অনলাইনে বিড়ি কারখানার ঢালাও নিবন্ধন দেওয়ায় নকল ব্যান্ড রোলের ব্যবহার ও শুল্ক ফাঁকি বেড়েছে। নামে মাত্র ফি দিয়ে বিড়ি কারখানার নিবন্ধন নিয়ে বেশ কিছু চক্র দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে বিড়ির নকল ব্যান্ড রোল ব্যবহার করছে। এতে সরকার যেমন একদিকে বড় অংকের রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে বাড়ছে ধুমপানকারি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি।
তাদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছে না ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করা কারখানার মালিকরা। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) লিখিত অভিযোগ ওয়াহিদুজ্জামান নামে এক ব্যক্তির করা অভিযোগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
একাধিক বিড়ি কারখানার মালিকের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তরা বলেন, নকল ও জাল ব্যান্ডরোল ব্যবহারকারী বিড়ি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আমরা পেরে উঠছি না। নকল কারবারীরা কোন শুল্ক দিতে হয় না। বিড়ির ব্যান্ড রোল নকল ঠেকাতে লুজ বা খোলা ব্যান্ড রোল বিক্রি বন্ধ করতে হবে।
তাছাড়া অনলাইন বা সরাসরি যেকোন উপায়ে লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রত্যেকটি কোম্পানীকে কোম্পানীকে মাসে কমপক্ষে ৩ প্যাকেট ব্যান্ড রোল ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাছাড়া অনলাইনে যাকে তাকে ঢালাও নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
বিড়ির নকল ব্যান্ড রোল জালিয়াতির বিষয়ে দুদক ও এনবিআরে রাজধানীর দক্ষিণ শাহজাহানপুরের বাসিন্দা মো. ওয়াহিদুজ্জামানের করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শক্তিশালী একটি চক্র নকল ব্যান্ড রোল বাজারজাত করে প্রতিমাসে সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন।
বিশেষ করে অনলাইনে যাচাই বাছাই ছাড়া বিড়ি ফ্যাক্টরির লাইসেন্স দেওয়ায় তারা সরকারি ব্যান্ড রোল ক্রয় না করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভুয়া ব্যান্ড রোল দিয়ে বিড়ি সিগারেট বাজারজাত করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে।
নকল ব্যান্ড রোলের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনাররেট ড. শওকত আলী সাদী বলেন, গত এক মাসে আমরা নকল ব্যান্ড রোল বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে ১৮৬টি অভিযান পরিচালনা করে ২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করেছি। আমরা জোরদার অভিযান পরিচালনা করছি।
আরও পড়ুন : বিশ্বসেরা তালিকায় বাংলাদেশের ২৬ বিজ্ঞানী
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন করায় কেউ জালিয়াতি করার সুযোগ পায় না। সেখানে নির্ধারিত ছকে সবগুলো শর্ত পুরুণ করে নিবন্ধন নিতে হয়। তবে অনলাইনে নিবন্ধন নেওয়ার পর কেউ কেউ নকল ব্যান্ড রোল ব্যবহার করছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, রংপুর জেলায় জেলায় ছোট-বড় মিলে তালিকাভুক্ত বিড়ি কারখানার সংখ্যা ২৭৮টি। এর মধ্যেমাত্র ২০টি কারখানা নিয়মিত বিড়ি সিগারেটের প্যাকেটে সরকারের সরবরাহকৃত ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে থাকে। বাকি দেড় শতাধিক কারখানার মালিক ভুয়া ব্যান্ডরোল ব্যবহার করে উৎপাদিত বিড়ি বাজারজাত করছেন।
রংপুর জেলা বিড়ি ফ্যাক্টরী মালিক সমিতির সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যা ২০। আমিসহ সমিতির নেতৃবৃন্দ ব্যান্ডরোল জালিয়াতি করে কর ফাঁকি দাতাদের বিরুদ্ধে সোচ্ছার আছি। আমাদের কোন সদস্য এসব জালিয়াতিতে জড়িত নয়। ঢালাওভাবে অনলাইনে নিবন্ধন দেওয়ায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। যে কেউ লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। লাইসেন্স নিয়ে অনেকেই নকল ব্যান্ড রোলের কারবারে জড়িয়ে পড়ছে।
রংপুর অঞ্চলের বিড়ি কারখানার মালিক হেলাল উদ্দিন রহমান বলেন, বিগত সময়ে সরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে তদন্ত করে এবং প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিড়ি কারখানাগুলোর নানা দিক ও কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শণ করে করে বিড়ি কারখানা স্থাপন, বিড়ি উৎপাদন ও বাজারজাত করণের লাইসেন্স দিত।
কিন্তু অনলাইনে নিবন্ধন দেওয়ায় তার অনেক কিছুই থাকে ভুয়া। ফলে তারা নকল ব্যান্ড রোলের কারবার করছে। এই অবস্থান রাজস্ব ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকির বিষয়ে বিবেচনা করে যাকে তাকে বিড়ি উৎপাদনের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে মাকে কমপক্ষে ৩ প্যাকেট ব্যান্ডরোল ব্যবহার লাইসেন্সের শর্তে জুড়ে দিতে হবে। এতে সরকার অধিক রাজস্ব পাবে এবং নকল কারবারীরা নকলে উৎসাহী হবে না।
এবিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার বিদায়ী পরিচালক লে. কর্নেল কাশেম বিন সরোয়ার ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা, এনবিআর, আইন প্রয়োগকারি সংস্থা নকল ব্যান্ডরোল কারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।