Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জীবিত শিশুর জন্ম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে পেরেছেন চিকিৎসকেরা। জরুরি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে মেয়ে শিশুটির জন্ম হয়েছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তারা এসব কথা জানিয়েছেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে গাজার উপত্যকার দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৯ জন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের ১৩ শিশু রয়েছে। এ হামলাতেই স্বামী, মেয়েসহ সাবরিন আল সাকানি নামের ওই ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নারী নিহত হন।

সদ্য জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুটির মায়ের নাম সাবরিন আল-সাকানি। প্রথম বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় সাকানি, তার স্বামী আহমেদ জাওদা এবং তাদের আরেক কন্যা মালাক নিহত হন। এই হামলার পর অস্ত্রোপচার করে নিহত মায়ের পেটে থাকা সন্তানকে বাঁচিয়েছেন রাফাহর কুয়েতি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

মোহাম্মদ সালামা নামের এক চিকিৎসক বলেন, জরুরি অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন) মাধ্যমে নিহত অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো হয়েছে। নবজাতকের ওজন ১ দশমিক ৪ কেজি। তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে আছে।

শিশুটিকে রাফার একটি হাসপাতালে আরও এক নবজাতকসহ ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তার বুকে সেঁটে দেওয়া টেপে লেখা আছে ‘দ্য বেবি অব দ্য মারটায়ার সাবরিন আল-সাকানি’ (শহীদ হওয়া সাবরিন আল সাকানির সন্তান)।

চিকিৎসক সালামা বলেন, শিশুটিকে তিন থেকে চার সপ্তাহ হাসপাতালে রাখতে হবে। এরপর তাকে ছাড়া যায় কি না দেখা হবে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন কার হেফাজতে তাকে দেওয়া যায়, তা বিবেচনা করা হবে। এটা অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা। এ শিশু বাঁচলেও সে এখন অনাথ।’ বলেন সালামা।

শিশুটির চাচা রামি আল-শেখ জানিয়েছেন, হামলায় নিহত হওয়া তার বোন মালাক শিশুটির নাম রাখতে চেয়েছিল ‘রুহ’। যার বাংলা অর্থ আত্মা। তিনি বলেন, ‘বোন আসছে ভেবে খুবই খুশি ছিল মালাক। শিশুটির ওজন ১.৪ কেজি (৩.০৯ পাউন্ড) এবং একটি জরুরি সি-সেকশনের মাধ্যমে কন্যাশিশুটির জন্ম হয়। চিকিৎসক মোহাম্মদ সালামা জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। শিশুটিকে অন্য একটি শিশুর সঙ্গে রাফাহ হাসপাতালের একটি ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তার বুকে টেপে লেখা ‘শহীদ সাবরীন আল-সাকানির শিশু।

শিশুটি তিন থেকে চার সপ্তাহ হাসপাতালে থাকবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক সালামা। এরপর শিশুটিকে তার পরিবার, ফুপু, চাচা না দাদা-দাদী, কার কাছে দেওয়া যায় সেটি দেখা হবে। যদিও শিশুটি বেঁচে গেছে। কিন্তু তার জন্ম হয়েছে এতিম অবস্থায়, যা সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়।

রাফাহতে হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেন, সশস্ত্র যোদ্ধাসহ বিভিন্ন জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে।

সাকার আবদেল আল নামে এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তি বলেছেন, আপনি কি নিহতদের মধ্যে একজনও পুরুষ দেখেছেন? সবাই নারী ও শিশু। আমার স্ত্রী, সন্তান এবং সকলের সঙ্গে আমার সম্পূর্ণ পরিচয় মুছে ফেলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তার পরিবারও ছিল।

মোহাম্মদ আল-বেহাইরি বলেছেন, তার মেয়ে এবং নাতি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। তিনি বলেন, “এটা খুব কষ্টের অনুভূতি, আমাদের কান্না করার শক্তিও নেই। আমাদের কী অনুভূতি হওয়া উচিত? আপনি যখন আপনার সন্তানদের হারাবেন, আপনি যখন আপনার প্রিয়জনদের হারাবেন, তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে?” গত বছর অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জীবিত শিশুর জন্ম

প্রকাশের সময় : ০২:১৭:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তানকে বাঁচাতে পেরেছেন চিকিৎসকেরা। জরুরি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে মেয়ে শিশুটির জন্ম হয়েছে। তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তারা এসব কথা জানিয়েছেন।

শনিবার (২০ এপ্রিল) রাতে গাজার উপত্যকার দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৯ জন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের ১৩ শিশু রয়েছে। এ হামলাতেই স্বামী, মেয়েসহ সাবরিন আল সাকানি নামের ওই ৩০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নারী নিহত হন।

সদ্য জন্ম নেওয়া কন্যাশিশুটির মায়ের নাম সাবরিন আল-সাকানি। প্রথম বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় সাকানি, তার স্বামী আহমেদ জাওদা এবং তাদের আরেক কন্যা মালাক নিহত হন। এই হামলার পর অস্ত্রোপচার করে নিহত মায়ের পেটে থাকা সন্তানকে বাঁচিয়েছেন রাফাহর কুয়েতি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

মোহাম্মদ সালামা নামের এক চিকিৎসক বলেন, জরুরি অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন) মাধ্যমে নিহত অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো হয়েছে। নবজাতকের ওজন ১ দশমিক ৪ কেজি। তার অবস্থা স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে আছে।

শিশুটিকে রাফার একটি হাসপাতালে আরও এক নবজাতকসহ ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তার বুকে সেঁটে দেওয়া টেপে লেখা আছে ‘দ্য বেবি অব দ্য মারটায়ার সাবরিন আল-সাকানি’ (শহীদ হওয়া সাবরিন আল সাকানির সন্তান)।

চিকিৎসক সালামা বলেন, শিশুটিকে তিন থেকে চার সপ্তাহ হাসপাতালে রাখতে হবে। এরপর তাকে ছাড়া যায় কি না দেখা হবে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন কার হেফাজতে তাকে দেওয়া যায়, তা বিবেচনা করা হবে। এটা অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা। এ শিশু বাঁচলেও সে এখন অনাথ।’ বলেন সালামা।

শিশুটির চাচা রামি আল-শেখ জানিয়েছেন, হামলায় নিহত হওয়া তার বোন মালাক শিশুটির নাম রাখতে চেয়েছিল ‘রুহ’। যার বাংলা অর্থ আত্মা। তিনি বলেন, ‘বোন আসছে ভেবে খুবই খুশি ছিল মালাক। শিশুটির ওজন ১.৪ কেজি (৩.০৯ পাউন্ড) এবং একটি জরুরি সি-সেকশনের মাধ্যমে কন্যাশিশুটির জন্ম হয়। চিকিৎসক মোহাম্মদ সালামা জানিয়েছেন, শিশুটির অবস্থা স্থিতিশীল এবং ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। শিশুটিকে অন্য একটি শিশুর সঙ্গে রাফাহ হাসপাতালের একটি ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তার বুকে টেপে লেখা ‘শহীদ সাবরীন আল-সাকানির শিশু।

শিশুটি তিন থেকে চার সপ্তাহ হাসপাতালে থাকবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক সালামা। এরপর শিশুটিকে তার পরিবার, ফুপু, চাচা না দাদা-দাদী, কার কাছে দেওয়া যায় সেটি দেখা হবে। যদিও শিশুটি বেঁচে গেছে। কিন্তু তার জন্ম হয়েছে এতিম অবস্থায়, যা সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়।

রাফাহতে হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে একজন ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র বলেন, সশস্ত্র যোদ্ধাসহ বিভিন্ন জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে।

সাকার আবদেল আল নামে এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তি বলেছেন, আপনি কি নিহতদের মধ্যে একজনও পুরুষ দেখেছেন? সবাই নারী ও শিশু। আমার স্ত্রী, সন্তান এবং সকলের সঙ্গে আমার সম্পূর্ণ পরিচয় মুছে ফেলা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে তার পরিবারও ছিল।

মোহাম্মদ আল-বেহাইরি বলেছেন, তার মেয়ে এবং নাতি এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। তিনি বলেন, “এটা খুব কষ্টের অনুভূতি, আমাদের কান্না করার শক্তিও নেই। আমাদের কী অনুভূতি হওয়া উচিত? আপনি যখন আপনার সন্তানদের হারাবেন, আপনি যখন আপনার প্রিয়জনদের হারাবেন, তখন আপনার অনুভূতি কেমন হবে?” গত বছর অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।