নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ভূমির সঙ্গে দেশের প্রতিটি নাগরিক ও দেশের সার্বিক অর্থনীতি জড়িত। ভূমি সেক্টরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি অফিসে যেন কোনো অনাহূত তৃতীয় পক্ষ কিংবা দালালের কার্যক্রম না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কাকরাইলে ‘ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি)-এর কাউন্সিল হলে ‘স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের লক্ষ্যে, বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতি কর্তৃক ভূমিমন্ত্রীর সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভূমি অফিসে সংরক্ষিত মূল্যবান দলিলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সারা দেশের ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসে নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেওয়া হবে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সীমানা জুড়ে যে ভূমি ও সমুদ্র রয়েছে সেগুলো ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায়। প্রতিটি নাগরিক ও প্রাণি এর সঙ্গে জড়িত। কারণ সবাই আমরা ভূমিতে থাকি। তাই এ মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ মন্ত্রণায়লেয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নাগরিক জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।
তিনি বলেন, ভূমির মালিক এক সময় জমিদাররা ছিলেন। এখন জমিদারের পরিবর্তে ভূমির মালিক সরকার। মূলত এখন জনগণই মালিক। কারণ এখন স্থায়ী সত্ত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে উৎখাত করা যেতো, এখন উৎখাত করা যায় না। প্রয়োজনে কিনে নেওয়া যায়, এর জন্য দাম দিতে হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তিনগুণ দামও দিচ্ছেন। সত্ত্ব চলে গেছে জনগণের হাতে। দেশের জনগণই ভূমির মালিক। অতএব এর ব্যবস্থাপনা যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে পুরো জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে আপনাদের (ভূমি কর্মকর্তা) দায়িত্ব পালনের ওপরই নির্ভর করবে, জনগণ কতটা সন্তুষ্ট থাকছেন।
তিনি বলেন, ভূমি কর্মকর্তাদের নিয়ে অতীতে যে কথাগুলো রয়েছে, সে কথাগুলো থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। আমরা স্বচ্ছতায় ফিরে যেতে চাই। অনেক পথ আমরা পার হয়েছি। অনেক পরিবর্তনও হয়েছে। নিজেদের ত্রুটির পাশাপাশি এখানে তৃতীয় পক্ষ (দালাল) রয়েছে। যারা মধ্যস্থতা করে অনেক কিছু করে।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ আরও বলেন, আমি ৬ বার চেয়ারম্যান ছিলাম। ভূমি বিষয়ে কি কারচুপি তা পুঙ্খানুপুঙ্খ জানি। আমি জমি বন্দবস্তো দিয়েছি গরিবদের। সেই গরিবদের ভুলায়ে ১৫ বছর পর পুরো জমি একটি লোক নিয়ে গেছে। এখানে সহযোগিতা করেছে নায়েব। নায়েব সহযোগিতা না করলে এটা করতে পারতো না। আমাদের এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত হোক।
তিনি বলেন, তহসিল অফিসে বিল্ডিং করা হচ্ছে। যেগুলো হয়নি, সেগুলোও দ্রুত ছাড়ার ব্যবস্থা করবো। কিন্তু আপনাদের খাস জমি রক্ষা ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। খাস জমি যদি আগে থেকে রক্ষা করতে পারি, তাহলে ১০তলা বিল্ডিং ভাঙতে হবে না। আপনারা এগিয়ে আসুন।
তিনি আরো বলেন, তৃতীয় পক্ষ (দালাল) যেনো ভূমি অফিসে না ঢুকে। আপনারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করবেন এবং বলবেন তারা যেনো দালালের কাছে না যায়।
ই-নাম জারির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানেও তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ করছে। এখানেও দুর্নীতি চলছে। এখানে সমস্যা হয়েছে, আমাদের প্রতিটি নাগরিক কম্পিউটার অপারেট করতে পারে না। যার কারণে তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে যাচ্ছে। নাগরিকরা যতদিন পর্যন্ত এটা অপারেট করতে পারবে না, ততদিন পর্যন্ত সঠিক সফলতা আসবে না। কিন্তু ১৬-১৭ কোটি নাগরিককে তো ট্রেনিং দেওয়া সম্ভব না। আমরা এজন্য মাঠ পর্যায়ে যাবো। গিয়ে সেখানে প্রচার করতে চাই, যিনি নিজে পারবেন না, তিনি যেন তহসিল অফিস বা ইউনিয়ন পরিষদ বা হাই স্কুলের কম্পিউটার অপারেটরদের সাহায্য নেন। তাহলে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খ ও গ তফসিলের মাধ্যমে ভূমির অনেক ঝামেলা নিরসন করেছেন। আমি ভূমিমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাতে চাই, ক তফসিলের ব্যাপারেও যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেন, তাহলে সমগ্র জাতি বেঁচে যাবে।
বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মো. আসাদুজ্জামানের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির কার্যকরী সভাপতি আবুল হোসেন, প্রধান উপদেষ্টা মো. ফারুক খান, সহ-সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন, মো. নাসির উদ্দিন, মো. মৌদুদুর রহমান কল্লোল ও অর্থ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে বাংলাদেশ ভূমি অফিসার্স কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















