আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া শহরের একটি বহুতল বাসভবনে বিশাল অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শিশুসহ কমপক্ষে আরও ১৪ জন। আহতদের মধ্যে ছয়জন দমকলকর্মীও রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে শহরের উপকণ্ঠে ১৪তলা একটি অ্যাপার্টমেন্টে আগুন লাগে। পরে তা সংলগ্ন ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে। দুটি ভবন থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে ছড়িয়ে যায়।
সহকারী জরুরি সেবা পরিচালক জর্জ সুয়ারেজ সাংবাদিকদের শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বলেন, আগুন ছড়িয়ে পড়ার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা ভবনের ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করার আগে বাইরের অংশ শীতল করার চেষ্টা করেন। আগুনে এ পর্যন্ত চারজনের প্রাণ গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৯ জন। ছয় অগ্নিনির্বাপণকর্মীসহ ১৩ জন আহত হয়েছেন। ভেতরে কতজন ছিলেন, তাদের কতজন উদ্ধার হয়েছেন, সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অগ্নিকাণ্ডের শিকার এই বিল্ডিংটিতে ১৩৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে এবং এতে ৪৫০ জন বাসিন্দা ছিলেন বলে বিল্ডিংটির ম্যানেজারের বরাত দিয়ে সংবাদপত্র এল পাইস জানিয়েছে। স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দমকলকর্মীরা ক্রেন ব্যবহার করে বেশ কয়েকজন বাসিন্দাকে উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে সপ্তম তলায় থাকা এক দম্পতিও রয়েছে।
একজন নারী টিভিইকে বলেন, দমকলকর্মীরা বিল্ডিংয়ের প্রথম তলায় আটকে পড়া একটি কিশোর ছেলেকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছে বলে তিনি দেখেছেন।
ভ্যালেন্সিয়া অঞ্চলের সরকারি প্রতিনিধি পিলার বার্নাবে বলেন, এটি বলা কঠিন, কত লোক নিখোঁজ। কারণ ভবনটিতে বহু ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানে বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা আরও কঠিন।
আগুন ছড়িয়ে গেলে বাসিন্দারা বারান্দায় চলে যান। তাদের কয়েকজনকে অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা উদ্ধার করেন। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালাতে ক্রেন নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
স্পেনের সামরিক জরুরি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযানে সহায়তায় তাদের সেনা পাঠায়। তাদের চিকিৎসকদল আহতদের চিকিৎসায় একটি তাঁবু স্থাপন করে।
ভবন কাঠামোতে ব্যবহার করা উপাদানের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে জানা গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণের বিষয়ে জানানো হয়নি।
ভবনের দ্বিতীয় তলায় বসবাসকারী এক ব্যক্তি টিভি চ্যানেল লা সেক্সতাকে বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের পর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তিনি বলেন, আগুনটি ১০ মিনিটের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিল্ডিংয়ের সামনের অংশে থাকা উপাদানের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও জানান তিনি।
ডেভিড হিগুয়েরা নামে একজন প্রকৌশলী এল পাইসকে বলেন, ভবনের ক্ল্যাডিং আগুনের দ্রুত বিস্তারের কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, বিল্ডিংয়ের বাইরের স্তর হিসেবে তৈরি ফোম ইনসুলেটরসহ অ্যালুমিনিয়াম প্লেটগুলো ‘তাপ এবং ঠান্ডা প্রতিরোধে খুব ভালো, তবে এগুলো খুব দাহ্য।’
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই এলাকায় একটি মাঠ হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে বলে আরটিভিই রিপোর্ট করেছে। আর আগুনের কারণে বাড়ি থেকে বাস্তুচ্যুত লোকদের হোটেলে রাখা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া পোস্টে বলেন, ভ্যালেন্সিয়ার ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তিনি শোকাহত। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।