আজ ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জাতীয় চার নেতাকে বন্দি করে রাখা হয় পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেই বছরের ৩ নভেম্বর ঘটে ইতিহাসের আরেকটি নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড। কারাগারের সেলেই গুলি করে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।
যে সেলটিতে চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানকার রডে এখনো রয়েছে গুলির ক্ষত। সেই গুলির চিহ্ন সংরক্ষণ করে সেলটিকে বানানো হয়েছে জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর। ওই সেলের খানিকটা দূরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘর।
জাতীয় এই চার নেতার স্মরণে আজ মঙ্গলবার নানা আয়োজনে পালিত হবে জেলহত্যা দিবস। এ উপলক্ষে আজ সকাল ৬টায় ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবন ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালোব্যাজ ধারণ করা হবে।
এরপর রয়েছে বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ কর্মসূচি। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ই আগস্টের কালরাতে শহীদ ও কারাগারে নিহত জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ভার্চুয়াল স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন প্রান্ত থেকে যোগ দেবেন।
২০১০ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতিবিজড়িত কারা জাদুঘর উদ্বোধন করেন। ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা-২ অধিশাখা এক প্রজ্ঞাপনে বঙ্গবন্ধু ও চার নেতার স্মৃতি জাদুঘরকে জাতীয় জাদুঘরের শাখা হিসেবে ঘোষণা দেয়।
ঘোষণা ছিল, পুরান ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে বন্দি সরিয়ে নেওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে। ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও জাদুঘরটি উন্মুক্ত করতে পারছে না কারা কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালের ২৯ জুলাই পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সব বন্দিকে সরিয়ে নেওয়া হয় কেরানীগঞ্জের নতুন কারাগারে।
আরও পড়ুন : ফ্রান্সের সমর্থনে স্ট্যাটাস: ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন
এ ব্যাপারে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় জনসাধারণের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত করা যাচ্ছে না।
কারা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু কারা স্মৃতি জাদুঘরে তাঁর খাবার প্লেট, বিছানাপত্র, চেয়ার, টেবিলসহ নানা জিনিস রাখা আছে। জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহূত চেয়ার, টেবিল, চামচ, হাঁড়ি-পাতিল ছাড়াও রয়েছে তাঁর ম্যুরাল। বঙ্গবন্ধুর গোসলখানা ও রান্নাঘরের অংশও জাদুঘরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সামনের বকুল চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে ছয় দফার স্মারক স্তম্ভ। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো কামিনী ও সফেদাগাছও রয়েছে সেখানে। ২০১৪ সালের নভেম্বরে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে টিকিটের বিনিময়ে কারা স্মৃতি জাদুঘর দেখার সুযোগ পেয়েছিল দর্শনার্থীরা।
অন্যদিকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের প্রধান ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার পর কিছুদূর এগোলেই ডান দিকের রাস্তাটি গেছে শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘরের দিকে। ফটক পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশের পর বাঁ পাশে রয়েছে ‘নীল নদ’, যেখানে বিদেশি কয়েদিদের রাখা হতো। এর পাশেই রয়েছে ‘জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর’।
জাদুঘরে প্রবেশ ফটকের ডান পাশে রয়েছে উঁচু একটি বেদি, যেখানে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর দীর্ঘ সময় ফেলে রাখা হয়েছিল। সবুজ রং করা বেদির ওপর লাল রং করা হয়েছে, যা দিয়ে রক্তের ছাপ বোঝানো হয়েছে।
ফটক পেরিয়ে সামনে রয়েছে চার নেতার ভাস্কর্য। যার প্রতিটির নিচে লেখা রয়েছে তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও রাজনৈতিক জীবন। ভাস্কর্যগুলোর পাশেই রয়েছে তিন কক্ষের একটি ভবন, যার নামকরণ করা হয়েছে মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদ স্মৃতিকক্ষ।
এই তিন কক্ষে ছিলেন জাতীয় চার নেতা। এখানেই তাঁদের হত্যা করা হয়। ভবনের প্রথম কক্ষটি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের নামে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কক্ষটি নামকরণ করা হয়েছে যথাক্রমে এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নামে। প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে তাঁদের ব্যবহৃত আসবাব। কারাজীবনে ব্যবহৃত তাঁদের প্রায় প্রতিটি জিনিস আলাদা রাখা হয়েছে।