নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র ঈদুল আজহার আগে বাকি আর একদিন। শেষ মুহূর্তে বিক্রির জন্য আনা কোরবানির পশু নিয়ে ক্রেতাদের জন্য অপেক্ষায় ব্যাপারীরা। হাটে প্রচুর পশু থাকলেও ক্রেতাদের চাপ নেই। তাই অনেকটা অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা।
শনিবার (১৫ জুন) রাজধানীর শনিরআখড়া হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ব্যাপারীদের আশা, বিকেল নাগাদ ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে কাজলা থেকে একেবারে রায়েরবাগ পর্যন্ত বসেছে এ হাট। হাটের কারণে এ এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার শনির আখড়ায় বসেছে কোরবানির পশুর হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম থাকলেও এখনও বিক্রি কম। বিক্রেতারা বলছেন, দাম শুনেই অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা। আর ক্রেতাদের দাবি, দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা।
পশু বিক্রেতারা বলছেন, এখানে বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। ক্রেতারা দর কষাকষি করছেন বেশি, কিনছেন কম। তবে আজ বিকেল থেকে বিক্রি বাড়বে বলে প্রত্যাশা তাদের।
মাগুরা থেকে এ হাটে আসা বিক্রেতা মহিব হাসান বলেন, আমি আমার পালের ৩টি ও আরও ৪টি গরু কিনে মোট ৭টি গরু নিয়ে এই হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি হয়েছে। দাম শুনেই অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা।
তিনি আরও বলেন, কিছু ক্রেতা দাম শুনে অন্যদিকে চলে যাচ্ছেন। আর কিছু ক্রেতা শুধু দামাদামি করছেন, কিনছেন না। এজন্য বিক্রি হচ্ছে কম।
ঝিনাইদহ থেকে ১০টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন শাহীন নামে একজন ব্যাপারী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০টি গরু নিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত শুধু দুটি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। গতকাল রাতেই ওগুলো বিক্রি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজ বিকেল থেকে কালকে পর্যন্ত বিক্রি ভালো হবে। আমি ১০ বছর ধরে এ হাটে গরু নিয়ে আসি। প্রতিবারই এমনই দেখি। রাখার জায়গা থাকে না বলে মানুষ ঈদের এক বা দুদিন আগে গরু কেনে।
তিনি আরও বলেন, এই হাটে বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। বড় গরুর দিকে কাস্টমারদের আগ্রহ কম।
কুষ্টিয়া থেকে আসা ব্যাপারী শিশির আহমেদ বলেন, ১২টা গরু আনছি, একটাও বিক্রি হয়নি। হাটের অবস্থা খুবই খারাপ। বেচাকেনা একেবারেই হচ্ছে না। যে গরু কিনে আনছি ২ লাখ ২০ হাজারে, সেটার দাম বলে ১ লাখ ৮০ হাজার। এভাবে গরু বেচাকেনা হলে তো ব্যাপারী বাঁচবে না। বিক্রি না হলে অবশ্যই ফেরত নিয়ে যাবো। দেশেই আমার অনেক ভালো। আমাদের গ্রামে যেমন হাট থাকে তেমন হাটের দামও বলে না এখানে, এত কম। আমরা আসছি ৯ তারিখে, কিন্তু একটাও বিক্রি করতে পারিনি।
ফরিদপুর থেকে আসা আরেক ব্যাপারী মো. হাফেজ বলেন, ১৩টা গরু নিয়ে আসছি, এখন পর্যন্ত একটা গরু বিক্রি করতে পেরেছি। সবগুলা বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আজকেই সব বেচে ফলবো। কাস্টমার বিকেলে নামবে। আমার কাছে সব বড় গরু। গতকালও ভালো বেচাকেনা হয়েছে। আজকেও ভালো হবে আশা করি।
অন্যদিকে, ক্রেতাদের দাবি বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন। যে গরুর দাম ১ লাখ টাকা হতে পারে, সে গরু দেড় লাখ টাকা ছাড়া বিক্রি করছেন না বিক্রেতারা।
যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা সিরাজুল হক বলেন, বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন। এত দাম চাইলে কিনবো কিভাবে? যে গরুর দাম ৮০ হাজার হবে, সে গরু ১ লাখ ২০ হাজার আর যে গরুর দাম ১ লাখ হতে পারে সে গরু দেড় লাখ টাকা ছাড়া বিক্রিই করছেন না বিক্রেতারা। এজন্য এখনো কিনিনি, দর কষাকষি করছি।
ধোলাইপাড়ের লিটন হাওলাদার নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, অনেক ঘুরে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু কিনেছি। হাটে দাম বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
দাম বেশির কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বিক্রেতা হাসেম মিয়া বলেন, গরুর খাবারসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। এজন্য আমাদের গরু পালার খরচ বেড়েছে। কমে কীভাবে বিক্রি করবো?
এই হাট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে ইজারা নিয়েছেন মো. কামরুজ্জামান। হাটের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৬২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ।
এ বিষয়ে মো. কামরুজ্জামান বলেন, হাটের কারণে যেন যানজট না হয়, সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি এখানে আমাদের ভলান্টিয়াররাও কাজ করছেন।