Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে বুকের রক্ত ঢেলে দেব : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে বাবা-মা ভাইদের মতো জীবন দিয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণই আমার আপনজন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে বুকের রক্ত ঢেলে দেব।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে দেশের ফেরার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরে আমি পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সেই কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিল না। নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছিল, এখনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জনসভায় আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। বাংলাদেশের জনগণই আমার আপনজন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেভাবে আমার বাবা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যেভাবে আমার মা, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন, আমিও আমার বুকের রক্ত ঢেলে দেবো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার চলার পথ, প্রতি পদে পদে বাধা। এখনো মনে পড়ে সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ আমাদের কত জন জীবন দিয়েছে। কত রকম অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেই, সংগ্রাম করে আমরা ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছি।

তিনি বলেন, কোনো জায়গা থেকেই আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের একমাত্র শক্তি মানুষের সমর্থন। মানুষের ভালোবাসাই হলো আমাদের প্রেরণা।

তিনি বলেন, ৮১ সালে দেশে ফিরে পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সেই কবর ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দিবো না।

শেখ হাসিনা বলেন, সুনির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে চললে যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। মানুষই তাদের শক্তি। মানুষের ভালোবাসাই আওয়ামী লীগের প্রেরণা। প্রয়োজনে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমিও বুকের রক্ত দিবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৮টি সংরক্ষিত নারী আসনে ১৫৫৩ জন আবেদন করেছেন। এটিকে নারী জাগরণের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেরে সকলে যোগ্য। এখান থেকে ৪৮ জন নির্ধারণ করা কঠিন কাজ হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত আমরা সরকারে আছি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে চললে যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা প্রমাণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ যে বার বার ক্ষমতায় আসবে, এটা কখনও কেউ ভাবতে পারেনি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা শিশু রাসেলকে (বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে) পর্যন্ত হত্যা করেছিল। তারা চেয়েছিল যেন ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমি বার বার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছি।’

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার দিনের ‘ঝড়-ঝাপ্টা’ থাকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘দুই চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছিল ভাইদের। আমি তো তাদের পাইনি, পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সে কবর ছুঁয়ে শপথ করেছিলাম, স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। আমার এ যাত্রাপথ সহজ ছিল না। নানান রকম ষড়যন্ত্র চলেছিল, এখনও রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করে সংগ্রাম করেছে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাই মানুষের সমর্থন আর ভালোবাসাই আমাদের প্রেরণা। আমি অসংখ্যবার মৃত্যুকে মুখোমুখি দেখেছি। আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাকে রক্ষায় অনেকে নিজের জীবন দিয়ে গেছেন।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের অবস্থা খুব খারাপ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত সমাজ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠেই আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পথচলা। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চললে যেকোনও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, আমরা সেটি করে দেখিয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে বসতে পেরেছে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এই দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আগে বিদেশের মানুষ বাংলাদেশের নাম শুনলে বলতো ভিক্ষা করে খায়, সাহায্য নিয়ে চলে। নেতিবাচক একটা ধারণা ছিল। আমার খুব কষ্ট হতো। কেন আমাদের অবহেলার চোখে দেখবে। দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে যাতে বিশ্ববাসী সম্মানের চোখে দেখে সেই উদ্যোগে এগিয়েছি। এখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়া, অগ্নিসন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাক্ষী দিতে হবে যাতে তাদের সাজা হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, এরা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু, এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু। প্রথমে তারা নির্বাচন ঠেকাবে, নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তাদের প্রভুরা আছে তাদেরও চেষ্টা ছিলো, কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণই আমাদের শক্তি। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবারই হয়েছে। আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা সরকারে এসেছি।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা পায়ের নিচে মাটি খোঁজে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না, সেটি সন্দেহ। এখনও শুনি সরকার নাকি উৎখাত করে ফেলবে। আমাদের পায়ের নিচে নাকি মাটিই নেই। এরা লম্বা লম্বা কথা বলে শুধু বিপ্লব করবে। বিপ্লব করতে করতে এরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, কেউ যেন মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস দুর্নীতি এবং কোনো রকম অপকর্ম যেন করতে পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালোভাবে আমরা কিন্তু মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এগুলো চাই না। আমরা চাই, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে দেশের উন্নতি হয়।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের সন্ত্রাসের শিকার আমাদের নেতাকর্মীরা। আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা তাদের অপকর্মের জবাব দিই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। সেটাই কিন্তু আমরা দিয়ে যাচ্ছি। যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের আমরা মূল্যায়ন করি।

এ সময় নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা চলছে।

তিনি বলেন, মেয়েদের যেখানে দিই তারা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে। একটা সময় ছিলো মা বাবা মেয়েদের বেশি পড়াতে চাইতো না। এখন মেয়েরা সব ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছে। নারী পুরুষ একসাথে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। মেয়েদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস শিক্ষা-দীক্ষায় মেয়েরা উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে দলের ৪৮টি আসনের জন্য ১৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে নারী জাগরণ বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতা জানান দেওয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়লো। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।

নারী নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়। তৃণমূলে গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকে আরও তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।

পরে প্রতিটি বিভাগে থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। বহু নারী নেতৃত্বে গড়ে তুলে তাদের সংসদে নিয়ে এসেছি। সংগঠনটা করতে হবে। কাজ করতে হবে।

নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।

তিনি বলেন, কতজনের বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর কি নিদারুন কষ্টে তাদের জীবন পার করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমাকে সেসব খবরও নিতে হয়। বহু পরিবারের মেয়েদের আমি তুলে এনেছি। তারা হারিয়ে যাচ্ছিল রাজনীতি থেকে। হারিয়ে যাচ্ছিল ইতিহাস থেকে। অথচ তাদের কষ্ট, জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতর সহ্য করে এদেশ স্বাধীন করে তারপরও তারা কিন্তু কিছু পায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আজকে সুযোগ এসেছে। কাজেই আমি তাদের মূল্যায়ন করি।

গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করার কারণে জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা রাষ্ট্র চালাতে গেলে অনেক মেধাবী লোকের দরকার হয়। আমাদের যারা মেধাবী তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এ সময় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে নিজের প্রত্যয়ের কথা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।

তিনি বলেন, ইতিহাস মুছে দিয়ে বিকৃত ইতিহাস প্রচার করা হতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা আর বিকৃত ইতিহাস প্রচার করা হয়েছিলো। কবরের মাটি ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিলো না। নানা ধরনের চক্রান্ত ছিলো। মা বাবা যেভাবে জীবন দিয়েছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে প্রয়োজনে নিজের রক্ত ঢেলে দেবো। অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। সেগুলো সহ্য করে ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছি। আমাদের শুধু একমাত্র শক্তি ছিলো মানুষের ভালোবাসা। আর মানুষের জন্যই কাজ করা।

শেখ হাসিনা বলেন, শেখ রাসেলকে হত্যা করেছিলো এই জন্য যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। কখনো গুলি, কখনো বোমা, কখনো গ্রেনেড, অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হয়েছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। সবসময় তাদের জন্যেই দোয়া করি। আওয়ামী লীগ বারাবার ক্ষমতায় আসবে, এটা কেউ ভাবতে পারেনি।

তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিশ্বে দেশের মর্যাদা বেড়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০০৮ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা। সেগুলো কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অগ্রগযাত্রায় পথ চলা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে চললে যে অভিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়, আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশ তার প্রমাণ। আগে বাংলাদেশের নাম শুনে বিশ্বে মানুষ বলতো বাংলাদেশ মানে ভিক্ষা করে চলে, দেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা ছিলো। আমার খুব কষ্ট হতো। আমরা তো বীরের জাতি। তাই প্রতিজ্ঞা ছিলো, দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের। বিশ্ববাসী যাতে বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। আজকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটি মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গণভবন মাঠে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার নারী অংশ নেন। সক্ষাৎ অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হয়। এই সভা থেকেই সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে বুকের রক্ত ঢেলে দেব : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৪:০২:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে বাবা-মা ভাইদের মতো জীবন দিয়ে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণই আমার আপনজন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনে বুকের রক্ত ঢেলে দেব।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালে দেশের ফেরার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে ফিরে আমি পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সেই কবরের মাটি ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এ স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিল না। নানা ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত চলছিল, এখনো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিশাল জনসভায় আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণই আমার পরিবার। বাংলাদেশের জনগণই আমার আপনজন। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যেভাবে আমার বাবা তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, যেভাবে আমার মা, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন, আমিও আমার বুকের রক্ত ঢেলে দেবো মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার চলার পথ, প্রতি পদে পদে বাধা। এখনো মনে পড়ে সেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ আমাদের কত জন জীবন দিয়েছে। কত রকম অত্যাচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেই, সংগ্রাম করে আমরা ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছি।

তিনি বলেন, কোনো জায়গা থেকেই আমরা কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের একমাত্র শক্তি মানুষের সমর্থন। মানুষের ভালোবাসাই হলো আমাদের প্রেরণা।

তিনি বলেন, ৮১ সালে দেশে ফিরে পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সেই কবর ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দিবো না।

শেখ হাসিনা বলেন, সুনির্দিষ্ট আদর্শ নিয়ে চললে যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ আমার পরিবার। মানুষই তাদের শক্তি। মানুষের ভালোবাসাই আওয়ামী লীগের প্রেরণা। প্রয়োজনে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমিও বুকের রক্ত দিবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪৮টি সংরক্ষিত নারী আসনে ১৫৫৩ জন আবেদন করেছেন। এটিকে নারী জাগরণের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেরে সকলে যোগ্য। এখান থেকে ৪৮ জন নির্ধারণ করা কঠিন কাজ হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত আমরা সরকারে আছি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আদর্শ নিয়ে চললে যে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় তা প্রমাণ করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ যে বার বার ক্ষমতায় আসবে, এটা কখনও কেউ ভাবতে পারেনি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে।

১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা শিশু রাসেলকে (বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে) পর্যন্ত হত্যা করেছিল। তারা চেয়েছিল যেন ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর রক্তের কেউ ক্ষমতায় আসতে না পারে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। আমি বার বার মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখেছি।’

১৯৮১ সালে দেশে ফেরার দিনের ‘ঝড়-ঝাপ্টা’ থাকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘দুই চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছিল ভাইদের। আমি তো তাদের পাইনি, পেয়েছিলাম সারি সারি কবর। সে কবর ছুঁয়ে শপথ করেছিলাম, স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। আমার এ যাত্রাপথ সহজ ছিল না। নানান রকম ষড়যন্ত্র চলেছিল, এখনও রয়েছে।’

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতন অত্যাচার সহ্য করে সংগ্রাম করেছে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তাই মানুষের সমর্থন আর ভালোবাসাই আমাদের প্রেরণা। আমি অসংখ্যবার মৃত্যুকে মুখোমুখি দেখেছি। আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাকে রক্ষায় অনেকে নিজের জীবন দিয়ে গেছেন।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের অবস্থা খুব খারাপ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত সমাজ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। সেগুলো কাটিয়ে উঠেই আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় পথচলা। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চললে যেকোনও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, আমরা সেটি করে দেখিয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ মর্যাদার আসনে বসতে পেরেছে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এই দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আগে বিদেশের মানুষ বাংলাদেশের নাম শুনলে বলতো ভিক্ষা করে খায়, সাহায্য নিয়ে চলে। নেতিবাচক একটা ধারণা ছিল। আমার খুব কষ্ট হতো। কেন আমাদের অবহেলার চোখে দেখবে। দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে যাতে বিশ্ববাসী সম্মানের চোখে দেখে সেই উদ্যোগে এগিয়েছি। এখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়া, অগ্নিসন্ত্রাস এসবের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে সাক্ষী দিতে হবে যাতে তাদের সাজা হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এদের কিন্তু ছেড়ে দেওয়া যাবে না। কারণ এরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, এরা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু, এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শত্রু। প্রথমে তারা নির্বাচন ঠেকাবে, নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। তাদের প্রভুরা আছে তাদেরও চেষ্টা ছিলো, কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণই আমাদের শক্তি। পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, সব থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন এবারই হয়েছে। আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে, আমাদের ভোট দিয়েছে, আমরা সরকারে এসেছি।

বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা পায়ের নিচে মাটি খোঁজে, তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না, সেটি সন্দেহ। এখনও শুনি সরকার নাকি উৎখাত করে ফেলবে। আমাদের পায়ের নিচে নাকি মাটিই নেই। এরা লম্বা লম্বা কথা বলে শুধু বিপ্লব করবে। বিপ্লব করতে করতে এরা ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, কেউ যেন মাদক, অগ্নিসন্ত্রাস দুর্নীতি এবং কোনো রকম অপকর্ম যেন করতে পারে, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালোভাবে আমরা কিন্তু মোকাবিলা করতে পেরেছি। আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এগুলো চাই না। আমরা চাই, দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে দেশের উন্নতি হয়।

তিনি বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তাদের সন্ত্রাসের শিকার আমাদের নেতাকর্মীরা। আমরা কখনো প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। আমরা তাদের অপকর্মের জবাব দিই দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে। সেটাই কিন্তু আমরা দিয়ে যাচ্ছি। যারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের আমরা মূল্যায়ন করি।

এ সময় নারীর ক্ষমতায়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রযাত্রা চলছে।

তিনি বলেন, মেয়েদের যেখানে দিই তারা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে। একটা সময় ছিলো মা বাবা মেয়েদের বেশি পড়াতে চাইতো না। এখন মেয়েরা সব ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা দেখাচ্ছে। নারী পুরুষ একসাথে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে। মেয়েদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস শিক্ষা-দীক্ষায় মেয়েরা উন্নত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে দলের ৪৮টি আসনের জন্য ১৫৪৯ জনের মনোনয়ন ফরম তোলাকে নারী জাগরণ বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে জানেন পাবেন না, তারপরও কেনা মানে যোগ্যতা জানান দেওয়া। সবাই-ই যোগ্য। তবে কঠিন একটা কাজ আমাদের ওপর পড়লো। এখনও যদি কেউ পেছনে পড়ে থাকে, তাদের টেনে তোলার দায়িত্ব আজকের এই নেতৃত্বের।

নারী নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠন করতে হবে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে তাদের আস্থা অর্জন করবে হবে। কেউ জায়গা করে দেয় না, জায়গা করে নিতে হয়। তৃণমূলে গিয়ে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে। যারা মনোনয়ন পাবে না, তাদের নিজেকে আরও তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।

পরে প্রতিটি বিভাগে থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পরিচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি বলেন, এত মনোনয়নপ্রত্যাশী থেকে মনোনয়ন বাছাই করা, এটা একটা কঠিন কাজ। প্রত্যেকটি বিভাগ থেকেই নিতে হবে। বহু নারী নেতৃত্বে গড়ে তুলে তাদের সংসদে নিয়ে এসেছি। সংগঠনটা করতে হবে। কাজ করতে হবে।

নির্বাচনে কেউ মনোনয়ন পাবে কেউ পাবে না, এজন্য মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবার না হলে আগামীতে হবে। একবার না পারিলে দেখ শতবার।

তিনি বলেন, কতজনের বাবাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। পঁচাত্তরের পর কি নিদারুন কষ্টে তাদের জীবন পার করতে হয়েছে সেটা আমি জানি। আমাকে সেসব খবরও নিতে হয়। বহু পরিবারের মেয়েদের আমি তুলে এনেছি। তারা হারিয়ে যাচ্ছিল রাজনীতি থেকে। হারিয়ে যাচ্ছিল ইতিহাস থেকে। অথচ তাদের কষ্ট, জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতর সহ্য করে এদেশ স্বাধীন করে তারপরও তারা কিন্তু কিছু পায়নি। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। আজকে সুযোগ এসেছে। কাজেই আমি তাদের মূল্যায়ন করি।

গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনা করার কারণে জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা রাষ্ট্র চালাতে গেলে অনেক মেধাবী লোকের দরকার হয়। আমাদের যারা মেধাবী তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এ সময় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত বলে নিজের প্রত্যয়ের কথা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা।

তিনি বলেন, ইতিহাস মুছে দিয়ে বিকৃত ইতিহাস প্রচার করা হতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা আর বিকৃত ইতিহাস প্রচার করা হয়েছিলো। কবরের মাটি ছুয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না। স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। আমার যাত্রাপথ এত সহজ ছিলো না। নানা ধরনের চক্রান্ত ছিলো। মা বাবা যেভাবে জীবন দিয়েছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে প্রয়োজনে নিজের রক্ত ঢেলে দেবো। অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। সেগুলো সহ্য করে ক্ষমতায় ফিরতে পেরেছি। আমাদের শুধু একমাত্র শক্তি ছিলো মানুষের ভালোবাসা। আর মানুষের জন্যই কাজ করা।

শেখ হাসিনা বলেন, শেখ রাসেলকে হত্যা করেছিলো এই জন্য যে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে। কখনো গুলি, কখনো বোমা, কখনো গ্রেনেড, অনেক কিছু মোকাবিলা করতে হয়েছে। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে বারবার আমাকে রক্ষা করেছে। সবসময় তাদের জন্যেই দোয়া করি। আওয়ামী লীগ বারাবার ক্ষমতায় আসবে, এটা কেউ ভাবতে পারেনি।

তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে বিশ্বে দেশের মর্যাদা বেড়েছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০০৮ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন একটি বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বিশৃঙ্খল সমাজ ব্যবস্থা। সেগুলো কাটিয়ে উঠে উন্নয়নের অগ্রগযাত্রায় পথ চলা। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে চললে যে অভিষ্ঠ লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়, আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশ তার প্রমাণ। আগে বাংলাদেশের নাম শুনে বিশ্বে মানুষ বলতো বাংলাদেশ মানে ভিক্ষা করে চলে, দেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা ছিলো। আমার খুব কষ্ট হতো। আমরা তো বীরের জাতি। তাই প্রতিজ্ঞা ছিলো, দেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তনের। বিশ্ববাসী যাতে বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। আজকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ একটি মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গণভবন মাঠে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রায় দেড় হাজার নারী অংশ নেন। সক্ষাৎ অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শুরু হয়। এই সভা থেকেই সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।