জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সাময়িক বরখাস্ত মো. আতর আলীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) তার বাধ্যধমূলক অবসর কার্যকর হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্র জানিয়েছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে নিয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্য দেয়ায় আতর আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ সংক্রান্ত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের পিলিসি অপারেটর আতর আলী বিগত গত ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমাসের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদ সচিবালয় আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য দেন।
রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্যসব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করেন। কোনো ব্যক্তির পক্ষে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে কোনো অসত্য বক্তব্য প্রদান সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। তিনি রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে অসভ্য বক্তব্য প্রদান করেছেন, যা একজন সরকারী কর্মচারী হিসেবে অনুচিত ও অনভিপ্রেত।
যেহেতু, এ ধরনের কার্যকলাপের জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০০৫ এর ২ (চ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করে আতর আলীকে অভিযোগনামা দেয়া হয়। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আনীত অভিযোগ তদন্তের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তার বিরূদ্ধে আনীত অভিযোগে প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। তাই অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আতর আলীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত গত ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় কারণ দর্শানো নোটিশের মাধ্যমে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়। তিনি কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব প্রদান করেন। তার দাখিল করা জবাব কর্তৃপক্ষের কাছে সন্তোষজনক বিবেচিত হয়নি। তাই জাতীয় আতর আলীকে জাতীয় সংসদ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০০৫ এর বিধি ৪ (৩) (খ) মোতাবেক তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো।
এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে নিয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্য দেয়ায় সাময়িক বরখাস্ত মো. আতর আলীর শুনানি জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংসদে নিষিদ্ধ আতর আলীর লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২ সেপ্টেম্বর সংসদের উত্তর পশ্চিম ব্লকের ৭৩১ নম্বর কক্ষে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগনামার চিঠির জবাবে ব্যক্তিগত শুনানির আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। সংসদের সহকারী সচিব মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংসদের চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা সমিতির সাবেক সভাপতি আতর আলীর সংসদে যাওয়ার পরিচয়পত্রও জব্দ করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলাও হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি সংসদ নেতার কার্যালয়ে চাকরি করতেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান বলেন, আতর আলী এসেছিলেন। শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান হলে ব্যক্তিগত সাক্ষাতে কোনো কিছু বলতে চায় কিনা, সেটা একটা আনুষ্ঠানিকতা। তিনি ব্যক্তিগত কৈফিয়ত দিয়েছেন।
এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর তার পরিচয়পত্র জমা দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। সংসদের ডেপুটি সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) এস এম সিরাজুল হুদা তার আইডি কার্ড জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর আতর আলী লোক মারফত পরিচয়পত্র জমা দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারি চাকরিজীবী হয়েও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিকে নিয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্য দেয়ায় আতর আলীকে সংসদ এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। সংসদের একাধিক সূত্র ও আতর আলীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন : কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত হলেন ইরফান সেলিম
গত ৬ সেপ্টেম্বর সংসদের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ খালেদুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। সেখানে তাকে লেখা হয়, ‘আপনি গত ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ সচিবালয় আয়োজিত আলোচনা সভা দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে অসত্য বক্তব্য দেন। যেহেতু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করেন, কোনো ব্যক্তির পক্ষে তার সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো অসত্য বক্তব্য প্রদান করা দেশের সংবিধান পরিপন্থী।’
এ বিষয়ে মো. আতর আলী বলেন, ‘ওই বক্তব্য দেয়ার কারণে আমাকে সংসদ এলাকায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমি আর কী করব, কপালে যে দুর্ভোগ আছে তাই হবে। কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পরদিনই আমি জবাব দিয়েছি।’
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংসদের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনুষ্ঠানটি সংসদের শপথ কক্ষে হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভার্চুয়ালি তাতে অংশ নেন। কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আতর আলী বক্তব্য রাখেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার থাকার সময় এ ধরনের অনুষ্ঠান হয়নি বলে অসত্য তথ্য দেন আতর আলী। এছাড়া অনেক নেতিবাচক কথা বলেন তিনি, যা অসত্য। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’