Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাঠিপেটা করে আন্দোলন দমন করবেন ভাবলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন : মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলমান ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি এই ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম। যদি মনে করেন অত্যাচার করে, মামলা দিয়ে, লাঠিপেটা করে, তাদের ওপর নির্যাতন করে, হল থেকে বের করে, এই আন্দোলন দমন করতে পারবেন, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিটাতো খুব স্বাভাবিক ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের তো কেউ অসম্মান করেনি। মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করবার কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ করেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কাজেই সেই মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানানো, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর ব্যাপারে আমাদের কারোই আপত্তি থাকার কথা না। আর সেই আপত্তি থাকলে কেউ গ্রহণও করবে না। কিন্তু ৫৪ বছর পরে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের ছেলেমেয়েও নয়, তাদের নাতি-পুতিদের জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে এবং সেটাও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে শতকরা ৫৬ ভাগ, এটাতো চলতে পারে না। এই ছিল ছাত্রদের দাবি। আজ এখনও পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীরা কোনও রাজনীতির কথা বলেনি, কোনও দলের কথা বলেনি। সরকারের সমালোচনা করে বা সরকারের পদত্যাগ বা সরকারের বিশেষ কোনও শাস্তি দাবি করেনি।

তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে, আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য দেই। আমরা মনে করি, এই সরকার অবৈধ সরকার। নির্বাচিত সরকার না। জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ শাসন করে না। অতএব, নতুন করে নির্বাচন করতে হবে এবং সেটা এই সরকারের অধীনে হবে না। কিন্তু যেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তারা এখন রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেননি। তারা দেশের মানুষের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন। তারা জানেন, জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে। তারা জানেন, সরকার ভারতের সঙ্গে এরকম একটা চুক্তি করেছে, এরকম একটা স্মারকে সই করেছে যেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা আঘাতের মতো। তারা জানেন, বাংলাদেশ ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ছাত্ররা এগুলোকে পছন্দ করে, আমি এমনটা মনে করি না। এদেশের যুব সমাজ পৃথিবীর কোনও দেশের যুব সমাজ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। বলাই হয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই হচ্ছে যুব সমাজের ধর্ম। কিন্তু তারপরও ছাত্রদের চিন্তা হলো— আমরা লেখাপড়া করবো পাস করবো, কিন্তু পাস করবার পর আমি মেধার কারণে চাকরি পাবো না, চাকরি পাবে কেবল দলীয় কোটার ভিত্তিতে। এটা চলতে পারে না। এই দাবির মধ্যে অন্যায্যতা কী?

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্ররা বলেছিলেন, কোটার সংস্কার চাই। তখন প্রধানমন্ত্রী রাগ করে বলেছিলেন, কোটাই বাতিল করে দিলাম। সেই বাতিল করবার পরে এখন যদি নতুন করে তারা আবার আদালতের রায় নিয়ে আসে যে, সেটাকে পুনর্বহাল করা হলো। সেটাতো কোনও কাজের কথা হবে না। এটা কোনও আইনিসিদ্ধ কাজও হবে না। এজন্য আমরা সবসময় বলি, যদি আদালতই রাজনীতি নির্ধারণ করে দিতো, তাহলে তো আদালত নির্বাচনও নির্ধারণ করে দিতে পারতো। তাই রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, এটা আদালতের কোনও কাজ না। আদালতকে কোনও কিছু বলবার আগে খেয়াল করতে হবে, এই কথা পরিস্কারভাবে সংবিধানে আছে যে, যারা অনগ্রসর অংশ তাদের জন্য কোটা থাকবে। বাকিদের কোটার কথা বলা নেই। এই প্রেক্ষিতে ছাত্ররা বলছে, তাদের জন্য যতটা সম্ভব রেখে বাকিটা মেধার ভিত্তিতে দিয়ে দেন। আমরা বলতে চাই, আমরা পূর্ণরূপে এই দাবি সমর্থন করি। আমি ছাত্রদের আন্দোলন শুধু সমর্থন করি। আমি বিশেষভাবে তাদের ধন্যবাদ দেই, তারা এত উসকানির পরেও শান্তভাবে নিরীহভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করবার চেষ্টা করছেন।

এসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি উদত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি এই দেশের যারা নিরীহ মানুষ, ওই ছাত্রদের যারা গার্ডিয়ান-মুরব্বি, যারা দেশের বিবেক, যারা স্বাধীনতার কথা ভাবেন, যারা রাজনীতি করেন বা করেন না, সমাজের কাজের মধ্যে আছেন, প্রত্যেকে আসেন নিজের কথা বলেন যে, আমরা ছাত্রদের এই ন্যায্য দাবির সঙ্গে আছি। এবং আমরা সরকারের যে নির্যাতন তার তীব্র নিন্দা করছি। আমি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও বলবো, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন। এরকম করে একের পর এক সন্ত্রাসের থাবা যদি বিস্তৃত হতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কখনোই কথা বলতে পারবে না। আমাদের বুকপিঠ এক হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে এগিয়ে আসতে হবে।

সংগঠনের সভাপতি এম গিয়াসউদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুরর হমান হাবিব, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

লাঠিপেটা করে আন্দোলন দমন করবেন ভাবলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন : মান্না

প্রকাশের সময় : ০৮:৪২:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলমান ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমি এই ছাত্রদের সঙ্গে একাত্ম। যদি মনে করেন অত্যাচার করে, মামলা দিয়ে, লাঠিপেটা করে, তাদের ওপর নির্যাতন করে, হল থেকে বের করে, এই আন্দোলন দমন করতে পারবেন, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিটাতো খুব স্বাভাবিক ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের তো কেউ অসম্মান করেনি। মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করবার কোনও প্রশ্ন নেই। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ করেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কাজেই সেই মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান জানানো, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর ব্যাপারে আমাদের কারোই আপত্তি থাকার কথা না। আর সেই আপত্তি থাকলে কেউ গ্রহণও করবে না। কিন্তু ৫৪ বছর পরে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের ছেলেমেয়েও নয়, তাদের নাতি-পুতিদের জন্য বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে এবং সেটাও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে শতকরা ৫৬ ভাগ, এটাতো চলতে পারে না। এই ছিল ছাত্রদের দাবি। আজ এখনও পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীরা কোনও রাজনীতির কথা বলেনি, কোনও দলের কথা বলেনি। সরকারের সমালোচনা করে বা সরকারের পদত্যাগ বা সরকারের বিশেষ কোনও শাস্তি দাবি করেনি।

তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের নির্দিষ্ট বক্তব্য আছে, আমরা রাজনৈতিক বক্তব্য দেই। আমরা মনে করি, এই সরকার অবৈধ সরকার। নির্বাচিত সরকার না। জনগণের প্রতিনিধিরা দেশ শাসন করে না। অতএব, নতুন করে নির্বাচন করতে হবে এবং সেটা এই সরকারের অধীনে হবে না। কিন্তু যেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তারা এখন রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলেননি। তারা দেশের মানুষের অবস্থা সম্পর্কে সচেতন। তারা জানেন, জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে। তারা জানেন, সরকার ভারতের সঙ্গে এরকম একটা চুক্তি করেছে, এরকম একটা স্মারকে সই করেছে যেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা আঘাতের মতো। তারা জানেন, বাংলাদেশ ঘুষ-দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। ছাত্ররা এগুলোকে পছন্দ করে, আমি এমনটা মনে করি না। এদেশের যুব সমাজ পৃথিবীর কোনও দেশের যুব সমাজ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় না। বলাই হয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই হচ্ছে যুব সমাজের ধর্ম। কিন্তু তারপরও ছাত্রদের চিন্তা হলো— আমরা লেখাপড়া করবো পাস করবো, কিন্তু পাস করবার পর আমি মেধার কারণে চাকরি পাবো না, চাকরি পাবে কেবল দলীয় কোটার ভিত্তিতে। এটা চলতে পারে না। এই দাবির মধ্যে অন্যায্যতা কী?

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্ররা বলেছিলেন, কোটার সংস্কার চাই। তখন প্রধানমন্ত্রী রাগ করে বলেছিলেন, কোটাই বাতিল করে দিলাম। সেই বাতিল করবার পরে এখন যদি নতুন করে তারা আবার আদালতের রায় নিয়ে আসে যে, সেটাকে পুনর্বহাল করা হলো। সেটাতো কোনও কাজের কথা হবে না। এটা কোনও আইনিসিদ্ধ কাজও হবে না। এজন্য আমরা সবসময় বলি, যদি আদালতই রাজনীতি নির্ধারণ করে দিতো, তাহলে তো আদালত নির্বাচনও নির্ধারণ করে দিতে পারতো। তাই রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাকবে।

আন্দোলন প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, এটা আদালতের কোনও কাজ না। আদালতকে কোনও কিছু বলবার আগে খেয়াল করতে হবে, এই কথা পরিস্কারভাবে সংবিধানে আছে যে, যারা অনগ্রসর অংশ তাদের জন্য কোটা থাকবে। বাকিদের কোটার কথা বলা নেই। এই প্রেক্ষিতে ছাত্ররা বলছে, তাদের জন্য যতটা সম্ভব রেখে বাকিটা মেধার ভিত্তিতে দিয়ে দেন। আমরা বলতে চাই, আমরা পূর্ণরূপে এই দাবি সমর্থন করি। আমি ছাত্রদের আন্দোলন শুধু সমর্থন করি। আমি বিশেষভাবে তাদের ধন্যবাদ দেই, তারা এত উসকানির পরেও শান্তভাবে নিরীহভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করবার চেষ্টা করছেন।

এসময় ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি উদত্ত কণ্ঠে আহ্বান জানাচ্ছি এই দেশের যারা নিরীহ মানুষ, ওই ছাত্রদের যারা গার্ডিয়ান-মুরব্বি, যারা দেশের বিবেক, যারা স্বাধীনতার কথা ভাবেন, যারা রাজনীতি করেন বা করেন না, সমাজের কাজের মধ্যে আছেন, প্রত্যেকে আসেন নিজের কথা বলেন যে, আমরা ছাত্রদের এই ন্যায্য দাবির সঙ্গে আছি। এবং আমরা সরকারের যে নির্যাতন তার তীব্র নিন্দা করছি। আমি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও বলবো, আপনারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন। এরকম করে একের পর এক সন্ত্রাসের থাবা যদি বিস্তৃত হতে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কখনোই কথা বলতে পারবে না। আমাদের বুকপিঠ এক হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে এগিয়ে আসতে হবে।

সংগঠনের সভাপতি এম গিয়াসউদ্দিন খোকনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুরর হমান হাবিব, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।