স্পোর্টস ডেস্ক :
‘মানুষ বাঁচে তার কর্মের মধ্যে, বয়সের মধ্যে নয়’—বহুল প্রচলিত প্রবাদটা আবারও ফিরে আসছে ডিয়েগো ম্যারাডোনার কল্যাণে। ২০২০ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে যান না ফেরার দেশে। তবু ১৯৮৬ বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফরম্যান্সে এখনো বেঁচে রয়েছেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। নিলামে উঠছে তাঁর ৩৮ বছরের পুরোনো গোল্ডেন বল।
ম্যারাডোনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বলও গায়েব হয়ে গিয়েছিল হুট করে। সেই বল অবশেষে পাওয়া গেছে। ফ্রান্সের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান আগুত গতকাল জানিয়েছে, ৬ জুন প্যারিসে এটা নিলামে তোলা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের ধারণা, নিলামে এর দাম কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে সেই বছরই অমরত্ব পেয়ে গিয়েছিলেন ডিয়েগো আমারান্ডো ম্যারাডোনা। দেশকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার পথে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালের দুটি করে গোল করা সেই ম্যারাডোনাকে বিশ্বকাপে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করতে একদমই ভাবতে হয়নি নির্বাচকদের। দলকে বিশ্বকাপ জেতানো ম্যারাডোনা মেক্সিকো থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বলও।
ম্যারাডোনার সেই গোল্ডেন বলটি উধাও হয়ে গিয়েছিল ভোজবাজির মতো। অনেক বছর ধরেই কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না সেটির। ‘চুরি’ হয়ে যাওয়া সেই গোল্ডেন বলের হদিস পাওয়ার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন ম্যারাডোনা।
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির মৃত্যুর সাড়ে তিন বছর পর হারিয়ে যাওয়া সেই গোল্ডেন বল হঠাৎ করেই আবার আলোচনায়। সেটিকে যে পাওয়া গেছে! যেভাবে হারিয়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবেই হঠাৎ করে আবার হাজির হলো সেই গোল্ডেন বল। ফ্রান্সের এক নিলামকারী প্রতিষ্ঠান আগুত ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল ফিরে পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, আগামী মাসে নিলামে উঠবে সেটি।
নিলামকারী প্রতিষ্ঠান আগুতের ক্রীড়াবিশেষজ্ঞ ফ্রাঁসোয়া থিয়েরি বিবিসি স্পোর্টকে জানিয়েছেন ম্যারাডোনার গোল্ডেন বলের খবর, এটা নিয়ে কত গল্পগাথা ছড়িয়েছে। সোনার লোভে মাফিয়ারা এটিকে গলিয়ে ফেলেছে এমন কত–কী! সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে আমরা পুলিশকে জানিয়েছি এর কথা। (গোল্ডেন) বলটা এক বছর ধরেই আছে আমাদের কাছে। এটি যে সেটিই, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আমরা এটা নিয়ে অনেক গবেষণা করেছি। যারা এটি বানিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি।
থিয়েরি জানিয়েছেন কীভাবে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল তাঁদের হাতে এসেছে, ২০১৬ সালে এক লোক আরও অনেক জিনিসের সঙ্গে এটিও নিয়ে আসেন নিলামে তোলার জন্য। সেই লোকটির জানা ছিল না যে এটি এত গুরুত্বপূর্ণ। সেই লোক বেশ কটি ট্রফি নিয়ে এসেছিল। এরপর তিনি ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে জানতে এটিই সম্ভবত সেই গোল্ডেন বল। তিনি ম্যারাডোনা ও ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেছিলেন, কপাল খারাপ, সেটি সম্ভব হয়নি।
১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি গোল করেছিলেন ম্যারাডোনা। হাত দিয়ে করা প্রথম গোলটি যেমন কুখ্যাত হয়ে আছে, এরপর পাঁচজনকে কাটিয়ে করা দ্বিতীয় গোলটি ঠাঁই পেয়েছে ফুটবলের লোকগাথায়। বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সেরা গোল বিবেচনা করা হয় সেটিকে। সেই ম্যাচে যে জার্সি পরে খেলেছেন ম্যারাডোনা ও সেই ম্যাচের বল এর আগে নিলামে কোটি কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আগুতের প্রতিনিধি থিয়েরি মনে করেন, গোল্ডেন বলটাও চড়া দামে বিকোবে, এই ট্রফিটা (গোল্ডেন বল) তাঁর খেলোয়াড়ি সামর্থ্যের চূড়ান্ত প্রতীক। তিনি যে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়, সেটিরও। আমার মনে হয়, ১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ম্যাচের তাঁর জার্সি ৯ মিলিয়ন পাউন্ডে এবং সেই ম্যাচের বল ২ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে। আশা করছি, এটির দামও কয়েক মিলিয়ন উঠবে।