গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ইজতেমা নিয়ে কোনো ধরনের জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই। এজন্য অনলাইনেও নজরদারি রাখা হয়েছে। আর ইজতেমার দুই পক্ষ (সাদপন্থী ও জোবায়েরপন্থী) নিয়ে কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, এটা নিয়ে মুরুব্বিদের (প্রবীণ) সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।’
বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় বিশ্ব ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন শেষে র্যাবের কন্ট্রোল রুমের সামনে ব্রিফিংয়ের তিনি এ কথা বলেন।
এম খুরশীদ হোসেন বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইজতেমাকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যেন ইজতেমাকে কেন্দ্র করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সে দিকে র্যাব সতর্ক দৃষ্টি রাখছে।
র্যাব ডিজি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত। বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তায় র্যাবের পক্ষ থেকে বহুমাত্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদেশি মেহমানদের নিয়ে গত বছর যে হেনস্থার ঘটনা ঘটেছিল, এবার এ বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে। প্রথম পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষকে ইজতেমা ময়দান বুঝিয়ে দেওয়ার সময় যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু নষ্ট করে (অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন), তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইজতেমা এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক র্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, র্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ অন্যান্য ৫টি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন থাকবে।
তিনি বলেন, ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। ইজতেমা মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম দ্বারা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
র্যাব ডিজি বলেন, যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য র্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা উপলক্ষে র্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমেও টহল প্রদান করা হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে র্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
ইজতেমা স্থলে র্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি’র মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌপথে যেকোন বিশৃংখলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিকভাবে নৌ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।
র্যাব ডিজি বলেন, যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধকল্পে দুই ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইজতেমা এলাকার আশে পাশে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকাসক্ততা, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য কমাতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি বলেন, বিদেশি মুসল্লিদের খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী-কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সামনে ও আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন করে নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, চুরি-ছিনতাই, মাদক ও অজ্ঞান পার্টির কর্মকাণ্ড তীক্ষ্ণভাবে নজরে আছে। তাদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব কাজ করছে।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এম খুরশীদ হোসেন বলেন, কামার পাড়া, উত্তরার নর্থ টাওয়ার মীরের বাজারসহ সংশ্লিষ্ট সকল পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। তুরাগ নদীতে র্যাবের টহল, আকাশ পথে হেলিকপ্টার টহলসহ র্যাব স্থলে-জলে ও আকাশপথ নিরাপদ রাখতে র্যাব কাজ করছে।
এই বছর দুই ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৬ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ২ থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৯ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।