Dhaka বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অরাজকতায় দায়ীদের বিচার হবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৫ মে) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে কর্মী যান, এটা স্বাভাবিক। সরকার আইন, সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার পরও কেউ কেউ দালাল ধরে যান। কিন্তু এবার মালয়েশিয়া পাঠানোর ক্ষেত্রে কেন এত মানুষ বিড়ম্বনায় পড়ল, সেটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যখনই সব ঠিক করা হয়, লোক পাঠানোর জন্য তখনই দেশের ও মালয়েশিয়ার এক শ্রেণির ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী তড়িঘড়ির চেষ্টা করে। ফলে জটিলতা ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাকরি ও কর্ম কিছুই ঠিক থাকে না।

সরকার প্রধান বলেন, কিছু মানুষ আছে, দ্রুত তড়িঘড়ি করে যেতে চায়। নিয়ম মানতে চান না। মালয়েশিয়ার ঘটনায় দায়ী যে বা যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মাইনুল হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। জনমুখী এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয়, যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮-২০০১ সময়ে ১০ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত ও অধিকাংশই চালু করা হয় এবং জনগণ সেবা পেতে শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং এ অবস্থা ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় নদীভাঙন ও অন্যান্য কারণে ৯৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১০ হাজার ৬২৪টি বিদ্যমান থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ‘রেভিটালাইজেশন অব কমিউনিটিজ হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ (আরসিএইচসিআইবি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরুজ্জীবিতকরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সময়ে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত, জনবল পদায়ন,ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহপূর্বক নতুন নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। পরবর্তীতে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে চতুর্থ সেক্টর (৪র্থ এইচপিএনএসপি) অপারেশনাল প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় কমিউনিটিবেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সারাদেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মোট ১৪ হাজার ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে এবং ৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে মূলত স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তকরণ, সীমিত নিরাময়মূলক সেবাসহ জরুরি ও জটিল রোগীদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ে রেফার সংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অসংক্রামক রোগসমূহ প্রাথমিকভাবে নিরূপণ এবং উচ্চতর পর্যায়ে রেফার যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্সেনিকোসিস, অটিজম ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম আরো জোরদার করা এবং একটি কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবিলার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার। সে লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট বিপর্যয়গুলো, যেমন লবণাক্ত, ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা এবং উপকূল, হাওর ও চরাঞ্চলের বন্যা বিবেচনায় নিয়ে দুর্গম অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি ‘দুর্যোগ আগে বিপর্যয় প্রভাব মূল্যায়ন’ পদ্ধতির প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার।

যার লক্ষ্য হলো, দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট বিপর্যয় সম্পর্কে জ্ঞান এবং তথ্য সংহত করার মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ডিজিটাল রিস্ক ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম (ডিআরআইপি) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রণয়নে দুর্যোগ প্রভাব মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ‘হাওর, জলাভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবহন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমবায় কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লা অঞ্চলভিত্তিক ফলিত ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল প্রণয়ন করে থাকে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে বার্ড উপকূল, হাওর ও চর এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকল্পে বার্ড বরিশাল, চট্টগ্রাম (পার্বত্য এলাকা ব্যতীত) ও সিলেট বিভাগে আঞ্চলিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে।

‘দারিদ্র্য দূরীকরণে পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন মডেল ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে টেকসই পল্লী উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জামালপুর ও রংপুর এ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলাভূমি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য হাওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকা, দুর্গম চরাঞ্চল ও বিভিন্ন দ্বীপসহ দেশব্যাপী নানা ধরনের ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে।

‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে সব দুর্গম এলাকা, যেখানে স্যাটেলাইট পরিষেবা প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়, সেখানে অপটিক্যাল ফাইবার/মাইক্রোওয়েরভিত্তিক সঞ্চালন নেটওয়ার্ক স্থাপন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে হাওরাঞ্চলে প্রায়ই ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ডব্লিউএএসএইচ) অবকাঠামোগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘এসব অঞ্চলে সাধারণত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস এবং তারা মৌলিক ডব্লিউএএসএইচ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। বন্যার কারণে ভঙ্গুরতার শিকার অন্যান্য অঞ্চলের মতো এসব অঞ্চলে বর্ধিত সংখ্যায় আবাসন ও ডব্লিউএএসএইচ অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

‘সবধরনের দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিতকরণে মানবসম্পদের স্বল্পতা বিবেচনায় নিয়ে সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বসহ), স্থানীয় পর্যায়ে শিশুদের এআরআই ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, এনজিওর উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয়, খাদ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় নারীদের/ শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি নিরসনের কার্যক্রম গ্রহণসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,’ বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয় বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন এ দর্শন ধারণ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন হাওর, নদী চর, উপকূলীয় অঞ্চল, দ্বীপ, পার্বত্য অঞ্চলসহ সকল দুর্গম এলাকার উন্নয়নে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বেশকিছু বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ৬টি হটস্পটে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে হাওর এবং আকস্মিক বন্যা কবলিত নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কারণে এ অঞ্চলে ৭টি জেলা যথা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।

যা মোকাবিলায় এ পরিকল্পনায় যেসব কৌশল নেওয়া হয়েছে তা হলো

বন্যা থেকে কৃষি ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীগুলোকে রক্ষা, সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানিসম্পদ ও নদী ব্যবস্থাপনা, টেকসই হাওর প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত পানি এবং ভূমিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং হাওরগুলোকে আপন বৈশিষ্ট্যে সংরক্ষণ ও সংস্কার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, বেড়িবাঁধ, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও উন্নত করা, বেড়িবাঁধ ও কাঠামো পুনঃস্থাপন, পুনরায় নকশা নিরূপণ ও পরিমার্জন, স্থানিক পরিকল্পনা এবং বন্যার ঝুঁকি জোনিং গ্রহণ, বন্যার সতর্কতার সময় বাড়ানো, অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন, জলাশয় এবং যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, নদী ব্যবস্থাপনা, খনন ও স্মার্ট ড্রেজিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

‘গ্রামীণ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকার জীবিকা এবং প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উন্মুক্ত জলাশয়ের স্থায়ী সংরক্ষণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে নির্ধারিত বিল ও হাওরাঞ্চলে মৎস্য ও জলজ অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে মৎস্য শিকারের ওপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা থাকবে।’

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অরাজকতায় দায়ীদের বিচার হবে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৬:২৩:০৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৫ মে) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম দিনে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন দেশে কর্মী যান, এটা স্বাভাবিক। সরকার আইন, সুযোগ-সুবিধা তৈরি করার পরও কেউ কেউ দালাল ধরে যান। কিন্তু এবার মালয়েশিয়া পাঠানোর ক্ষেত্রে কেন এত মানুষ বিড়ম্বনায় পড়ল, সেটি অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যখনই সব ঠিক করা হয়, লোক পাঠানোর জন্য তখনই দেশের ও মালয়েশিয়ার এক শ্রেণির ম্যানপাওয়ার ব্যবসায়ী তড়িঘড়ির চেষ্টা করে। ফলে জটিলতা ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চাকরি ও কর্ম কিছুই ঠিক থাকে না।

সরকার প্রধান বলেন, কিছু মানুষ আছে, দ্রুত তড়িঘড়ি করে যেতে চায়। নিয়ম মানতে চান না। মালয়েশিয়ার ঘটনায় দায়ী যে বা যারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মাইনুল হোসেন খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বর্তমান সরকারের সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সমন্বিত স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টি সেবা পাচ্ছেন। এটি জনগণ ও সরকারের যৌথ প্রয়াসে বাস্তবায়িত একটি কার্যক্রম। জনমুখী এ কার্যক্রম ১৯৯৬ সালে গৃহীত হয়, যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৮-২০০১ সময়ে ১০ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত ও অধিকাংশই চালু করা হয় এবং জনগণ সেবা পেতে শুরু করে। কিন্তু ২০০১ সালে সরকার পরিবর্তনের পর এ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং এ অবস্থা ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলমান থাকে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় নদীভাঙন ও অন্যান্য কারণে ৯৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১০ হাজার ৬২৪টি বিদ্যমান থাকে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ‘রেভিটালাইজেশন অব কমিউনিটিজ হেলথ কেয়ার ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ (আরসিএইচসিআইবি)’ প্রকল্পের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরুজ্জীবিতকরণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সময়ে নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত, জনবল পদায়ন,ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহপূর্বক নতুন নির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ক্রমে চালু করা হয়। পরবর্তীতে কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে চতুর্থ সেক্টর (৪র্থ এইচপিএনএসপি) অপারেশনাল প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় কমিউনিটিবেজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকের সমস্ত কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। সারাদেশে বর্তমানে ১৪ হাজার ২৯২টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে মোট ১৪ হাজার ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে এবং ৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে মূলত স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগ শনাক্তকরণ, সীমিত নিরাময়মূলক সেবাসহ জরুরি ও জটিল রোগীদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার জন্য উচ্চতর পর্যায়ে রেফার সংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অসংক্রামক রোগসমূহ প্রাথমিকভাবে নিরূপণ এবং উচ্চতর পর্যায়ে রেফার যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্সেনিকোসিস, অটিজম ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম আরো জোরদার করা এবং একটি কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ঝুঁকি মোকাবিলার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার। সে লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট বিপর্যয়গুলো, যেমন লবণাক্ত, ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা এবং উপকূল, হাওর ও চরাঞ্চলের বন্যা বিবেচনায় নিয়ে দুর্গম অঞ্চলে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি ‘দুর্যোগ আগে বিপর্যয় প্রভাব মূল্যায়ন’ পদ্ধতির প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার।

যার লক্ষ্য হলো, দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট বিপর্যয় সম্পর্কে জ্ঞান এবং তথ্য সংহত করার মাধ্যমে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন ডিজিটাল রিস্ক ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম (ডিআরআইপি) প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে, যার মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো প্রণয়নে দুর্যোগ প্রভাব মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, ‘হাওর, জলাভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য বহুমাত্রিক পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে গ্রামীণ পরিবহন ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমবায় কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কুমিল্লা অঞ্চলভিত্তিক ফলিত ও প্রায়োগিক গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল প্রণয়ন করে থাকে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মেয়াদে বার্ড উপকূল, হাওর ও চর এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকল্পে বার্ড বরিশাল, চট্টগ্রাম (পার্বত্য এলাকা ব্যতীত) ও সিলেট বিভাগে আঞ্চলিক একাডেমি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেবে।

‘দারিদ্র্য দূরীকরণে পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন মডেল ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বিস্তারের মাধ্যমে টেকসই পল্লী উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জামালপুর ও রংপুর এ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলাভূমি ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণের জন্য হাওর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য উন্নত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজন সর্বাগ্রে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকা, দুর্গম চরাঞ্চল ও বিভিন্ন দ্বীপসহ দেশব্যাপী নানা ধরনের ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে।

‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে সব দুর্গম এলাকা, যেখানে স্যাটেলাইট পরিষেবা প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে কার্যকর নয়, সেখানে অপটিক্যাল ফাইবার/মাইক্রোওয়েরভিত্তিক সঞ্চালন নেটওয়ার্ক স্থাপন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে হাওরাঞ্চলে প্রায়ই ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ডব্লিউএএসএইচ) অবকাঠামোগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘এসব অঞ্চলে সাধারণত দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বসবাস এবং তারা মৌলিক ডব্লিউএএসএইচ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। বন্যার কারণে ভঙ্গুরতার শিকার অন্যান্য অঞ্চলের মতো এসব অঞ্চলে বর্ধিত সংখ্যায় আবাসন ও ডব্লিউএএসএইচ অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে।

‘সবধরনের দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিতকরণে মানবসম্পদের স্বল্পতা বিবেচনায় নিয়ে সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার বহুমুখীকরণ (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বসহ), স্থানীয় পর্যায়ে শিশুদের এআরআই ও ডায়রিয়া প্রতিরোধ কার্যক্রম সম্প্রসারণ, এনজিওর উন্নয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয়, খাদ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় নারীদের/ শিশুদের পুষ্টির ঘাটতি নিরসনের কার্যক্রম গ্রহণসহ নানাবিধ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে,’ বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয় বরং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়ন এ দর্শন ধারণ করে প্রত্যন্ত অঞ্চল যেমন হাওর, নদী চর, উপকূলীয় অঞ্চল, দ্বীপ, পার্বত্য অঞ্চলসহ সকল দুর্গম এলাকার উন্নয়নে টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার বেশকিছু বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ৬টি হটস্পটে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে হাওর এবং আকস্মিক বন্যা কবলিত নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট অন্তর্ভুক্ত। দীর্ঘমেয়াদী বন্যার কারণে এ অঞ্চলে ৭টি জেলা যথা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খাদ্য নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।

যা মোকাবিলায় এ পরিকল্পনায় যেসব কৌশল নেওয়া হয়েছে তা হলো

বন্যা থেকে কৃষি ও বিপন্ন জনগোষ্ঠীগুলোকে রক্ষা, সুপেয় পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানিসম্পদ ও নদী ব্যবস্থাপনা, টেকসই হাওর প্রতিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত পানি এবং ভূমিসম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং হাওরগুলোকে আপন বৈশিষ্ট্যে সংরক্ষণ ও সংস্কার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, বেড়িবাঁধ, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও উন্নত করা, বেড়িবাঁধ ও কাঠামো পুনঃস্থাপন, পুনরায় নকশা নিরূপণ ও পরিমার্জন, স্থানিক পরিকল্পনা এবং বন্যার ঝুঁকি জোনিং গ্রহণ, বন্যার সতর্কতার সময় বাড়ানো, অপারেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন, জলাশয় এবং যোগাযোগ পুনরুদ্ধার, নদী ব্যবস্থাপনা, খনন ও স্মার্ট ড্রেজিংয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

‘গ্রামীণ জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকার জীবিকা এবং প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উন্মুক্ত জলাশয়ের স্থায়ী সংরক্ষণ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে নির্ধারিত বিল ও হাওরাঞ্চলে মৎস্য ও জলজ অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যেখানে মৎস্য শিকারের ওপরে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা থাকবে।’