নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসলা-মাসায়েল শীর্ষক এক আলোচনা সভায় হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এতে ৮ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আলোচনা সভাটির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- আইন বিভাগের ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাফওয়ান, রেজওয়ান রিফাত, শাহীন, সাকিব তূর্য, মাহাদী, কুতুবউদ্দিন। এদের মধ্যে শাহীন, রেজওয়ান ও সাকিবের অবস্থা গুরুতর। তারা সবাই ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শাহবাগ থানা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. তাওহীদুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে এ হামলা হয় বলে জানা গেছে। যদিও হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন। সুজন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, আইন বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী জোহরের নামাজ পড়তে বঙ্গবন্ধু টাউয়ারে আসেন। এসময় তারা নামাজ শেষে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মাসলা মাসায়েল সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে বাধা দেন বঙ্গবন্ধু টাউয়ার কর্মচারী সমিতির সভাপতি সিরাজুল হক।
এখানে আলোচনা করা ভিসি ও প্রক্টর থেকে নিষেধ করা আছে। এবং সেন্ট্রাল মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও রমজানের আলোচনা করা যাবে না বলে জানান তিনি। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা তাওহীদুল ইসলাম সুজন শিক্ষার্থীদের মসজিদ থেকে বের হতে বলেন। শিক্ষার্থীরা মসজিদ থেকে বের হয়ে সেন্ট্রাল মসজিদের দিকে যেতে চাইলে গেটের মুখেই তাওহীদুল ইসলাম সুজন ও তার অনুসারীরা তাদের উপর হামলা করে। তাদেরকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি দিতে থাকেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ভুক্তভোগী আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম শহীদী বলেন, আমার তাবলীগের বন্ধু ও বড় ভাইয়েরা রোজার আমল ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করতে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের মসজিদে আসি। আমরা আগেই এটা প্রচার করেছি যে আমরা রোজার ফজিলত, মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করব। কিন্তু হঠাৎ অপরিচিত কয়েকজন মসজিদে এসে আমাদের বের হতে বলে। তাছাড়া টাওয়ারের কর্মচারীরাও আমাদের চলে যেতে বললে আমরা বের হই। এসময় আমরা গেটের কাছাকাছি আসতেই ৩০ থেকে ৪০ জন আমাদের ওপর হামলা করে। পরে আমরা জানতে পারি তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ছিল। তাবলীগের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করবে, আমরা ভাবতে পারিনি।
বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের গেট দারোয়ান বলেন, শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হতে না হতেই আগে থেকে পাশে অপেক্ষা করা কিছু ছেলে তাদের উপর হামলা করে। এ সময় কয়েকজনকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আহত শিক্ষার্থী রেজওয়ান ঘটনার ৪০ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু টাওয়ার থেকে নামছেন। তার পায়ে ও কোমরে গুরুতর জখম দেখা যায়, তাছাড়া তার ঠোট ফেটে রক্ত পড়ে তা জমাট বেধে থাকতে দেখা যায়৷ তিনি বলেন, আমরা নামাজের শেষে বের হতে না হতেই আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমিসহ আরও কয়েকজন তাবলীগের বন্ধুকে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়েছে। পরে কোন উপায় না দেখে বন্ধুর সাথে বঙ্গবন্ধু টাউয়ারের একজনের বাসায় আশ্রয় নেই। আমাদের বন্ধু শাহীন আরও গুরুতর আহত। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তাওহীদুল ইসলাম সুজন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে আমি কেন মারতে যাবো। আমি শুনলাম ফেসবুক থেকে আমার নাম ছবি নিয়ে আমার নামে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে। এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে তবে আমি কিছুই জানি না। ঘটনা একেবারে বানোয়াট ও মিথ্যা। আমি অসুস্থ, আমার দাঁতে ব্যাথা আমি তাদের মারতে যাবো কেন? তাছাড়া তখন আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম।’
এ বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আইন বিভাগের একদল জামাত-শিবিরের ছেলে সেখানে সেমিনার করতে বসেছিল। কিন্তু তারা সবাইকে তাবলীগ বলে বেড়াচ্ছে। পরে সেখানে থাকা স্থানীয়রা তাদের সেমিনার করতে নিষেধ করলে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে তর্কে জড়ায় এবং একসময় তারা স্থানীয়দের ওপর হাত তোলে। এসময় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আশপাশে থাকায় তাদের থামায়।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত-শিবির ও জঙ্গি সংগঠনগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। তারা মসজিদকে রাজনীতির কেন্দ্র বানিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম রুখতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আজ থেকে ক্যাম্পাসে আরও সক্রিয় হব।
এ বিষয়ে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক সীমা জামান বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা তারা আমাকে জানায়। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রক্টর স্যারের সাথে কথা বলেছি।
আইন অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, বিষটি সম্পর্কে আমরা জেনেছি। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমরা বিষয়টি দেখব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, আহত তিনজনের অবস্থা গুরুতর। শাহিনুরকে জরুরি বিভাগের নিউরোসার্জারি ও সাকিবকে নাক, কান, গলা বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঘটনাটি শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করছে।