Dhaka রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় আগুনে পুড়লো কয়েক বিঘা পানের বরজ

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আগুনে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। এতে দুই হাজারেরও বেশি পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া গমসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু বাড়িও রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

রোববার (১০ মার্চ) উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানে আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে চার ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুন নেভাতে কুষ্টিয়া ও পার্শ্ববর্তী জেলার ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করেছে।

জানে আলম বলেন, পানের বরজগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে—তা এখনো জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। অনেক ফসল ও পান চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কেউ দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী জানান, আজ (রোববার) বেলা ১টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকায় একটি পানের বরজে আগুন লাগে। এ সময় রায়টা, পাথরঘাট, মিটন নগর, আড়কান্দি, মাধবপুর, গোসাই পাড়া, মালিপাড়াসহ চার কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি, পানের বরজসহ বসতভিটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেলা ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এতে কয়েক শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, আগুনে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রায়টা থেকে শুরু করে বাহাদুরপুর পর্যন্ত শত শত বিঘা ফসল ও পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের মধ্যে সেলিম, আসলাম উদ্দিন, আবুল হোসেন, আশরাফ, ইনামুল, মুক্তার, মন্টু সরদার, আমিন উদ্দিন, আবদুল হান্নান ও আমিন প্রামাণিক বলেন, আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের রাস্তা এই বরজ। আমরা অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও ধারদেনা করে পান চাষ করেছিলাম। এখন কীভাবে আমরা ঋণ শোধ করব বা আবার ক্ষতিগ্রস্ত বরজগুলো কীভাবে মেরামত করব, তা ভেবে পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সরকারিভাবে কিছুটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হলে পুনরায় আমরা বরজ তৈরি করে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।

পানচাষি আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ১২ বিঘা জমিতে পান ছিল। পানের বরজ আগুনে না পুড়ে আমার বসতবাড়ি পুড়ে গেলেও এত কষ্ট পেতাম না। বরজ থেকে আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এখন আমি পরিবারের দুই বেলা খাবার কীভাবে জোগাড় করব!’

পানচাষি রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বরজের পান দুই মাস পর বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দেব বলে দেখাশোনা করছিলাম। এখন বিয়ে তো দূরের কথা, কীভাবে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।’

ভেড়ামারা পানচাষি সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি পানচাষির কয়েক হাজার বরজ পুড়ে গেছে। দুই মাস পরেই বরজ থেকে পান ভাঙা শুরু হতো। চাষিরা এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে? কয়েকশ চাষি ১২ বিঘা, ১০, ৫ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলেন। এ ছাড়া বরজে শ্রমিকরা প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই অগ্নিকাণ্ডে তাদের পরিবারেও দুর্দশা নেমে এলো। সরকারের তরফ থেকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের জন্য সহায়তা কামনা করছি।’

ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রায়টা পাথরঘাট এলাকায় বরজে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। কিন্তু বাতাসে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। চারটি ইউনিট মিলে প্রায় চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুণ্ডু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সবকারি নিয়ম মেনে সহায়তা দেওয়া হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে বিদেশে-অনলাইনে পরে থাকতে হবে : তারেককে ইঙ্গিত করে পাটওয়ারী

কুষ্টিয়ায় আগুনে পুড়লো কয়েক বিঘা পানের বরজ

প্রকাশের সময় : ০৯:১৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : 

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আগুনে প্রায় চার কিলোমিটার এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির পানের বরজ পুড়ে গেছে। এতে দুই হাজারেরও বেশি পানচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া গমসহ অন্যান্য ফসল পুড়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু বাড়িও রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার বেশি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

রোববার (১০ মার্চ) উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

কুষ্টিয়া ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জানে আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে চার ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আগুন নেভাতে কুষ্টিয়া ও পার্শ্ববর্তী জেলার ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করেছে।

জানে আলম বলেন, পানের বরজগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে—তা এখনো জানা যায়নি।

ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। অনেক ফসল ও পান চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় কেউ দগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

এলাকাবাসী জানান, আজ (রোববার) বেলা ১টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা পাথরঘাট এলাকায় একটি পানের বরজে আগুন লাগে। এ সময় রায়টা, পাথরঘাট, মিটন নগর, আড়কান্দি, মাধবপুর, গোসাই পাড়া, মালিপাড়াসহ চার কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি, পানের বরজসহ বসতভিটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বেলা ১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এতে কয়েক শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাহাদুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহেল রানা পবন বলেন, আগুনে কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রায়টা থেকে শুরু করে বাহাদুরপুর পর্যন্ত শত শত বিঘা ফসল ও পানের বরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের মধ্যে সেলিম, আসলাম উদ্দিন, আবুল হোসেন, আশরাফ, ইনামুল, মুক্তার, মন্টু সরদার, আমিন উদ্দিন, আবদুল হান্নান ও আমিন প্রামাণিক বলেন, আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের রাস্তা এই বরজ। আমরা অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও ধারদেনা করে পান চাষ করেছিলাম। এখন কীভাবে আমরা ঋণ শোধ করব বা আবার ক্ষতিগ্রস্ত বরজগুলো কীভাবে মেরামত করব, তা ভেবে পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সরকারিভাবে কিছুটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হলে পুনরায় আমরা বরজ তৈরি করে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।

পানচাষি আসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ১২ বিঘা জমিতে পান ছিল। পানের বরজ আগুনে না পুড়ে আমার বসতবাড়ি পুড়ে গেলেও এত কষ্ট পেতাম না। বরজ থেকে আয় দিয়েই আমাদের সংসার চলে। এখন আমি পরিবারের দুই বেলা খাবার কীভাবে জোগাড় করব!’

পানচাষি রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘বরজের পান দুই মাস পর বিক্রি করেই মেয়ের বিয়ে দেব বলে দেখাশোনা করছিলাম। এখন বিয়ে তো দূরের কথা, কীভাবে সংসার চালাব ভেবে পাচ্ছি না।’

ভেড়ামারা পানচাষি সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি পানচাষির কয়েক হাজার বরজ পুড়ে গেছে। দুই মাস পরেই বরজ থেকে পান ভাঙা শুরু হতো। চাষিরা এত বড় ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবে? কয়েকশ চাষি ১২ বিঘা, ১০, ৫ বিঘা জমিতে পান চাষ করেছিলেন। এ ছাড়া বরজে শ্রমিকরা প্রতিদিন হাজিরা ভিত্তিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এই অগ্নিকাণ্ডে তাদের পরিবারেও দুর্দশা নেমে এলো। সরকারের তরফ থেকে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষিদের জন্য সহায়তা কামনা করছি।’

ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রায়টা পাথরঘাট এলাকায় বরজে আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় ভেড়ামারা ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। কিন্তু বাতাসে আগুনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর ও ঈশ্বরদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়। চারটি ইউনিট মিলে প্রায় চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুণ্ডু জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। যেসব চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সবকারি নিয়ম মেনে সহায়তা দেওয়া হবে।