Dhaka সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক কুড়িগ্রাম ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকায় ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ১৪ সদস্যের সফরসঙ্গী নিয়ে তিনি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সড়কপথে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে ভুটানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

কুড়িগ্রামে রাজার সফর সঙ্গী ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজা এই জায়গাটিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। জায়গাটি পরিদর্শনে এসে তিনি তাঁর পছন্দের কথা জানিয়েছেন। যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হবে। কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়, যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা যায় সে ব্যাপারে তিনি তাগিদ দিয়েছেন।’

চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন আরও বলেন, ‘রাজা এটিও বলেছেন যে, ‘‘যখন কাজ শুরু হবে আমি নিজে আরও একবার কাজটি পরিদর্শন করতে এখানে (কুড়িগ্রামে) আসব।’’ তিনি এখানকার জায়গা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়েছেন।’

ভুটান প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে কী ধরনের শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে পারে, এমন প্রশ্নে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘রাজা বলেছেন, স্থানীয় লোকজনের চাহিদা এবং বিনিয়োগকারীদের চাহিদার সমন্বয়ে এখানে কল কারখানা গড়ে উঠবে। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক উৎপাদনশীল কারখানা গড়ে তোলা হবে।’

এর আগে ভুটানের রাজা সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতন করেন। পরে সড়কপথে দুপুর পৌনে ১২টায় কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ শেষে দুপুর দেড়টায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার, সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফরের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা।

ধরলা পাড়ের পাপ্পু মিয়াজি বলেন, আমাদের তো কুড়িগ্রামে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কাজ করতে হলে যেতে হয় ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে। এখন যদি এখানে কাজের সুযোগ হয় তাহলে তো শত শত মানুষ কাজের সুযোগ পাবে। পাশাপাশি এখানকার বাসিন্দাদের অভাব-অনটন অনেকটাই কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, ধরলা নদীর পূর্ব পাড়ে ২১৯ একর জমির ওপর জিটুজি ভিত্তিতে এ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় এ জেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফরে সোমবার (২৫ মার্চ) ঢাকায় কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানীর সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের জন্য জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম–ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ জেলা প্রশাসন ও বেজা।

জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বেজাকে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব দিকে এই খাস জমির অবস্থান। প্রয়োজনে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৪:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক কুড়িগ্রাম ধরলা সেতুর পূর্ব পাশে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম এলাকায় ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে ১৪ সদস্যের সফরসঙ্গী নিয়ে তিনি পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সড়কপথে জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে ভারত হয়ে ভুটানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন।

কুড়িগ্রামে রাজার সফর সঙ্গী ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজা এই জায়গাটিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। জায়গাটি পরিদর্শনে এসে তিনি তাঁর পছন্দের কথা জানিয়েছেন। যৌথ উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হবে। কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়, যত তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করা যায় সে ব্যাপারে তিনি তাগিদ দিয়েছেন।’

চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন আরও বলেন, ‘রাজা এটিও বলেছেন যে, ‘‘যখন কাজ শুরু হবে আমি নিজে আরও একবার কাজটি পরিদর্শন করতে এখানে (কুড়িগ্রামে) আসব।’’ তিনি এখানকার জায়গা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়েছেন।’

ভুটান প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে কী ধরনের শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে পারে, এমন প্রশ্নে শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘রাজা বলেছেন, স্থানীয় লোকজনের চাহিদা এবং বিনিয়োগকারীদের চাহিদার সমন্বয়ে এখানে কল কারখানা গড়ে উঠবে। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক উৎপাদনশীল কারখানা গড়ে তোলা হবে।’

এর আগে ভুটানের রাজা সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতন করেন। পরে সড়কপথে দুপুর পৌনে ১২টায় কুড়িগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছান। সেখানে মধ্যাহ্নভোজ শেষে দুপুর দেড়টায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার, সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ ও পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফরের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা।

ধরলা পাড়ের পাপ্পু মিয়াজি বলেন, আমাদের তো কুড়িগ্রামে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কাজ করতে হলে যেতে হয় ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে। এখন যদি এখানে কাজের সুযোগ হয় তাহলে তো শত শত মানুষ কাজের সুযোগ পাবে। পাশাপাশি এখানকার বাসিন্দাদের অভাব-অনটন অনেকটাই কমে যাবে।

প্রসঙ্গত, ধরলা নদীর পূর্ব পাড়ে ২১৯ একর জমির ওপর জিটুজি ভিত্তিতে এ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় এ জেলায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। ভুটানের রাজার বাংলাদেশ সফরে সোমবার (২৫ মার্চ) ঢাকায় কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানীর সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের জন্য জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম–ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ জেলা প্রশাসন ও বেজা।

জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বেজাকে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব দিকে এই খাস জমির অবস্থান। প্রয়োজনে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।