Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনোও চড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাজারে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অত্যন্ত চড়া। এই তিন পণ্য ছাড়াও প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই কমবেশি বাড়তি। যে কারণে বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

শুক্রবার (৭ জুন) সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি কচুরমুখী ১২০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০-৮০ টাকা, দেশি গাজর ৭০-৮০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা কাঁঠালের বিচি ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০-৮০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, উস্তা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শসা ১০০-১২০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, কাঁকরোল ৯০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬৫-৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬৫-৭০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। আকার ও মানভেদে অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। চাষের কই ২৮০-৩৫০ টাকার নিচে মিলছে না। আকার ও মানভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। আকারভেদে শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, অন্য জাতের টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, পাঁচ মিশালি মাছ ৪০০-৫০০, বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও রুপচাঁদার কেজি ১ হাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দুদিন আগেও ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া ৩২০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। তবে আগের মতোই ৩২০-৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। সাদা কক বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায় ও সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কয়দিন আগেও ১১০০ টাকা ছিল। তবে গরুর মাংস আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে আবারও উত্তাপ ডিমের বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। হালি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০-৫৫ টাকা। যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পাবনার পেঁয়াজ ৮০ টাকা, রাজশাহীর পেঁয়াজ ৭৮-৮০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৭৫-৭৬ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত আছে চালের দাম। প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৬-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৮০ টাকা, মোট আটাশ চাল ৫২-৫৩ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৪৮-৫০ টাকা ও স্বর্ণা (পাইজাম) ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজার করতে আসা মওদুদ আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বাজেট হয়েছে দেখলাম, যদিও বাজেটের সাথে আমাদের মতো শ্রেণিপেশার মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু থাকে না। বাজেট কম হোক বা বেশি হোক, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কখনোই কমবে না বরং উল্টো বাড়তেই থাকবে। যেকারণে বাজেটকেন্দ্রিক খুব বেশি একটা আগ্রহ নেই।

তিনি বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যেকারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ২টা টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাবার উপায় নেই।

জসিম উদ্দিন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমাদের স্বল্প বেতনে প্রতিদিন মাছ বা মাংস খাওয়া যায় না। কিন্তু সবজির দামও যদি এমন বাড়তি যায় তাহলে এটা খাওয়াও কমিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। কোনো সংকট নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা আসলে যাবো কোথায়? এভাবে একটা দেশ চলতে পারে?

প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দেশের ইতিহাসের ৫৪তম বাজেট এটি। এর আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এজন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনোও চড়া

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বাজারে ডিম, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অত্যন্ত চড়া। এই তিন পণ্য ছাড়াও প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই কমবেশি বাড়তি। যে কারণে বাজারে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম-আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

শুক্রবার (৭ জুন) সকালে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি কচুরমুখী ১২০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০-৮০ টাকা, দেশি গাজর ৭০-৮০ টাকা, চায়না গাজর ১২০ টাকা কাঁঠালের বিচি ৫০-৬০ টাকা, গোল বেগুন ৬০-৮০ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, পটল ৪০-৫০ টাকা, উস্তা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, শসা ১০০-১২০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০ টাকা, বরবটি ৯০-১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, কাঁকরোল ৯০-১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬৫-৭০ টাকা, ধুন্দুল ৬৫-৭০ টাকা, কুমড়া ৩০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকা কেজি। আকার ও মানভেদে অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে তেলাপিয়া। চাষের কই ২৮০-৩৫০ টাকার নিচে মিলছে না। আকার ও মানভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি। আকারভেদে শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৬০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৫০০, মলা ৫০০, কাচকি মাছ ৬০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, অন্য জাতের টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, পাঁচ মিশালি মাছ ৪০০-৫০০, বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও রুপচাঁদার কেজি ১ হাজারে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দুদিন আগেও ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া ৩২০ টাকায় বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকা কেজি দরে। তবে আগের মতোই ৩২০-৩৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে সোনালি মুরগি। সাদা কক বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায় ও সাদা লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকায়।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কয়দিন আগেও ১১০০ টাকা ছিল। তবে গরুর মাংস আগের মতোই ৭৫০-৭৮০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে আবারও উত্তাপ ডিমের বাজারে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। হালি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫০-৫৫ টাকা। যা কয়েক সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল।

বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পাবনার পেঁয়াজ ৮০ টাকা, রাজশাহীর পেঁয়াজ ৭৮-৮০ টাকা, ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৭৫-৭৬ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরিবর্তিত আছে চালের দাম। প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৬-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৫-৮০ টাকা, মোট আটাশ চাল ৫২-৫৩ টাকা, স্বর্ণা (গুটি) ৪৮-৫০ টাকা ও স্বর্ণা (পাইজাম) ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাজার করতে আসা মওদুদ আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গতকাল বাজেট হয়েছে দেখলাম, যদিও বাজেটের সাথে আমাদের মতো শ্রেণিপেশার মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ধরনের বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু থাকে না। বাজেট কম হোক বা বেশি হোক, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কখনোই কমবে না বরং উল্টো বাড়তেই থাকবে। যেকারণে বাজেটকেন্দ্রিক খুব বেশি একটা আগ্রহ নেই।

তিনি বলেন, বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী। যেকারণে মাসের খাবার খরচ বেড়েছে প্রায় অর্ধেক। কিন্তু আমাদের আয় তো বাড়েনি। ২টা টিউশনি করিয়ে আগে যা পেতাম, এখনও তাই পাই। কিন্তু যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো মানুষদের কিছুই কিনে খাবার উপায় নেই।

জসিম উদ্দিন নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমাদের স্বল্প বেতনে প্রতিদিন মাছ বা মাংস খাওয়া যায় না। কিন্তু সবজির দামও যদি এমন বাড়তি যায় তাহলে এটা খাওয়াও কমিয়ে দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাজারে সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। কোনো সংকট নেই। তারপরও ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। আমরা আসলে যাবো কোথায়? এভাবে একটা দেশ চলতে পারে?

প্রসঙ্গত, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। দেশের ইতিহাসের ৫৪তম বাজেট এটি। এর আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। এজন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।