Dhaka শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দলের নির্দেশনা অমান্য করে বারের সভাপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন ব্যারিস্টার খোকন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দলের নির্দেশনা অমান্য করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। তবে এর আগে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার জনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ পদে আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার দল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে সত্য, কিন্তু ভোট দিয়েছেন আপনারা।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা যেমন ভোট দিয়েছে, তেমনি সাধারণ আইনজীবীরাও আমাকে ভোট দিয়েছেন। কাজেই এ পদ শুধু বিএনপি সমর্থিতদের জন্য ব্যবহার করা হবে, অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে না সেটি হতে পারে না।

খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোটাররা একটা ভোট দিতে সেই বান্দরবন থেকে ঢাকায় এসেছেন। তার কোর্ট নষ্ট করেছে। আমার জন্য এসে ভোট দিয়েছে, এজন্য আমি মনে করি তাদের মতামত নেওয়া উচিত। আপনারা কাজ করেছেন। আপনারা জানেন সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট নিয়ে বিগত কয়েক বছর অনেক ঝামেলা হয়েছে। হামলা-মামলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট হওয়া বিশাল প্রাপ্তি।

এরপর তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের কাছে মতামত চান সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন কী না। তখন হলরুমে থাকা সব আইনজীবী একবাক্যে তাকে সভাপতির দায়িত্ব নিতে সমর্থন জানান। এরপর একে একে আইনজীবী নেতারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, গোলাম মোস্তফা, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ, আইনজীবী শাহ আমদে বাদল, ভারপ্রাপ্ত আমাতুর পান্ন, বিএনপির সহআইন সম্পাদক জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ওয়াহিদুজ্জান দিপু, সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদার রাজা, সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, শরিফ ইউ আহমেদ, সমিতির সাবেক কার্যকরী কমিটির সদস্য মির্জা আল মাহমুদ, ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এসএম জুলফিকার আলী জুনুসহ শত শত আইনজীবী।

এর আগে বুধবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এবং মহাসচিব এক চিঠি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে বিরত থাকতে বলেন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিগত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্র্নিবাচনের দাবিতে ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাকে বা আপনাদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি বা আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আপনি বা আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।

ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন দলীয় ফোরামের ওই চিঠি সম্পর্কে বলেন, সংগঠনের দেয়া চিঠিতে সুপ্রিম কোর্ট বারে পুন:নির্বাচনের দাবির সঙ্গে আমি এক মত। আমি কিন্তু ওই দিনই ভোট পুনর্গণনার দাবি করেছি। সেই আবেদন তখন কমিশন গ্রহণ করেনি। পুরো প্যানেলে আমরা কমপক্ষে ১২ জন এগিয়ে ছিলাম।

পুননির্বাচনের দাবিতে আমরা এখনও অটল। আমার সভাপতি পদেও আমি পুনর্র্নিবাচন চাই। এটি হলে আমি খুশি হব। আইনজীবীরাও খুশি হবেন। আর পুনর্র্নিবাচন যদি না হয়, আমি সভাপতি পদসহ চারটি পদে বিজয় হয়েছি। এখনতো আর পদত্যাগের সুযোগ নেই।

এছাড়া শুধু এই চারপদেও পুন:নির্বাচনের সুযোগ নাই। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একজন শীর্ষ নেতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘তার ভূমিকা রহস্যজনক। আওয়ামী লীগকে পুরো প্যানেল দিতে ওই নেতা ভোট গণনার সময় বিরত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন। ভোট যাই হোক গণনা সুষ্ঠু হলে কম করে হলেও আমরা ১৩টি পদে জয়ী হতে পারতাম।

ফোরামের চিঠি প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, কে কী বলল, সেটা দেখার বিষয় নয়। আমার পরাজয়ের কোনো ইতিহাস নেই। সে সময় তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা না হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে জয়ী হতে পারতাম। দায়িত্ব না নেয়া সংক্রান্ত সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত। দায়িত্ব নেয়া বা না নেয়ার কী আছে?

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগের প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

দলের নির্দেশনা অমান্য করে বারের সভাপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন ব্যারিস্টার খোকন

প্রকাশের সময় : ০৮:৩১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

দলের নির্দেশনা অমান্য করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।

বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। তবে এর আগে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চার জনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ পদে আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার দল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে সত্য, কিন্তু ভোট দিয়েছেন আপনারা।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা যেমন ভোট দিয়েছে, তেমনি সাধারণ আইনজীবীরাও আমাকে ভোট দিয়েছেন। কাজেই এ পদ শুধু বিএনপি সমর্থিতদের জন্য ব্যবহার করা হবে, অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে না সেটি হতে পারে না।

খোকন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোটাররা একটা ভোট দিতে সেই বান্দরবন থেকে ঢাকায় এসেছেন। তার কোর্ট নষ্ট করেছে। আমার জন্য এসে ভোট দিয়েছে, এজন্য আমি মনে করি তাদের মতামত নেওয়া উচিত। আপনারা কাজ করেছেন। আপনারা জানেন সুপ্রিম কোর্ট বারের ভোট নিয়ে বিগত কয়েক বছর অনেক ঝামেলা হয়েছে। হামলা-মামলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রেসিডেন্ট হওয়া বিশাল প্রাপ্তি।

এরপর তিনি উপস্থিত আইনজীবীদের কাছে মতামত চান সভাপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন কী না। তখন হলরুমে থাকা সব আইনজীবী একবাক্যে তাকে সভাপতির দায়িত্ব নিতে সমর্থন জানান। এরপর একে একে আইনজীবী নেতারা মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি এবিএম ওয়ালিউর রহমান খান, গোলাম মোস্তফা, রফিকুল ইসলাম মেহেদী, সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ, আইনজীবী শাহ আমদে বাদল, ভারপ্রাপ্ত আমাতুর পান্ন, বিএনপির সহআইন সম্পাদক জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, নির্বাহী পরিষদের সদস্য ওয়াহিদুজ্জান দিপু, সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদার রাজা, সাবেক সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী জয়নুল আবেদীন, শরিফ ইউ আহমেদ, সমিতির সাবেক কার্যকরী কমিটির সদস্য মির্জা আল মাহমুদ, ন্যাশনাল ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এসএম জুলফিকার আলী জুনুসহ শত শত আইনজীবী।

এর আগে বুধবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এবং মহাসচিব এক চিঠি দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে বিরত থাকতে বলেন।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকদের এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিগত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০ মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্র্নিবাচনের দাবিতে ন্যায়সঙ্গত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে, আপনাকে বা আপনাদের এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনি বা আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ এর মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। আপনি বা আপনারা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।

ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন দলীয় ফোরামের ওই চিঠি সম্পর্কে বলেন, সংগঠনের দেয়া চিঠিতে সুপ্রিম কোর্ট বারে পুন:নির্বাচনের দাবির সঙ্গে আমি এক মত। আমি কিন্তু ওই দিনই ভোট পুনর্গণনার দাবি করেছি। সেই আবেদন তখন কমিশন গ্রহণ করেনি। পুরো প্যানেলে আমরা কমপক্ষে ১২ জন এগিয়ে ছিলাম।

পুননির্বাচনের দাবিতে আমরা এখনও অটল। আমার সভাপতি পদেও আমি পুনর্র্নিবাচন চাই। এটি হলে আমি খুশি হব। আইনজীবীরাও খুশি হবেন। আর পুনর্র্নিবাচন যদি না হয়, আমি সভাপতি পদসহ চারটি পদে বিজয় হয়েছি। এখনতো আর পদত্যাগের সুযোগ নেই।

এছাড়া শুধু এই চারপদেও পুন:নির্বাচনের সুযোগ নাই। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের একজন শীর্ষ নেতার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘তার ভূমিকা রহস্যজনক। আওয়ামী লীগকে পুরো প্যানেল দিতে ওই নেতা ভোট গণনার সময় বিরত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন। ভোট যাই হোক গণনা সুষ্ঠু হলে কম করে হলেও আমরা ১৩টি পদে জয়ী হতে পারতাম।

ফোরামের চিঠি প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, কে কী বলল, সেটা দেখার বিষয় নয়। আমার পরাজয়ের কোনো ইতিহাস নেই। সে সময় তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা না হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে জয়ী হতে পারতাম। দায়িত্ব না নেয়া সংক্রান্ত সংগঠনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত। দায়িত্ব নেয়া বা না নেয়ার কী আছে?

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৪টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অপরদিকে সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগের প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।