নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে দেশটাকে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি বানিয়ে ফেলেছে। এই স্বৈরাচার সরকার দেশের জনগণকে নিয়ে পৈশাচিক খেলায় মেতে উঠেছে।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, আরও একটি একতরফা পাতানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরের মতো ক্ষমতায় থাকতে আবারও এক বিপজ্জনক খেলার আয়োজন করেছে। আবারও প্রতারণার জাল বিছানো হয়েছে।
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনা উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ ঘটনায় নৃশংস হতাহতের খবরের পরেই বিএনপির পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি। প্রকৃত দোষীদের আটক ও শাস্তি দাবি করছি। ইতোমধ্যে রেলওয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু ঘটনার তদন্ত হওয়ার আগেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান আজ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, এ ঘটনায় নাকি বিএনপি নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে ডিবি।
তিনি বলেন, তদন্ত হলো না, কিছু হলো না। এখানেই তো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এই অমানবিক নৃশংস ঘটনার পেছনে কারা দায়ী। প্রতিবারই একই ঘটনা ঘটানো হয়। ঘটনা ঘটেছে ৯টার দিকে। আর যাদের নাম বলা হয়েছে যে, এদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে, তাদর মধ্যে স্বপন ও দেলোয়ারকে সাড়ে ৬টার সময় গ্রেফতার করা হয়েছে, সাড়ে ৭টায় গ্রেফতার করা হয় মনসুরকে। কিন্তু ৯টার সময় যে আগুনের ঘটনা ঘটল, তাহলে এত নিরাপত্তার চাদরের মধ্যে পুলিশ টের পেল না এই নাশকতার তথ্য? এতে বোঝা যায় এটা যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ক্রসফায়ারের কাল্পনিক গল্পের মতো প্রতিটি নাশকতার ঘটনায় একই গল্প তৈরি থাকে। প্রতিটি নাশকতার ঘটনার পর বিএনপির ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মজ্জাগত হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেন বিএনপিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহিংস দল হিসেবে দেখাতে পারে। এটাও তাদের একটা চালাকি পরিকল্পিত কৌশল। কিন্তু সারা পৃথিবীর সবাই এখন জানে যে বাসে-ট্রেনে আগুন দেওয়ার মূল হোতা আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতা নবী উল্লাহ নবীকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, রাতে ট্রেনে আগুনের পর তারা এখন নানা কাহিনী সাজাচ্ছে, নাটক তৈরি করছে। এই গালগল্প করার জন্য এখন তারা বিএনপি নেতাদের আটক করে কনফেশন করাচ্ছে। জুলুমের ভয় দেখিয়ে এগুলো করা হচ্ছে।
রিজভী আরও বলেন, সরকারের তদন্তের ওপর জনগণের ন্যূনতম বিশ্বাস নেই। সরকারের তদন্তের টার্গেট থাকে বিএনপিকে দোষী বানানো। আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়েছি যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে যেন, নির্বাচনের কোনো অনিয়ম-কারচুপি-ভয়ভীতির খবর যেন প্রকাশ না করে।
চলমান নির্বাচনী সহিংসতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই যে প্রতিদিন নিজেরা নিজেরা মারামারি করে হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে, জীবনহানি ঘটছে, এগুলোর বিষয়ে পুলিশ কিছু বলে না কেন। এই হানাহানির মদদ কে দিচ্ছে?’
রিজভী বলেন, ইতিমধ্যে তামাশার ভোটের একদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোববারের ভোটের ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা ছবি দিয়ে পোস্ট করছে আওয়ামী লীগের লোকজন। গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের ভোটের ব্যালট পেপারে নৌকায় সিল মারা পেপার বইয়ের ছবি প্রমাণ করে কি ধরনের নির্বাচনী তামাশা মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে।
রিজভী আরও বলেন, দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে প্রকাশ্য তথাকথিত ভোট রঙ্গ বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর বিপদের অতলে। ইতিমধ্যে এই তামাশার নির্বাচন বিশ্বব্যাপী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বিরোধী দলের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের অটো পাস এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাঁশখালী থানার ওসিকে হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। সিইসিও বিএনপিকে হুমকি দিচ্ছেন।
গত ৪৮ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের গ্রেপ্তার, মামলা, আসামি এবং আহতদের তালিকা তুলে ধরে রিজভী জানান, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫৫ জন নেতাকর্মীকে, আহত হয়েছে ৬০ জন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে ১৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৩৫৫ জন নেতাকর্মীকে।