কিংবদ্বন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চলে যাওয়ার খবরে অনেকের মতো বিরহকাতর বাংলাদেশের বরেণ্য অভিনেত্রী ববিতাও। তিনি ‘অশনি সংকেত’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী ‘অনঙ্গ বউ’য়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি পরিচালনা করেন সত্যজিৎ রায়। ছবিটির জন্য অস্কার পান পরিচালক। এই ছবির মাধ্যমেই বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ববিতার নাম ছড়িয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন পার করছিলেন অভিনেত্রী ববিতা। তিনি বলেন, ‘যখন থেকে শুনলাম সৌমিত্র দা হাসপাতালে তখন থেকেই তার জন্য দোয়া করে যাচ্ছিলাম- তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। কিন্তু তিনি ফিরলেন না। সবাইকে ছেড়ে চলেই গেলেন। খুব মন খারাপ লাগছে।
ক্যারিয়ারে একটি ছবি ববিতার সঙ্গে করলেও উভয়ের মধ্যে বেশ সখ্যতা ছিল। যোগাযোগ বেশ আন্তরিক ছিল। সৌমিত্র যখনই বাংলাদেশে কোনো কাজে আসতেন ববিতার সঙ্গে দেখা হতো, দীর্ঘ সময় আড্ডাও হতো।
সৌমিত্রের স্মৃতিচারণ করে ববিতা বলেন, সৌমিত্রদার সঙ্গে আমার কত স্মৃতি… এগুলো কয়েক মিনিটে বলা সম্ভব নয়। আজ ‘অশনি সংকেত’ ছবির শুটিংকালীন অনেক স্মৃতিই মনে পড়ছে। ‘অশনি সংকেত’ ছবির দৃশ্যধারণ হয়েছিল শান্তিনিকেতন ও বীরভূমে। সিনেমার যেখানে চিত্রায়ণ হয়েছে, সেই সেট ছিল ছবির মতো সাজানো-গোছানো। ছবিতে যখন অভিনয় করি, তখন আমার বয়স কম ছিল। সত্যজিৎ দা, সৌমিত্র দা আমাকে কতটা সাহায্য করেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। তারা ছিলেন বলেই আমি ‘অনঙ্গ বউ’ হয়ে উঠতে পেরেছিলাম।
তিনি বলেন, বেশ ব্যক্তিত্ববান ছিলেন সৌমিত্র। সংস্কৃতির সকল শাখা-প্রশাখা নিয়ে তার জানাশোনা। তিনি কথা বললে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। দারুণ কবিতা আবৃত্তি করতেন, লিখতেনও। এই মানুষটি এখন অতীত। তবে সৌমিত্র চলে গেলেও তিনি অমর হয়ে থাকবেন। তার মতো নক্ষত্ররা সব সময় আলো ছড়িযে যান। তিনিও যাবেন।
আরও পড়ুন : করোনার সাথে যুদ্ধে হেরে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
রোববার ভারতীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অভিনেতা, আবৃত্তিকার, কবি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর একটি বায়োপিকের শুটিংয়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেখানে ৪১ দিনে অুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষ হার মানলেন ৮৬ বছর বয়সী এ অভিনেতা । কোভিড এনসেফ্যালোপ্যাথির কারণেই সব রকম চিকিৎসার উদ্যোগ ব্যর্থ হয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
১৯৩৫ সালে কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে জন্ম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। ছেলেবেলা কাটে ‘ডি এল রায়ের শহর’ কৃষ্ণনগরে। মা আশালতা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন গৃহবধূ। বাবা মোহিত চট্টোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন আইনজীবী। হাইস্কুল থেকেই অভিনয় শুরু করা সৌমিত্র কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক করার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে নেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাট্যশিল্পী হিসেবেও সৌমিত্র ছিলেন বিশিষ্ট। তার কর্মজীবন অবশ্য শুরু হয় আকাশবাণীতে, ঘোষক হিসেবে। পরে বাচিক শিল্পী হিসেবেও তিনি ছাপ রাখেন। তার কণ্ঠে রবীন্দ্রকবিতা বা জীবনানন্দ আচ্ছন্ন করে কবিতারসিক বাঙালিকে। কবিতা আবৃত্তি শুধু নয়, নিজে কবিতা রচনাও করেছেন তিনি। করেছেন পত্রিকা সম্পাদনার কাজও। তবে তিনি মূলত অভিনেতাই। বাঙালির অন্যতম প্রিয় নায়ক।