Dhaka বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় প্রাণহানি ৩২ হাজার ছুঁই ছুঁই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গাজায় প্রতিদিনই নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। দিনের পর দিন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর এই আগ্রাসন থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই সেখানে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) নিজেদের লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গাজায় ইসরায়েলের ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা নৃশংস আগ্রাসনে এখন অন্তত ৩১ হাজার ৯২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া আহত ফিলিন্তিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯৬ জনে।

আল জাজিরা বলছে, শহরে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে তিনটি পৃথক ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২৮ জনের জানাজা মধ্য গাজার একটি হাসপাতালের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফুটেজে দেখা গেছে, দেইর আল-বালাহ-তে দাফনের জন্য গাধার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার আগে লোকেরা লাশের সামনে জানাজার নামাজ পড়েন।

এর আগে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ হামলায় পাঁচ নারী ও ৯ শিশুসহ ১৯ জন নিহত হয়। ক্যাম্পে পৃথক হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন। নিকটবর্তী বুরেজ ক্যাম্পে হামলায় তিন নারীসহ আটজন নিহত হন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৯২৩ ফিলিস্তিনি। আর আহত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৯৬ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতোমধ্যেই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা লোকজন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে গত রোববার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের অভিযানে চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে, যেখানে কয়েক ডজন নিহত হয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটরদের বলেছেন ইসরায়েল হামাসকে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

নুসেইরাত এবং বুরেজ হলো গাজার বেশ কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ১৯৪৮ সালের দিকে আনুমানিক ৭ লাখ ফিলিস্তিনি সেইসব এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছিল বা তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল যা এখন ইসরায়েল।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

গাজায় প্রাণহানি ৩২ হাজার ছুঁই ছুঁই

প্রকাশের সময় : ১২:২৫:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

গাজায় প্রতিদিনই নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী। দিনের পর দিন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর এই আগ্রাসন থামার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই সেখানে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া গত অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) নিজেদের লাইভ আপডেটে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গাজায় ইসরায়েলের ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা নৃশংস আগ্রাসনে এখন অন্তত ৩১ হাজার ৯২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া আহত ফিলিন্তিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯৬ জনে।

আল জাজিরা বলছে, শহরে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে তিনটি পৃথক ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২৮ জনের জানাজা মধ্য গাজার একটি হাসপাতালের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফুটেজে দেখা গেছে, দেইর আল-বালাহ-তে দাফনের জন্য গাধার গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার আগে লোকেরা লাশের সামনে জানাজার নামাজ পড়েন।

এর আগে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ভয়াবহ হামলায় পাঁচ নারী ও ৯ শিশুসহ ১৯ জন নিহত হয়। ক্যাম্পে পৃথক হামলায় আরও একজন নিহত হয়েছেন। নিকটবর্তী বুরেজ ক্যাম্পে হামলায় তিন নারীসহ আটজন নিহত হন।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৯২৩ ফিলিস্তিনি। আর আহত হয়েছেন ৭৪ হাজার ৯৬ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতোমধ্যেই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা লোকজন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।

ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে গত রোববার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলের অভিযানে চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে, যেখানে কয়েক ডজন নিহত হয়েছেন। এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটরদের বলেছেন ইসরায়েল হামাসকে পরাজিত করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

নুসেইরাত এবং বুরেজ হলো গাজার বেশ কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবিরের মধ্যে অন্যতম, যেখানে ১৯৪৮ সালের দিকে আনুমানিক ৭ লাখ ফিলিস্তিনি সেইসব এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছিল বা তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছিল যা এখন ইসরায়েল।