আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারতে প্রথমবারের মতো নদীর তলদেশ দিয়ে মেট্রোরেল চলাচলা শুরু হলো। বুধবার (৬ মার্চ) সকালে এই মেট্রোরেলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এটিকে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোরেল নাম দেওয়া হয়েছে। সারা ভারতে নদীর তলদেশ দিয়ে ট্রেন চলার ঘটনা এই প্রথম।
এর আগে ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর এই শহরেই প্রথম মেট্রো চলাচল শুরু হয়। সেটি ছিল পাতাল রেল। প্রথম ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার এই রেলপথ চালু হওয়ার পর পরবর্তী সময় এই মেট্রো ট্রেনের চলার পথ বেড়ে ৩১ কিলোমিটার পর্যন্ত দাঁড়ায়, দমদম থেকে ধর্মতলা হয়ে একেবারে টালিগঞ্জ পর্যন্ত। পরে এই পথ টালিগঞ্জ থেকে গড়িয়া এবং দমদম থেকে বাড়িয়ে করা হয় নওয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত।
হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন থেকে গঙ্গা নদীর নিচ দিয়ে এসপ্ল্যানেড স্টেশন পর্যন্ত যাবে এই মেট্রোরেল। হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড স্টেশন পর্যন্ত দূরত্ব ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৫২০ মিটার লাইন গেছে পানির নিচ দিয়ে।
এদিন সবুজ পতাকা নাড়িয়ে এই মেট্রোরেলের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর পাশাপাশি দেশজুড়ে আরও কয়েকটি মেট্রোসেবা উদ্বোধন করেন নরেন্দ্র মোদী। উদ্বোধী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, দলের সংসদ সদস্য সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ রেলের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হুগলি নদীর তলদেশ থেকে ধর্মতলা-হাওড়া রেলপথ চালু করলেন। নদীর তলদেশের ৩৪ মিটার তল থেকে চলে গেছে এই রেলপথ। এই রেলপথ চালুর সঙ্গে সঙ্গে এই মেট্রোরেল পথের স্টেশনসংখ্যা ১৭ থেকে বেড়ে ২৬ হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদি আজ আরও দুটি মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছেন।
এই পথ দুটি হলো কবি সুভাষ-হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্প্রসারিত পথ এবং তারাতলা মাঝেরহাটের সম্প্রসারিত মেট্রো পথ। ধর্মতলা-হাওড়া মেট্রো পথের উদ্বোধনের ফলে এই হাওড়া থেকে ধর্মতলা ৮ মিনিটে এবং হাওড়া থেকে শিয়ালদাহ ১১ মিনিটে যাওয়া যাবে।
উদ্বোধনের পর স্কুলশিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজেও মেট্রোরেলে চড়েন নরেন্দ্র মোদী। ধর্মতলার এসপ্লানেট থেকে হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত ভ্রমণ করেন তিনি। এসময় মেট্রোরেলটিকে ফুল ও রঙিন কাগজ দিয়ে বিশেষভাবে সাজানো হয়।
তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এমনকি, মমতার অনুপস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কোনো প্রতিনিধিকেও এই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।
রেল প্রকল্পের উদ্বোধনের পরই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে একটি দলীয় অনুষ্ঠানে যোগদান প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ছোটবেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন কলকাতা শহরের মেট্রো দেখে সারাদেশে মেট্রোরেল তৈরি হয়েছে। ছোটবেলায় যখন প্রথম কলকাতায় এসেছিলাম, তখন মেট্রোতে চড়া নিয়ে আমার আলাদা আকর্ষণ ছিল।
‘গত ৪০ বছরে কলকাতায় মাত্র ২৮ কিলোমিটার মেট্রো ছিল। আর বিজেপি সরকারের আমলে কলকাতা মেট্রোয় অতিরিক্ত ৩১ কিলোমিটার পথ যুক্ত হয়েছে। গত ১০ বছরে বিজেপি সরকারই বাংলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন হলো হাওড়া। স্বভাবতই নতুন এই মেট্রো প্রকল্পের মাধ্যমে হাওড়া-কলকাতা-সল্টলেকের মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজ হবে। শুধু তাই নয়, নতুন এই মেট্রো রুট চালু হওয়ায় কলকাতার একাধিক মেট্রো স্টেশনের সঙ্গেও হাওড়ার যোগাযোগ স্থাপন হলো।