেন, বিজয়ের আনন্দ অবশ্যই করব! কিন্তু এখন সময় সংযমেরও, চোখ-কান খোলা রাখারও। আমরা ২০ বছর প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখেছি। প্রতিহিংসার উত্তর দিব আমরা কাইন্ডনেস এবং সিমপ্যাথি দিয়ে। পাশাপাশি আমরা চোখ খোলা রাখব আগামী দুই তিন দিন। নিশ্চয়ই আমরা একটা মানবিক গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের দিকে আগাইয়া যাব। লাস্টলি, স্যালুট টু বাংলাদেশি ইয়ুথ অ্যান্ড পিপল ফ্রম অল ওয়াকস।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য গত শনিবার এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের এই চাওয়াকে ছোট করে দেখতে চান না চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদ্দুজ্জামান ডায়মন্ড। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের কোনো আন্দোলন কখনোই বিফলে যায় না। তিনি লিখেছেন, ‘সাক্ষ্য দিচ্ছে ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০। যাঁরা ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে, তাঁরা ভেবে দেখুন, ইতিহাসে কোথাও ছাত্র পরাজয়ের কথা লেখা নাই।’

অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ ফেসবুকে লিখেছেন, ২০ টাকার আলু যখন ৬০ টাকা হলো, মানুষ চুপ ছিল। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদেরা আত্মসাৎ করল, দেশের বাইরে পাচার করল, মানুষ চুপ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়ম, গুম, স্বেচ্ছাচারিতায় মানুষ চুপ ছিল। তারা চুপ থাকতে থাকতে বোবা হয়ে গিয়েছিল! আর বোবারা যদি কখনো কথা বলতে শেখে, তাদের চুপ করানো যায় না। ছাত্ররা বোবাদের কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছে! চুপ করাবেন কাকে? মানুষ যখন মৃত্যুভয় জয় করে ফেলে, তখন আর তাদের হারানো যায় না।

চিত্রনায়িকা পরীমণিও এ আন্দোলনের সপক্ষে কথা বলেছেন। আজ বিকালে এ নায়িকা তার ফেসবুকে লেখেন, ‘তিন বছর আগে এই ৫ আগস্ট যেভাবে আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল প্রকৃতি হিসাব রাখে মা।’

এ আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের সপক্ষে জোরালো অবস্থান নেন ‘মহানগর’খ্যাত পরিচালক আশফাক নিপুণ। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে নির্মাতা আশফাক নিপুণ লেখেন, ‘স্বৈরাচারী ও খুনি শেখ হাসিনা থেকে মুক্ত বাংলাদেশ! এটা সম্ভব করার জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও আমার দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা মাত্র শুরু। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে সংস্কার করব।’

স্বামী-সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন ‘একজীবনে এত প্রেম পাব কোথায়’ গানের জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মাহমুদা আমিন শায়না। দূর দেশে থেকেও এ আন্দোলনের সপক্ষে কথা বলেছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘সবাইকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা। আমাদের শহীদ ভাই-বোনদের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা। তোরা আমাদের মনে জীবিত থাকবি আজীবন।’ আরেক পোস্টে শায়না লেখেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অতি শিগগির ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী আর সাধারণ জনতার বিনাশর্তে মুক্তি দাবি করছি।’

টিভি অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি লেখেন, “মুগ্ধদের বাংলাদেশে যাদের কলিজায় পানি নাই, তাদের পানি খাওয়ান। তাদের আঘাত না করে ঠিক মুগ্ধর মতোই বলেন ‘পানি লাগবে পানি’।”

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঈশিকা খানও যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। দূর দেশ থেকে তারও অবস্থান আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিল। আজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ভিতরে যে এত দেশ প্রেম ছিল তা আগে বুঝি নাই! ছাত্র-জনতা বুঝিয়ে দিলো।’ আরেক পোস্টে ঈশিকা খান লেখেন, ‘এই আবেগ, এই কান্না! আহা! আজ চিৎকার করে এই খুশির কান্না কানতে চাই।’

শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষেরা ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, রামপুরা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ীসহ সারা দেশের নানা স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে গণজমায়েত শুরু করেন। এর মধ্যে রাত ১২টার দিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন কেউ কেউ। অভিনেত্রী সুনেহরা বিনতে কামাল ফেসবুক বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, সবাই একসঙ্গে থাকলে মোবাইল ডেটা দিয়ে কী করবে? যারা জানার তারা ইতিমধ্যে জানে, মোবাইল ডেটা বন্ধ করে কী করবেন আপনারা?

দিনরাত এখন যেন একাকার হয়ে গেছে চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না। এর মধ্যেও ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। শুটিং বন্ধ করে সব খবর রাখছেন বাসা থেকে। এদিকে আজ আবার মোবাইল ডেটা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে শৈশবের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়েছেন এই চিত্রনায়ক। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় খেলার সময় যে বন্ধু পারত না সে কী কী করত? প্রথমত, খেলার ব্যাট নিয়ে চলে যেত। দ্বিতীয়ত, দেখে নেওয়ার হুমকি দিত। আবার কখনো রাগে থুথু দিয়ে দৌড় দিত। ইন্টারনেট আর কারফিউ দেখে অনেক দিন পর শৈশবের কথা মনে পড়ল।’

সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর স্ট্যাটাস লেখেন, সন্তানদের মেধা বাংলাদেশের সেরা সম্পদ। এই বাংলাদেশ পরিচালিত হতে হবে মেধাবী দেশপ্রেমিকদের মাধ্যমে। আজ ৩৬ শে জুলাই (৫ই আগস্ট) স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয় দেখেছে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে- স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে।

আসিফ আরও লেখেন, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে, সকল বিভক্তি কাটিয়ে জাতিকে হতে হবে ঐক্যবদ্ধ। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিই পারে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। আমাদের সন্তান এই বিজয়ী ছাত্রসমাজের স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। শহীদ ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের পরিবারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম, হতাশ হইনি। বিশ্বাস ছিল এই তারুণ্যই একদিন সমস্ত অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়বে। তোমাদের অভিনন্দন জানাই একজন গর্বিত বাবা হিসেবে।

তিনি তার স্ট্যাটাসের শেষে লেখেন, ‘দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল। সাবাশ বাংলাদেশ। ভালবাসা অবিরাম।’

অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় লিখেছেন, কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়। এই মাছটা কার রিজিকে ছিল? অথচ আল্লাহতালা কার রিজিকে এই মাছটা রেখেছে দেখেন। বাংলাদেশের মিডিয়া এবং শিল্পী জনতার যেন আর কোনো সরকারের গোলাম হয়ে না বাঁচতে হয়। আর যেন ভয়ে না থাকতে হয় কিছু বললেই তুলে নিয়ে যাবে। গোপনে মেরে ফেলবে। সন্তান হারাবে বাবাকে। স্ত্রী হারাবে স্বামীকে। মা হারাবে সন্তানকে।

জয় লেখেন, বাংলাদেশে ফিরে আসুক গণতন্ত্র। যেখানে সবাই কথা বলতে পারবে প্রতিবাদ করতে পারবে শঙ্কাবিহীন। এই আন্দোলনে আমার মতো কিছু মানুষের কোনো ভূমিকা ছিল না। ছাত্রদের পক্ষে হালকা দুই একটা পোস্ট দিলেও গা বাঁচিয়ে দিয়েছি যেন সরকার তুলে না নিয়ে যায়। সেই দু একটা পোষ্টের জন্যেও থ্রেট এসেছে। চুপচাপ ছিলাম। তবে দেশটা আজ যে সাহসী সন্তানরা স্বাধীন করল যেমন তাদের তেমন আমার মতো ভীতুদেরও। আশা করি সাহসীদের সাথে আমার মতো ভীতুরাও নতুন বাংলাদেশে সাহস নিয়ে বেঁচে থাকব।

অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান লিখেছেন, প্রত্যেকটা রুহের বদদোয়া, প্রত্যেকটা লাশের বদদোয়া, প্রত্যেকটা মায়ের বদদোয়া, প্রত্যেকটা ছাত্রের বদদোয়া, প্রত্যেকটা মানুষের বদদোয়া। আল্লাহ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না।

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া লিখেছেন, অনেকদিন পর ছবি আপলোড করলাম! এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে আমি ধন্য!

এরপর ধন্যবাদ জানিয়ে ফারিয়া লেখেন, ধন্যবাদ ছাত্রদের ,আমাদের ছোট ভাই বোনদের, আজকের এই আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দেয়ায় জন্য !

সবশেষে অভিনেত্রী লেখেন আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন আজকে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান সিইসির

ছাত্রদের বিজয়ে তারকার ফেসবুক উল্লাস

প্রকাশের সময় : ০৬:৫৫:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪

বিনোদন ডেস্ক : 

সোমবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। ছাত্র আন্দোলনের কাছে পরাজিত হয়ে সরকার পতনের ঘটনা ইতিহাস হয়ে থাকবে। বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা।

এ খবরে আন্দোলনরত ছাত্ররা আনন্দ মিছিল শুরু করে রাজপথে। যে সকল শোবিজ তারকারা শুরু থেকেই এই ছাত্র আন্দোলনের পাশে থেকেছেন, দিয়ে এসেছেন অনুপ্রেরণা, তাদের অনেকেই এ খবর শোনার পর ফেসবুকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। দেখে নিন তারকার ফেসবুক পোস্টের

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে জোরালো অবস্থানে দেখা গেছেন গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘৪২০’খ্যাত এ নির্মাতা লেখেন, বিজয়ের আনন্দ অবশ্যই করব! কিন্তু এখন সময় সংযমেরও, চোখ-কান খোলা রাখারও। আমরা ২০ বছর প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখেছি। প্রতিহিংসার উত্তর দিব আমরা কাইন্ডনেস এবং সিমপ্যাথি দিয়ে। পাশাপাশি আমরা চোখ খোলা রাখব আগামী দুই তিন দিন। নিশ্চয়ই আমরা একটা মানবিক গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণের দিকে আগাইয়া যাব। লাস্টলি, স্যালুট টু বাংলাদেশি ইয়ুথ অ্যান্ড পিপল ফ্রম অল ওয়াকস।

শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য গত শনিবার এক দফা দাবি ঘোষণা করা হয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের এই চাওয়াকে ছোট করে দেখতে চান না চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ ওয়াহিদ্দুজ্জামান ডায়মন্ড। তিনি মনে করেন, শিক্ষার্থীদের কোনো আন্দোলন কখনোই বিফলে যায় না। তিনি লিখেছেন, ‘সাক্ষ্য দিচ্ছে ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০। যাঁরা ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে, তাঁরা ভেবে দেখুন, ইতিহাসে কোথাও ছাত্র পরাজয়ের কথা লেখা নাই।’

অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ ফেসবুকে লিখেছেন, ২০ টাকার আলু যখন ৬০ টাকা হলো, মানুষ চুপ ছিল। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিবিদেরা আত্মসাৎ করল, দেশের বাইরে পাচার করল, মানুষ চুপ ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনিয়ম, গুম, স্বেচ্ছাচারিতায় মানুষ চুপ ছিল। তারা চুপ থাকতে থাকতে বোবা হয়ে গিয়েছিল! আর বোবারা যদি কখনো কথা বলতে শেখে, তাদের চুপ করানো যায় না। ছাত্ররা বোবাদের কথা বলতে শিখিয়ে দিয়েছে! চুপ করাবেন কাকে? মানুষ যখন মৃত্যুভয় জয় করে ফেলে, তখন আর তাদের হারানো যায় না।

চিত্রনায়িকা পরীমণিও এ আন্দোলনের সপক্ষে কথা বলেছেন। আজ বিকালে এ নায়িকা তার ফেসবুকে লেখেন, ‘তিন বছর আগে এই ৫ আগস্ট যেভাবে আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল প্রকৃতি হিসাব রাখে মা।’

এ আন্দোলনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের সপক্ষে জোরালো অবস্থান নেন ‘মহানগর’খ্যাত পরিচালক আশফাক নিপুণ। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করে নির্মাতা আশফাক নিপুণ লেখেন, ‘স্বৈরাচারী ও খুনি শেখ হাসিনা থেকে মুক্ত বাংলাদেশ! এটা সম্ভব করার জন্য কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও আমার দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। এটা মাত্র শুরু। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে সংস্কার করব।’

স্বামী-সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন ‘একজীবনে এত প্রেম পাব কোথায়’ গানের জনপ্রিয় মডেল-অভিনেত্রী মাহমুদা আমিন শায়না। দূর দেশে থেকেও এ আন্দোলনের সপক্ষে কথা বলেছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘সবাইকে স্বাধীনতার শুভেচ্ছা। আমাদের শহীদ ভাই-বোনদের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা। তোরা আমাদের মনে জীবিত থাকবি আজীবন।’ আরেক পোস্টে শায়না লেখেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অতি শিগগির ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পী আর সাধারণ জনতার বিনাশর্তে মুক্তি দাবি করছি।’

টিভি অভিনেত্রী মনিরা আক্তার মিঠু নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে তিনি লেখেন, “মুগ্ধদের বাংলাদেশে যাদের কলিজায় পানি নাই, তাদের পানি খাওয়ান। তাদের আঘাত না করে ঠিক মুগ্ধর মতোই বলেন ‘পানি লাগবে পানি’।”

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঈশিকা খানও যুক্তরাজ্যে বসবাস করেন। দূর দেশ থেকে তারও অবস্থান আন্দোলনকারীদের পক্ষে ছিল। আজ ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ভিতরে যে এত দেশ প্রেম ছিল তা আগে বুঝি নাই! ছাত্র-জনতা বুঝিয়ে দিলো।’ আরেক পোস্টে ঈশিকা খান লেখেন, ‘এই আবেগ, এই কান্না! আহা! আজ চিৎকার করে এই খুশির কান্না কানতে চাই।’

শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষেরা ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, উত্তরা, রামপুরা, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ীসহ সারা দেশের নানা স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে গণজমায়েত শুরু করেন। এর মধ্যে রাত ১২টার দিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হন কেউ কেউ। অভিনেত্রী সুনেহরা বিনতে কামাল ফেসবুক বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, সবাই একসঙ্গে থাকলে মোবাইল ডেটা দিয়ে কী করবে? যারা জানার তারা ইতিমধ্যে জানে, মোবাইল ডেটা বন্ধ করে কী করবেন আপনারা?

দিনরাত এখন যেন একাকার হয়ে গেছে চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদের। ঠিকমতো ঘুমাতেও পারছেন না। এর মধ্যেও ছাত্রদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। শুটিং বন্ধ করে সব খবর রাখছেন বাসা থেকে। এদিকে আজ আবার মোবাইল ডেটা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে শৈশবের ঘটনার সঙ্গে মিলিয়েছেন এই চিত্রনায়ক। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ছোটবেলায় খেলার সময় যে বন্ধু পারত না সে কী কী করত? প্রথমত, খেলার ব্যাট নিয়ে চলে যেত। দ্বিতীয়ত, দেখে নেওয়ার হুমকি দিত। আবার কখনো রাগে থুথু দিয়ে দৌড় দিত। ইন্টারনেট আর কারফিউ দেখে অনেক দিন পর শৈশবের কথা মনে পড়ল।’

সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর স্ট্যাটাস লেখেন, সন্তানদের মেধা বাংলাদেশের সেরা সম্পদ। এই বাংলাদেশ পরিচালিত হতে হবে মেধাবী দেশপ্রেমিকদের মাধ্যমে। আজ ৩৬ শে জুলাই (৫ই আগস্ট) স্বাধীনতার নতুন সূর্যোদয় দেখেছে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে- স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে।

আসিফ আরও লেখেন, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি থেকে বেরিয়ে, সকল বিভক্তি কাটিয়ে জাতিকে হতে হবে ঐক্যবদ্ধ। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিই পারে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। আমাদের সন্তান এই বিজয়ী ছাত্রসমাজের স্বপ্নের বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। শহীদ ছাত্র-ছাত্রী এবং তাদের পরিবারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম, হতাশ হইনি। বিশ্বাস ছিল এই তারুণ্যই একদিন সমস্ত অচলায়তন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়বে। তোমাদের অভিনন্দন জানাই একজন গর্বিত বাবা হিসেবে।

তিনি তার স্ট্যাটাসের শেষে লেখেন, ‘দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল। সাবাশ বাংলাদেশ। ভালবাসা অবিরাম।’

অভিনেতা ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয় লিখেছেন, কোনোকিছুই চিরস্থায়ী নয়। এই মাছটা কার রিজিকে ছিল? অথচ আল্লাহতালা কার রিজিকে এই মাছটা রেখেছে দেখেন। বাংলাদেশের মিডিয়া এবং শিল্পী জনতার যেন আর কোনো সরকারের গোলাম হয়ে না বাঁচতে হয়। আর যেন ভয়ে না থাকতে হয় কিছু বললেই তুলে নিয়ে যাবে। গোপনে মেরে ফেলবে। সন্তান হারাবে বাবাকে। স্ত্রী হারাবে স্বামীকে। মা হারাবে সন্তানকে।

জয় লেখেন, বাংলাদেশে ফিরে আসুক গণতন্ত্র। যেখানে সবাই কথা বলতে পারবে প্রতিবাদ করতে পারবে শঙ্কাবিহীন। এই আন্দোলনে আমার মতো কিছু মানুষের কোনো ভূমিকা ছিল না। ছাত্রদের পক্ষে হালকা দুই একটা পোস্ট দিলেও গা বাঁচিয়ে দিয়েছি যেন সরকার তুলে না নিয়ে যায়। সেই দু একটা পোষ্টের জন্যেও থ্রেট এসেছে। চুপচাপ ছিলাম। তবে দেশটা আজ যে সাহসী সন্তানরা স্বাধীন করল যেমন তাদের তেমন আমার মতো ভীতুদেরও। আশা করি সাহসীদের সাথে আমার মতো ভীতুরাও নতুন বাংলাদেশে সাহস নিয়ে বেঁচে থাকব।

অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান লিখেছেন, প্রত্যেকটা রুহের বদদোয়া, প্রত্যেকটা লাশের বদদোয়া, প্রত্যেকটা মায়ের বদদোয়া, প্রত্যেকটা ছাত্রের বদদোয়া, প্রত্যেকটা মানুষের বদদোয়া। আল্লাহ ছাড় দেয়, কিন্তু ছেড়ে দেয় না।

অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া লিখেছেন, অনেকদিন পর ছবি আপলোড করলাম! এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে আমি ধন্য!

এরপর ধন্যবাদ জানিয়ে ফারিয়া লেখেন, ধন্যবাদ ছাত্রদের ,আমাদের ছোট ভাই বোনদের, আজকের এই আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দেয়ায় জন্য !

সবশেষে অভিনেত্রী লেখেন আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন আজকে।