নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে আহনাফ তাহমিন আয়হাম (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই চিকিৎসককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন। গ্রেফতার দুই চিকিৎসক হলেন, এস এম মুক্তাদির ও মাহবুব।
নিহত আহনাফ কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলেখারচর গ্রামের ফখরুল আলমের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল বড়। বর্তমানে তারা খিলগাঁও রেলগেট এলাকার একটি বাসায় থাকতেন। সে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে আহনাফকে মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টারে ভর্তি করানো হয়। খতনা করার আগে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর তার আর জ্ঞান ফেরেনি। লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার কথা থাকলেও ফুল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয় আয়হামকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আহনাফের বাবা ফখরুল আলম বলেন, আমরা চিকিৎসককে বলেছিলাম যেন ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়। তারপরও আমার ছেলের শরীরে সেটি পুশ করেন ডা. মুক্তাদির। আমি বারবার তাদের পায়ে ধরেছি। আমার ছেলেকে যেন ফুল অ্যানেস্থেসিয়া না দেওয়া হয়। কিন্তু তারা তাই দিয়েছে। আমার সন্তানকে অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় মুক্তাদিরসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবারই। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
হাতিরঝিল থানার ওসি মো. আওলাদ হোসেন জানান, শিশু আহনাফের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় ডা. এস এম মুক্তাদিরসহ তিনজনের নামে ও অজ্ঞাত আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহত আহনাফের স্বজনদের অভিযোগ, সুন্নতে খাতনার সময় অ্যানেস্থেসিয়ার ভুল প্রয়োগের কারণে শিশু আহনাফের আর জ্ঞান ফেরেনি। পরে তার মৃত্যু হয়।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টায় আহনাফকে সুন্নতে খতনা করাতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছিল। এর ঘণ্টাখানেক পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জন ডা. এস এম মুক্তাদিরের তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবার রাতে সন্তানকে সুন্নতে খতনা করাতে আসেন শিশু আহনাফের বাবা ফখরুল আলম ও মা খায়কুন নাহার চুমকি। রাত ৮টার দিকে খতনা করানোর জন্য তাকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আর ঘুম ভাঙেনি। এর ঘণ্টাখানেক পর হাসপাতালটির পক্ষ থেকে শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
অভিযুক্ত চিকিৎসক মুক্তাদির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অর্থোপেডিক বিভাগের জয়েন্ট ব্যথা, বাত ব্যথা, প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা দিতেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে অভিযান চালিয়ে সেটিতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার জন্য হাসপাতালের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু হাসপাতালটির শুধু ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে। এ কারণে তাদের অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে, গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যু হয়।