Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নৌপথের বেহাল দশা অবহেলিত যমুনায়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০
  • ১৯৩ জন দেখেছেন

সংগৃহীত ছবি

৫৫ বছর আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মধ্যে নৌযান চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহার করা হতো যমুনা নদীকে। কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ থেকে দুদিকে চলে যেত নৌযান। একটি নৌপথ ছিল গড়াই নদী হয়ে কলকাতা, অন্যটি চলে যায় চাঁদপুর ও বরিশাল হয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় নৌপথটি।

শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ আমলে দেশের অন্যতম ব্যস্ত নৌবন্দর ছিল সিরাজগঞ্জে। যমুনা নদীর সেই বন্দরকে ঘিরেই ছোট সিরাজগঞ্জ শহরে তৈরি করা হয়েছিল চারটি রেল স্টেশন। পাটপণ্য পরিবহনসহ আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ব্যবহার হতো এ বন্দর। কালের বিবর্তনে সিরাজগঞ্জের সেই নৌপথ ও বন্দর কোনোটিই নেই। রেল স্টেশন চারটিও বন্ধ।

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ, জ্বালানি তেল, পণ্য ও দানাদার খাদ্যশস্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে যমুনার নৌপথ। পণ্য পরিবহনে বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও নাব্যতা সংকটে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে জাহাজ ভিড়তে প্রায়ই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্যবাহী জাহাজ চলার জন্য স্বাভাবিক সময়ে নৌপথে ১০-১৫ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু পাবনার বেড়া উপজেলার প্যাঁচাকোলা থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের চ্যানেলটিতে পানির গভীরতা নেমে এসেছে ৬-৭ ফুটে। ফলে বাঘাবাড়ী বন্দরে সরাসরি আসতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে জাহাজ। এতে উত্তরাঞ্চলের পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বেই নদীকে ঘিরে অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় যমুনাকে ঘিরেই এ অঞ্চলে বড় বড় জাহাজ এবং নৌ-পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। আমরা ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য যমুনাকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুসারে কাজ করছি।

এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ যেন যমুনা নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠে, সে ব্যবস্থা করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে যমুনা নৌপথে বড় বড় জাহাজ চলবে।

যমুনা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ব্যবহার করেই অর্ধকোটি টনের বেশি সার, জ্বালানি তেল, সিমেন্ট, কয়লাসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে পাঠানো হয়। নৌপথটি ব্যবহার করে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। যদিও নাব্যতা সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে নেমে এসেছে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের মান।

আরও পড়ুন : রাশিয়া থেকে পদ্মায় এসেছে পরমাণু চুল্লিপাত্র

তার পরও বন্দরটি ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিলে নৌপথটি ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ সড়ক পরিবহনের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। আবার নৌপথে পণ্য পরিবহন করলে পরিবেশের ক্ষতি যেমন কম হয়, তেমনি পণ্যের গুণগত মানও ধরে রাখা যায়। এসব বিবেচনায় নিয়ে যমুনাকেন্দ্রিক এ নৌপথের উন্নয়ন ঘটালে নদীর দুই পাড়ে শিল্প গড়ে উঠবে, যা দেশে অর্থনীতির গতিকে বেগবান করবে।

সিরাজগঞ্জের সচেতন নাগরিক ও স্থানীয় যমুনা প্রবাহ পত্রিকার সম্পাদক মোস্তাফা কামাল তারা বলেন, যমুনা নদীর সঠিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারলে এ অঞ্চলে বাণিজ্যের মহাজাগরণ সম্ভব। অবহেলায় আমরা শত বছরের ঐতিহ্য নষ্ট করে ফেলেছি। যমুনার পানি এত দ্রুত কমে যাচ্ছে যে ভারী নৌযান চলাচল করতে পারে না। অথচ ভারী নৌযান চলাচলের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ভারতের আসাম থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে। ওই নদ যমুনা নাম ধারণ করে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদীতে মিশেছে। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। যদিও যমুনা নদীর শাখা ও উপনদীর দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। প্রতি বছর যমুনা নদীতে ১২০ কোটি টন পলি ও বালি পড়ছে। এসব পলি পানিপ্রবাহের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চলে যাওয়ার কথা।

কিন্তু পানিপ্রবাহের গতি কম থাকায় নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠছে। জমা এসব পলি ও বালি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সরানো হচ্ছে না। দেখা দিচ্ছে নাব্যতা সংকট। ফলে বাণিজ্য সম্ভাবনা ক্ষয়ে যাচ্ছে। নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ সড়ক পরিবহনের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।

এ বিষয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় নতুন নৌপথ তৈরি করতে পারছি না, আবার পরীক্ষিত নৌপথগুলোকে রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি। পদ্মাকে ঘিরে আরিচা থেকে ভারত পর্যন্ত শিল্পায়নের সুযোগ আমরা যেমন কাজে লাগাতে পারছি না।

আবার শত শত বছরের গড়ে ওঠা একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলকে মৃতপ্রায় করে ফেলেছি। যমুনা নদীকে ঘিরে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত নৌপথটি অবহেলার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দিয়েছি। যমুনা নদীকে বৈজ্ঞানিক ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ, ক্ষয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। সামগ্রিক বিবেচনায় নদীকে ড্রেজিং যেমন করা হচ্ছে না, তেমনি নদীভাঙন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অবহেলা রয়েছে।

অথচ যমুনা নদীকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নৌপথ চালু করার পাশাপাশি দুই পাড়ে শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, নদীভাঙন চলতে থাকলে শিল্পায়ন করা সম্ভব নয়। আবার পাইলট আকারে কোনো প্রকল্পও টেকসই হবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

নৌপথের বেহাল দশা অবহেলিত যমুনায়

প্রকাশের সময় : ০২:৩০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর ২০২০

৫৫ বছর আগেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মধ্যে নৌযান চলাচলে গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহার করা হতো যমুনা নদীকে। কুড়িগ্রামের চিলমারী হয়ে বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ থেকে দুদিকে চলে যেত নৌযান। একটি নৌপথ ছিল গড়াই নদী হয়ে কলকাতা, অন্যটি চলে যায় চাঁদপুর ও বরিশাল হয়ে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় নৌপথটি।

শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ আমলে দেশের অন্যতম ব্যস্ত নৌবন্দর ছিল সিরাজগঞ্জে। যমুনা নদীর সেই বন্দরকে ঘিরেই ছোট সিরাজগঞ্জ শহরে তৈরি করা হয়েছিল চারটি রেল স্টেশন। পাটপণ্য পরিবহনসহ আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে ব্যবহার হতো এ বন্দর। কালের বিবর্তনে সিরাজগঞ্জের সেই নৌপথ ও বন্দর কোনোটিই নেই। রেল স্টেশন চারটিও বন্ধ।

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ, জ্বালানি তেল, পণ্য ও দানাদার খাদ্যশস্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে যমুনার নৌপথ। পণ্য পরিবহনে বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও নাব্যতা সংকটে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে জাহাজ ভিড়তে প্রায়ই অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্যবাহী জাহাজ চলার জন্য স্বাভাবিক সময়ে নৌপথে ১০-১৫ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন। কিন্তু পাবনার বেড়া উপজেলার প্যাঁচাকোলা থেকে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের চ্যানেলটিতে পানির গভীরতা নেমে এসেছে ৬-৭ ফুটে। ফলে বাঘাবাড়ী বন্দরে সরাসরি আসতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে জাহাজ। এতে উত্তরাঞ্চলের পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কার্যকর পরিকল্পনার অভাবে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনাও কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সারা বিশ্বেই নদীকে ঘিরে অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় যমুনাকে ঘিরেই এ অঞ্চলে বড় বড় জাহাজ এবং নৌ-পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল। আমরা ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য যমুনাকে ঘিরে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণ করে সে অনুসারে কাজ করছি।

এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণ যেন যমুনা নদীকে ঘিরে গড়ে ওঠে, সে ব্যবস্থা করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে যমুনা নৌপথে বড় বড় জাহাজ চলবে।

যমুনা সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর ব্যবহার করেই অর্ধকোটি টনের বেশি সার, জ্বালানি তেল, সিমেন্ট, কয়লাসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে পাঠানো হয়। নৌপথটি ব্যবহার করে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের সুযোগ রয়েছে। যদিও নাব্যতা সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে নেমে এসেছে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের মান।

আরও পড়ুন : রাশিয়া থেকে পদ্মায় এসেছে পরমাণু চুল্লিপাত্র

তার পরও বন্দরটি ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিলে নৌপথটি ভারত ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ সড়ক পরিবহনের চেয়ে প্রায় অর্ধেক। আবার নৌপথে পণ্য পরিবহন করলে পরিবেশের ক্ষতি যেমন কম হয়, তেমনি পণ্যের গুণগত মানও ধরে রাখা যায়। এসব বিবেচনায় নিয়ে যমুনাকেন্দ্রিক এ নৌপথের উন্নয়ন ঘটালে নদীর দুই পাড়ে শিল্প গড়ে উঠবে, যা দেশে অর্থনীতির গতিকে বেগবান করবে।

সিরাজগঞ্জের সচেতন নাগরিক ও স্থানীয় যমুনা প্রবাহ পত্রিকার সম্পাদক মোস্তাফা কামাল তারা বলেন, যমুনা নদীর সঠিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারলে এ অঞ্চলে বাণিজ্যের মহাজাগরণ সম্ভব। অবহেলায় আমরা শত বছরের ঐতিহ্য নষ্ট করে ফেলেছি। যমুনার পানি এত দ্রুত কমে যাচ্ছে যে ভারী নৌযান চলাচল করতে পারে না। অথচ ভারী নৌযান চলাচলের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

ভারতের আসাম থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে। ওই নদ যমুনা নাম ধারণ করে গোয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদীতে মিশেছে। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। যদিও যমুনা নদীর শাখা ও উপনদীর দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার। প্রতি বছর যমুনা নদীতে ১২০ কোটি টন পলি ও বালি পড়ছে। এসব পলি পানিপ্রবাহের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চলে যাওয়ার কথা।

কিন্তু পানিপ্রবাহের গতি কম থাকায় নদীর বিভিন্ন স্থানে চর জেগে উঠছে। জমা এসব পলি ও বালি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সরানো হচ্ছে না। দেখা দিচ্ছে নাব্যতা সংকট। ফলে বাণিজ্য সম্ভাবনা ক্ষয়ে যাচ্ছে। নৌপথে পণ্য পরিবহন খরচ সড়ক পরিবহনের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।

এ বিষয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় নতুন নৌপথ তৈরি করতে পারছি না, আবার পরীক্ষিত নৌপথগুলোকে রক্ষায় চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি। পদ্মাকে ঘিরে আরিচা থেকে ভারত পর্যন্ত শিল্পায়নের সুযোগ আমরা যেমন কাজে লাগাতে পারছি না।

আবার শত শত বছরের গড়ে ওঠা একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলকে মৃতপ্রায় করে ফেলেছি। যমুনা নদীকে ঘিরে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত নৌপথটি অবহেলার মাধ্যমে নিঃশেষ করে দিয়েছি। যমুনা নদীকে বৈজ্ঞানিক ও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবস্থাপনা করতে না পারার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ, ক্ষয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। সামগ্রিক বিবেচনায় নদীকে ড্রেজিং যেমন করা হচ্ছে না, তেমনি নদীভাঙন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অবহেলা রয়েছে।

অথচ যমুনা নদীকে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নৌপথ চালু করার পাশাপাশি দুই পাড়ে শিল্প-কারখানা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, নদীভাঙন চলতে থাকলে শিল্পায়ন করা সম্ভব নয়। আবার পাইলট আকারে কোনো প্রকল্পও টেকসই হবে না। তাই দীর্ঘমেয়াদে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে হবে।