নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর বংশালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে হরিজন সম্প্রদায়ের বসতবাড়ির চাবি হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় নারী পুরুষসহ ১৬ জন আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি।
বুধবার (১০ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে পুরান ঢাকার আগা সাদেক রোডের পাশে মিরনজিল্লা সুইপার কলোনিতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মকবুল হোসেন (৫০), আওয়ামী লীগকর্মী মো. নাঈম (৪০), মো. রুবেল (৩৮) ও রুবেল গাজী (৩৫)।
অন্যদিকে কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে আহত হয়েছেন সুবল লাল ( ৩৬), রুমন দাস (৩৫), উদয় (২০), ঋষি কুমার (১৯), বিরুল দাস (২৪), বিমল দাস (৪০), করুন দাস (৩৫), শিবলাল (৪০), প্রশান্ত (১৩), নিরঞ্জন দাস (৭৫), নিলয় দাস (১৮) ও দীপ্ত দাস (১০)।
যুবলীগ নেতা মকবুল হোসেন জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়াল হোসেনসহ তারা সুইপার কলোনিতে যান সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতে। তাদের কলোনি থেকে থেকে সরে যেতে বলা হয়। এসব বিষয় নিয়ে দুপক্ষের আলোচনার সময় সুইপাররা ভবনের ওপর থেকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে।
সুইপার কলোনির বাসিন্দা উদয় কুমার বলেন, আমরা সকাল ১০টার দিকে উচ্ছেদের বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলন করি। এটি শেষ হতে না হতেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ কাউন্সিলরের লোকজন কলোনিতে ঢোকেন। কলোনির বাসিন্দারা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশকে ঢুকতে দিলেও বাধা দেন কাউন্সিলরের লোকজনদের। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমাদের মারধর করেন।
হামলার শিকার মিরনজিল্লা হরিজন পল্লীর বাসিন্দা টিটু সরকার টিটু বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সংবাদ সম্মেলন শেষ করেছি। তারপর কাউন্সিলর ও ম্যাজিস্ট্রেট আসে পুলিশ ও কয়েকশ লোক নিয়ে। এ সময় কাউন্সিলরের সমর্থকেরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা হকি, রামদা, চাপাতি, রড নিয়ে হামলা করে। বৃষ্টির মতো ইট -পাটকেল ছুড়তে থাকে। আমাদের অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। মন্দির ভেঙেছে। আমরা আমাদের মাটিতে থাকতে চাই। চারশ বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা এখানে থেকেছে। আমরাও এখানে থাকতে চাই।
হরিজনদের পক্ষে রিটকারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি বলেন, আমরা মিরনজিল্লা পল্লীর হরিজন সম্প্রদায়ের ভূমি রক্ষা কমিটির আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করছিলাম। সংবাদ সম্মেলন শেষে ম্যাজিস্ট্রেট ও কাউন্সিলর আউয়াল হোসেন হরিজন পল্লীতে আসেন। এ সময় হরিজনদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তখন কাউন্সিলরের লোকজন পল্লীর ভেতরে হামলা চালিয়ে হরিজনদের আবাসিক ঘর-বাড়ি ও মন্দির ভাঙচুর করে।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, বিকেল পর্যন্ত অন্তত ১৬ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। সবার অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত।
বংশালের আগা সাদেক লেনের মিরনজিল্লা হরিজন সিটি কলোনি উচ্ছেদের জন্য সম্প্রতি নোটিশ দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
জানা গেছে, ওই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ।