নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র তৈরির মূলহোতা মো: মোখলেছুর রহমান সাগরসহ ৬ জন অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
সোমবার (১১ মার্চ) রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. মোখলেছুর রহমান সাগর (৪২), তার প্রধান সহযোগী মো. তানভির আহম্মেদ (৩২), অনিক হাসান (২৮), মো. আবু ইউসুফ সৈকত (২৮), রাজু হোসেন (৩৮) ও মো. আমির হোসেন।
এসময় ১৬টি অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিল ৪টি পিস্তল, ৪ রাউন্ড কার্তুজ পিস, ৭টি পিস্তলের কাঠের ফর্মা, ১০টি ফায়ারিং ম্যাকানিজম, ৪টি ট্রিগার, ২টি পিস্তলের হ্যান্ডগ্রিপ, ২টি ড্রিল বিট, ৫টি রেত, ৫০টি স্প্রিং, ৪০টি পিস্তলের নাট বল্টু, ২টি কম্পাস, ৩টি গাজ, ৪টি ক্লাম, ২টি ড্রিল মেশিন, ২টি বাইস, ১টি বার্ণি স্কেল, ১টি মুগুর, ৪টি ক্লাম, ২০টি হেস্কো ফ্রেম, ২টি গোল্ড এলএস ফ্লাম, ১টি টুল বক্স, ১টি প্যারেন্ডার মেশিন, ১টি কাঠের যোগান, ১টি হাতুরি, ৪টি শিরিস কাগজ জব্দ করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন (র্যাব-১০)।
মো: মোখলেছুর রহমান সাগর ভারতের কলকাতায় ও আসামের শিলিগুড়িতে ভাস্কর্য ও মূর্তি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করেছিলেন। সেখানে সুকুমার নামের একজন অস্ত্র তৈরির কারিগরের সঙ্গে সখ্যতার মাধ্যমে অস্ত্র তৈরির দক্ষতা অর্জন করেন। পরে দেশে এসে স্বল্পদিনে কোটিপতি হওয়ার আশায় অবৈধ অস্ত্র তৈরির কাজ শুরু করেন চক্রটির মূলহোতা মোখলেছুর রহমান সাগর।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো.ফরিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, এই চক্রটি ভারত থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অস্ত্র নিয়ে আসত, সেগুলো বাংলাদেশে উঠতি সন্ত্রাসীদের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করত। এখন পর্যন্ত তারা মোট ১৩টি অস্ত্র দেশে নিয়ে আসে। এর মধ্যে থেকে ৯টি অস্ত্র বিক্রি করে। প্রথম চালানে ৮টি অস্ত্র এনে সবগুলা বিক্রি করে। পরে আরও ৫টি অস্ত্র এনে তা থেকে ১টি বিক্রি করে। বাকিগুলো বিক্রি করার সময় তারা গ্রেফতার হয়। তারা মূলত অধিক লাভের আশায় ভারতীয় অস্ত্র দেশে তৈরির কাজ শুরু করেছিল।
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী বেশ কিছুদিন অবৈধভাবে পিস্তলসহ বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের কাছ থেকে মোটা টাকার বিনিময়ে অস্ত্র সরবরাহ করত তারা। র্যাব এসব অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। সোমবার রাতে র্যাব-১০’র একটি দল রাজধানীর উত্তর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রটির মূলহোতা অস্ত্র তৈরি কারী মো. মোখলেছুর রহমান সাগর ও মো. তানভির আহম্মেদ গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেফতার মোখলেছুর ও তানভিরের দেওয়া তথ্যে বাড্ডা থানার হাজী আব্দুল হামিদ রোডের পূর্ব-পদরদিয়া এলাকায় একটি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র তৈরি ও ব্যবসায়ী চক্রের অপর ৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, আসামি তানভির পেশায় একজন লেজার সিএনসি ডিজাইনার। লেজার সিএনসি ডিজাইনার হওয়ায় সে যে কোন কিছু কম্পিউটারে (২ডি) নকশা অনুযায়ী অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে কাটিং করার দক্ষতা অর্জন করে। সেই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তানভির মোখলেছুর রহমান সাগরের দেওয়া নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন অস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির মাধ্যমে মোখলেছুর রহমান সাগর অস্ত্র তৈরির প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। মোখলেছুর রহমান সাগর ও তানভির অস্ত্র তৈরি করে সেগুলো অনিক ও সৈকতের নিকট হস্তান্তর করতেন। পরে অনিক ও সৈকত সেই অস্ত্র বিভিন্ন ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতেন। প্রতিটি পিস্তল/অস্ত্র ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করত। আসামি আমির ও রাজু তাদের অন্যতম অস্ত্রের ক্রেতা। আমির ও রাজু অস্ত্র কিনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন নাশকতাকারীদের কাছে অধিক মূল্যে বিক্রি করতেন। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক।