Dhaka বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মমতাজের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

নৌকা প্রতীকের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে হরিরামপুর উপজেলা চত্বরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি উপজেলা চত্বরে নির্বাচনী সহিংসতায় হামলার শিকার ফরিদের হোটেল পরিদর্শন ও মেগার চায়ের দোকানে তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আমাদের দল ক্ষমতায় থাকার পরও যদি আমাদের নেতাকর্মীর ওপর হামলা অত্যাচার চলতে থাকে তাহলে আমরা বসে থাকবো না। যারা অরাজকতা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে এবং নৌকার কর্মীদের টার্গেট করে হামলা, মারধর করছে আমরা তাদের তালিকা করছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ যদি এসব আসামিদের গ্রেপ্তার না করে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়, পুলিশ প্রশাসন যদি চুপ করে বসে থাকে তাহলে আমরাই নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামবো এবং সিংগাইর-হরিরামপুরের জনগণকে সাথে নিয়ে আসামিদের বাড়ি ঘেরাও করব, এটাই আমাদের কর্মসূচি।

মমতাজ বলেন, নির্বাচনের পর থেকে বিজয়ী জাহিদ আহমেদ টুলুর কর্মী-সমর্থকরা আমার নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন কর্মীকে মারধরসহ তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে। তার নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এসব ঘটনায় সিংগাইর ও হরিরামপুর থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও করেছি। কিন্তু আজকে পর্যন্ত জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।

কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের জন্য আমি খাটতে রাজি আছি। আমার যদি মোকাবিলা করতে হয়, রাজপথে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করব। জেল-জুলুম অত্যাচার কোনো কিছু আমাকে দাবায়ে রাখতে পারবে না। আপনাদের সাথে রাজপথে হাঁটার মানুষ আমি। আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারধর অব্যাহত থাকলে আমরা ঘরে বসে থাকব না।

প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, হরিরামপুর ও সদরের তিনটি ইউনিয়নের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার সিঙ্গাইরের দুটি ইউনিয়নে ষড়যন্ত্র করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে এনে সবেচেয়ে বেশি ভোট কাস্ট করায়। টাকা ছাড়া সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সে এমপি হতে পারে নাই।

মমতাজ বলেন, সাহস থাকলে টাকা ছাড়া মাঠে আসুক। আমি ঢাকায় বসে নির্বাচন করব। দেখা যাবে তাতে কে কত ভোট পায়? টাকা না ছড়ালে সে ৫ হাজার ভোটও পাবে না। আমি হরিরামপুরের সাধারণ জনগণসহ আমার দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। হরিরামপুরের মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলেই টাকা-পয়সা ছাড়াই আমাকে ১২ হাজার ভোট বেশি দিয়ে তা প্রমাণ করেছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করলেও মমতাজ বেগম বলেন, আমার নিজ নির্বাচনী তিনটি ইউনিয়নে অস্বাভাবিক ভোট দেখানো হয়েছে। কালো টাকা দিয়ে বিএনপির ভোট কিনে অস্বাভাবিক ভোট দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এ অস্বাভাবিক ভোটের কাছেই আমাকে পরাজিত হতে হয়েছে।

মমতাজ বেগম আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আমার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। আপনারা মনে রাখবেন, সরকার কিন্তু আওয়ামী লীগ। আর জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের দেখভালের দায়িত্বটা আমাকেই দিয়েছেন। তাই আপনারা ভয় পাবেন না।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান বিপ্লব, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হাজী ইউসুফ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন বাচ্চু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান চুন্নু, শফিকুল ইসলাম হাজারী শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহিদুর রহমান, সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য হন মমতাজ বেগম। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে ৬ হাজার ১৭১ ভোটে পরাজিত হন মমতাজ বেগম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে একটুও ছাড় নয় : নাহিদ ইসলাম

মমতাজের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম

প্রকাশের সময় : ১০:৩৩:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪

মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

নৌকা প্রতীকের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে হরিরামপুর উপজেলা চত্বরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি উপজেলা চত্বরে নির্বাচনী সহিংসতায় হামলার শিকার ফরিদের হোটেল পরিদর্শন ও মেগার চায়ের দোকানে তার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

তিনি বলেন, গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। আমাদের দল ক্ষমতায় থাকার পরও যদি আমাদের নেতাকর্মীর ওপর হামলা অত্যাচার চলতে থাকে তাহলে আমরা বসে থাকবো না। যারা অরাজকতা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করছে এবং নৌকার কর্মীদের টার্গেট করে হামলা, মারধর করছে আমরা তাদের তালিকা করছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ যদি এসব আসামিদের গ্রেপ্তার না করে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেয়, পুলিশ প্রশাসন যদি চুপ করে বসে থাকে তাহলে আমরাই নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে নামবো এবং সিংগাইর-হরিরামপুরের জনগণকে সাথে নিয়ে আসামিদের বাড়ি ঘেরাও করব, এটাই আমাদের কর্মসূচি।

মমতাজ বলেন, নির্বাচনের পর থেকে বিজয়ী জাহিদ আহমেদ টুলুর কর্মী-সমর্থকরা আমার নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন কর্মীকে মারধরসহ তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে। তার নেতাকর্মীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এসব ঘটনায় সিংগাইর ও হরিরামপুর থানায় বেশ কয়েকটি মামলাও করেছি। কিন্তু আজকে পর্যন্ত জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।

কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জনগণের জন্য আমি খাটতে রাজি আছি। আমার যদি মোকাবিলা করতে হয়, রাজপথে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করব। জেল-জুলুম অত্যাচার কোনো কিছু আমাকে দাবায়ে রাখতে পারবে না। আপনাদের সাথে রাজপথে হাঁটার মানুষ আমি। আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মারধর অব্যাহত থাকলে আমরা ঘরে বসে থাকব না।

প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, হরিরামপুর ও সদরের তিনটি ইউনিয়নের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমার সিঙ্গাইরের দুটি ইউনিয়নে ষড়যন্ত্র করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিএনপির ভোটারদের কেন্দ্রে এনে সবেচেয়ে বেশি ভোট কাস্ট করায়। টাকা ছাড়া সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সে এমপি হতে পারে নাই।

মমতাজ বলেন, সাহস থাকলে টাকা ছাড়া মাঠে আসুক। আমি ঢাকায় বসে নির্বাচন করব। দেখা যাবে তাতে কে কত ভোট পায়? টাকা না ছড়ালে সে ৫ হাজার ভোটও পাবে না। আমি হরিরামপুরের সাধারণ জনগণসহ আমার দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে কৃতজ্ঞ। হরিরামপুরের মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলেই টাকা-পয়সা ছাড়াই আমাকে ১২ হাজার ভোট বেশি দিয়ে তা প্রমাণ করেছেন।

নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করলেও মমতাজ বেগম বলেন, আমার নিজ নির্বাচনী তিনটি ইউনিয়নে অস্বাভাবিক ভোট দেখানো হয়েছে। কালো টাকা দিয়ে বিএনপির ভোট কিনে অস্বাভাবিক ভোট দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। এ অস্বাভাবিক ভোটের কাছেই আমাকে পরাজিত হতে হয়েছে।

মমতাজ বেগম আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আমার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। আপনারা মনে রাখবেন, সরকার কিন্তু আওয়ামী লীগ। আর জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের দেখভালের দায়িত্বটা আমাকেই দিয়েছেন। তাই আপনারা ভয় পাবেন না।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ও সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য মুশফিকুর রহমান খান হান্নান, জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান বিপ্লব, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক হাজী ইউসুফ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলজার হোসেন বাচ্চু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আসাদুজ্জামান চুন্নু, শফিকুল ইসলাম হাজারী শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহিদুর রহমান, সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুর রহমানসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য হন মমতাজ বেগম। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়েও নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে ৬ হাজার ১৭১ ভোটে পরাজিত হন মমতাজ বেগম।