নিজস্ব প্রতিবেদক :
খালে কেউ ময়লা ফেলেছে এটা প্রমাণিত হলে তাকে জরিমানা গুনতে হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এসময় তিনি আরবান রেজিলিয়েন্স এবং রিসার্চের জন্য আগামী অর্থবছরে ৫ কোটি টাকার বাজেট রাখার ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে টেকসই নগরায়ন শীর্ষক অষ্টম নগর সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ ও ২০টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কনসোর্টিয়াম আরবান আইএনজিও ফোরাম যৌথভাবে এই সংলাপ আয়োজন করেছে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার খালগুলো আমরা দখলমুক্ত করেছি। এখন সময় এসেছে খালগুলোকে দূষণমুক্ত রাখার। আমরা নিজের কথা ভেবেই সব খাল মেরে ফেলেছি, আমরা শুধু আমি’কে নিয়ে ভাবি, কেও আমরা’কে নিয়ে ভাবি না। আমাদের কথা ভাবলে সেগুলোকে নষ্ট করতাম না। মানুষ সচেতন না, ময়লা ফেললে জরিমানার ব্যবস্থা করা হলে মানুষের মাঝে কিছুটা সচেতনতা বাড়বে। সিটি কর্পোরেশন থেকে খালের আশেপাশে অনেকগুলো উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। কেউ খালে ময়লা ফেলেছে এটা প্রমাণিত হলে তাদের শনাক্ত করে তাদেরকে জরিমানা করতে হবে।
মেয়র আতিক বলেন, বিশ্বের উন্নত ছয়টি দেশ কার্বন এমিশনের জন্য দায়ী। তাদেরকেই বিশ্বের সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যুদ্ধের জন্য যা ব্যয় করছে তার ১০ শতাংশও যদি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ব্যয় করতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো এত ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতো না। তারা কথার ঝুড়ি নিয়ে ভালো ভালো সবক দেন কিন্তু তারাই আসলে মূল অপরাধী। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাঁচাতে বড় ফান্ড গঠন করতে হবে।
তিনি ডিএনসিসির কাজ নিয়ে বলেন, ‘আমরা স্মার্ট সিটি কর্পোরেশন গড়তে ২৪টি পার্ক উদ্ধার করেছি, ৫৪টি খাল দখলমুক্ত করেছি। আমাদের ট্যাক্স প্রদানে সমস্যা দূর করতে অনলাইনে করেছি। ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন ভিত্তিক করেছি। অনলাইনে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা করেছি। ‘সবার ঢাকা অ্যাপস’ চালু করেছি যেখানে কেউ সমস্যার ছবি তুলে জানাতে পারবে। ফলে আমাদের লোকেরা সাথে সাথে সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধান করে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান গ্রহণ করেছি। এডিস মশা দূর করার জন্য অভিযান চালাচ্ছি।’
তিনি সকলকে অনুরোধ করে বলেন, শুধু গাছ লাগানোই নয়, যার যার বাড়ির সামনের গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিন। এই গাছ আপনাকে অক্সিজেন দেবে, ছায়া দেবে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও আধুনিক নগর গড়তে ডিএনসিসি অনলাইন ভিত্তিক স্মার্ট সেবা বাড়াতে কাজ করছে। বর্তমান প্রজন্ম সেকেলে পদ্ধতিতে চলতে চায় না। তারা চায় অনলাইনভিত্তিক স্মার্ট সেবা। ডিএনসিসিতে ইতিমধ্যে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স গ্রহণ এবং ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। ঘরে বসেই নগরবাসী এসব সেবা পাচ্ছে। সবার ঢাকা অ্যাপ চালু করেছি। যেকেউ ডাউনলোড করে শহরের যেকোনো সমস্যা ছবি তুলে শেয়ার করে দেন, দ্রুতই সমাধান করা হবে।
মেয়র বলেন, একসময় সেবা পেতে অনেক সময় ও ভোগান্তি ছিল। আমরা সেবাগুলো সহজীকরণে গুরুত্ব দিচ্ছি। ডিএনসিসি হটলাইন চালু করেছি। ১৬১০৬ হটলাইন নম্বরে চব্বিশ ঘণ্টা যেকোনো অভিযোগ জানাতে পারছেন নগরবাসী। গতকাল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমা ও গাছ উপড়ে পড়ার তথ্য জানিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কুইক রেসপন্স টিম পৌঁছে ব্যবস্থা নিয়েছে। একদিনে ২৪ ঘণ্টায় ডিএনসিসির হটলাইনে ২৮১ নাগরিক ফোন করেছেন। তাদের সেবা দেওয়া হয়েছে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে অন স্ট্রিট স্মার্ট পার্কিং চালু করেছি। গুলশানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষামূলক চালু করেছি। আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেটির বাস্তবায়নও শুরু করেছি।
আধুনিক নগর গড়ায় জনগণকেও দায়িত্ব পালন করতে হবে উল্লেখ করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, একসময় ৫৪টি খাল ছিল ঢাকায়। সময়ের ব্যবধানে খালগুলো দখল হয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশন খালগুলো বুঝে পাওয়ার পর উদ্ধার করে খালের উন্নয়ন করছি। কিছুদিন আগে মোহাম্মদপুরে লাউতলা খালে অবৈধ ১০ তলা ভবন ভেঙে দিয়েছি। ভবন সরিয়ে নিতে ১৫ দিন সময় দেওয়ার পরেও সরিয়ে না নেওয়ায় আমরা নিলামে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। দখলদারদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ডিএনসিসি এলাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এমন ভারী বৃষ্টিতেও ডিএনসিসি এলাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো থেকে শতভাগ পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে। সারারাত ডিএনসিসির ১০টি কুইক রেসপন্স টিম এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করে ডিএনসিসি এলাকার সব প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পরই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সকলের ছুটি বাতিল করেছি। নগর ভবনের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেন্টার থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। আমি নিজে মনিটরিং সেন্টার পরিদর্শন করেছি। সার্বক্ষণিক হটলাইন নম্বর চালু রাখাসহ কুইক রেসপন্স টিম ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা কাজ করেছে। সবাই এখনো কাজ করছে এবং আবারও বৃষ্টি হলে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
ঢাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাক এর ডিরেক্টর ড. লিয়াকত আলী, কনসার্ন ওয়াল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মানিশ কুমার আগারওয়াল, গ্লোব ওয়ানের কান্ট্রি ডিরেক্টর রায়হান মাহমুদ কাদেরীসহ অনেকে।