ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে ইদানিং এই প্রবনতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে ট্রেন ভ্রমণ। দেশের প্রায় প্রতিটি রুটে নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় দিন-রাত যে কোনো সময়ে ট্রেনে ঢিল ছুড়ে মারা হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় একই ঘটনা ঘটল বলাকা কমিউটার ট্রেনে। এতে একজন যাত্রীর মাথা ফেটে গেছে।
এর আগেও ঢিলের আঘাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। ঢিলে এসে চোখে লেগে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন কয়েকজন। ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে নারী ও শিশু আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
শনিবার জারিয়া থেকে ঢাকাগামী ট্রেনটি যখন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন এলাকা পার হচ্ছিল, তখন বাইরে থেকে কে বার কারা ঢিল ছুড়ে মারে। সেই ঢিল এসে লাগে এক যাত্রীর মাথায়। এতে তার মাথা ফেটে যায়।
সহযাত্রীরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে তার রক্তপাত বন্ধ করে। উক্ত যাত্রী বেশ আহত হলেও সৌভাগ্যের বিষয় হলো, মারাত্মক কিছু ঘটেনি। গত কয়েকদিন ধরেই ঢিলে মারাত্মকভাবে আহত হওয়া ব্যক্তিদের বীভৎস সব ছবি আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তারপরেও কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
বলাকা ট্রেনটিতে উপস্থিত আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা কথা বলছিলাম হঠাৎ করেই সামনের বসে থাকা লোকটা উফ বলে মাথায় হাত দিয়ে নুয়ে পড়ল। আর দেখলাম ওনার মাথায় লেগে জালনায় বাড়ি খেয়ে একটা পাথর পড়ে গেল। পাথর তুলনায় আহত কম হয়েছে। আমার সাথে স্যাভলন পানি ছিল, দিয়ে দিলাম। সাথে একজন হেক্সিসল দিয়ে দেয়ার পর রক্ত বন্ধ হয়। অবস্থা ভয়াবহ হতে পারতো। লাক ভালো যে বড় কোনো ক্ষতি হয় নাই।’
আরও পড়ুন : সিলেটে সিগনালের ভুলে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: হতাহত হয়নি
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর চাকরির লিখিত পরীক্ষা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার লিংকন সরকার (২৮)। রাতে টঙ্গীর বউবাজারে চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তের ছোড়া পাথরের আঘাতে এখন তিনি গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংঙাহীন অবস্থায় আছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে লাকসাম রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করার বিরতিহীন ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেসে ঢিল ছোড়া হয়। কেউ আহত না হলেও স্নিগ্ধা ‘জ’ বগির মাঝামাঝি একটি জানালার কাচ ভেঙে যায়।
বর্তমান সরকার রেল আধুনিকীকরণের জন্য নানারকম উদ্যোগ নিয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে ব্র্যান্ড নিউ সব কোচ। কিন্তু যাত্রীদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। বহুদিন ধরেই যাত্রীরা দাবি করে আসছেন, ট্রেনের জানালাগুলোয় নেট লাগানোর। যাতে ঢিল ভেতরে আসতে না পারে।
এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সেকশনগুলোতে পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি উঠেছে। ঢাকা-জয়দেবপুর সেকশনের ক্যান্টনমেন্ট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। টঙ্গীতে প্রতিদিন প্রায় প্রতিটি ট্রেনে ঢিল ছোড়া হচ্ছে। এছাড়া নরসিংদী, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব, ময়মনসিংহ-জামালপুর সেকশন, তেজগাঁও, পূবাইল, লাকসাম, ঈশ্বরদী ইত্যাদি স্থানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।