স্পোর্টস ডেস্ক :
নারী এশিয়া কাপের রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন ভারত। এশিয়া কাপের চলমান আসরসহ প্রতিটি আসরের ফাইনালে উঠেছে হারমানপ্রীত কৌরের দল। জিতেছে ৭টিতে, হার শুধু একটিতে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আজকের ফাইনালেও ফেভারিট ছিল টিম ইন্ডিয়া। তবে নিজেদের ঘরের মাঠে ভারতকে অষ্টম শিরোপা জয় করতে দিল না স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে নিজেদের প্রথম শিরোপা জিতে নিয়েছে তারা।
রোববার (২৮ জুলাই) শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় হওয়া ফাইনালে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান করে ভারতের নারী ক্রিকেটাররা। জবাবে ২ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ৮ উইকেটের এই জয় লঙ্কানদের তাদের প্রথম এশিয়া কাপের শিরোপা এনে দিল।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌর। আগে ব্যাট করতে নেমে ভারতের হয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন শেফালি ভার্মা এবং স্মৃতি মান্ধানা। ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৪৪ রান তুলে দুর্দান্ত শুরু করে দুই ভারতীয় ওপেনার।
তবে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি শেফালি। ১৯ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর তিনে নামা উমা সেত্রীও (৯) দ্রুত বিদায় নেন। ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরও। ১১ বলে ১ বাউন্ডারিতে ১১ করে সাজঘরে ফেরেন।
তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে রান তুলতে থাকেন স্মৃতি মান্ধানা। ৩৬ বলে ফিফটি তুলে নেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৬০ রান করে বাউন্ডারি লাইনে কাটা পড়েন ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা। ৪৭ বলের ইনিংসে হাঁকান ১০ টি বাউন্ডারি। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে জেমিমাহ রদ্রিগেস ১৬ বলে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। শেষদিকে ব্যাটিংয়ে এসে তাণ্ডব চালাতে থাকেন রিচা ঘোষ। ইনিংসের শেষ ওভারে তৃতীয় বলে সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে ৩০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন এই ডান হাতি ব্যাটার। তাতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান করে ভারত।
লংকানদের পক্ষে বোলিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন স্পিনার কাভিশা দিলহারি। ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৬ রতান খরচায় দুই উইকেট নেন তিনি।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার বিষ্মী গুণারত্নে ফেরেন রান আউট হয়ে। দলের সংগ্রহ তখন মাত্র ৭। তবে এরপর দারুণভাবে হাল ধরেন চামারি আতাপাত্তু ও হার্শিথা সামারাবিক্রমা। দুজন মিলে দলকে নিয়ে ৯৪ রান পর্যন্ত। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা চামারি আজকেও ম্যাচ জেতানোর পথেই ছিলেন। ৩৩ বলে হাঁকিয়েছেন দারুণ এক ফিফটি। তিনি যতক্ষণ ছিলেন শ্রীলঙ্কা সহজ জয়ের পথেই হাঁটছিল।
১২তম ওভারে ভাঙে তাদের জুটি। ওভারের দ্বিতীয় বলে চার হাঁকিয়ে আসরে নিজের ৩০০তম রানের দেখা পান চামারি। কিন্তু শেষ বলে ভারতীয় স্পিনার শর্মার বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। ৪৩ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সামারাবিক্রমা। ১৪তম ওভারে তার এক চার ও ২ ছক্কায় আসে ১৪ রান।
শেষ ৩৬ বলে ৫৩ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। ১৫তম ওভারে ১০ রান তুলে চাপ কিছুটা কমান দুই ব্যাটার। ১৬তম ওভারে মিড অফে সামাবিক্রমার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ভারতীয় অধিনায়ক হারমনপ্রীত কৌর। মূলত সেখানেই ম্যাচ ফসকে যায় ভারতের হাত থেকে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১৭তম ওভারে ফিফটি পূর্ণ করেন সামারাবিক্রমা।
শেষ ১৮ বলে ২৫ রানের লক্ষ্য ছিল শ্রীলঙ্কার সামনে। সামারাবিক্রমা ও কাভিশা দিলহারির ব্যাট থেকে ১৮তম ওভারে আসে ১৭ রান। তাতে ম্যাচ পুরোপুরি ভারতের হাতছাড়া হয়ে যায়। পরের ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করেন দিলহারি। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে বসে পড়েন তিনি। ভারতের ইনিংসে কয়েকটি ক্যাচ ফেলেছিলেন তিনি। পরে ব্যাট হাতে যা পুষিয়ে দিলেন এই ব্যাটার। সেই সঙ্গে নিজের দলকে পৌঁছে দিলেন জয়ের বন্দরেও।
ম্যাচ শেষ করার পথে ১৬ বলে ৩০ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন দিলহারি। আর সামারাবিক্রমা মাঠ ছাড়েন ৫১ বলে অপরাজিত ৬৯ রান করে। ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন তিনি। আর পুরো আসরে ৩০৪ রান ও ৩ উইকেট নেওয়া চামিরা আতাপাত্তু নির্বাচিত হয়েছে টুর্নামেন্ট সেরা।