নিজস্ব প্রতিবেদক :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ নির্ভয়ে ভোট দেবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ জানুয়ারি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া হবে। ভোট দিতে কেউ বাধা দিলে তাদের প্রতিহত করা হবে।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দলটির তেজগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আস্থা ও ভরসার বাতিঘর। ইতোমধ্যে জনগণের রায়ে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। এবার নির্বাচিত হলে মোট ৫ম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন। দেশের ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।
আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত জানিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, কত আসন পাবে তা এখনই বলতে চাই না। তবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। আর ভোটের ফলই বলে দেবে কারা বিরোধী দলে যাবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এবারর নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ২৯৯টি আসনে ১ হাজার ৯৭০ জন প্রার্থী আছেন। ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। সুতরাং নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রার্থী যথাসম্ভব আচরণবিধি মেনে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। কোথাও বিচ্ছিন লঙ্ঘন হয়েছে। তারপরও প্রার্থীরা প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইতোমধ্যে অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক বাংলাদেশে এসেছেন। আমরা আশা করব, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যার সঠিক চিত্র সাংবাদিকরা তুলে ধরবেন।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে যে বা যারাই বাধা দেবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে বলেছিল। কিন্তু বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে, হরতাল দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে কেনো যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করছে না। সেটা আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায়!
তিনি বলেন, ২০১৪, ১৮ সালের নির্বাচনে কোন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। এবার ১০ জন প্রতিনিধিসহ মোট ১৬ জন এসেছেন। আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংগঠনের খুব আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে অনেক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এসেছে। তা দেখে আমরা উৎসাহিতবোধ করছি। আমরা আশা করব, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার সঠিক চিত্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন। আওয়ামী লীগের সবাইকে বলব, নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট প্রধানে সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব। কোনো রকম হামলা, সহিংসতা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। ভোটারদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসবেন ও অন্যদের উৎসাহিত করবেন।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কতগুলো আসন পাবে এবং বিরোধী দল কে হবে সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন শেষ হলে এ বিষয়টা তখনি পরিষ্কার হবে। স্পষ্ট হবে। এ মুহূর্তে এ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নাই। আমরা ইনশা আল্লাহ নির্বাচনে বিজয়ী হবো।
তিনি বলেন, কত আসন, সেটা এখন বলতে চাই না। মির্জা ফখরুলের মতো গণক হতে চাই না। ইলেকশনের রেজাল্টই বিরোধী দল কে হবে সেটা বলে দেবে।
নির্বাচন বিদেশিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইলেকশনটা হতে দেন, গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিনা বিদেশিরা বলবে।
কাদের বলেন, বিএনপি তাহলে ইলেকশনটা মোর কম্পিটিটিভ হতো। এখনও কম্পিটিটিভ হবে। বিএনপি নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ভিসা নীতি আসবে না? আমরা এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চাই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, বিএনপি নিজেই একটা ডামি দল। বাংলাদেশ ডামি দল হচ্ছে বিএনপি।
বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংস্কারের কথা বলতে গিয়ে গত ৩০ বছর কোনো দেশের সরকার তাদের সাংবিধানিক অধিকার অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে ছেড়ে দেননি।
তিনি বলেন, কনমওয়েলথ প্রতিনিধি দলকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে কমনওয়েলথের ব্যাপক আগ্রহ আমরা প্রত্যক্ষ করছি। তারা একটি ভালো নির্বাচন চায়।
তিনি বলেন, ওআইসির একটি প্রতিনিধি দল এখানে এসেছে, তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে একটি পর্যবেক্ষক টিম আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা নির্বাচন নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কাদের বলেন, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন বিষয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিত্বের প্রসংসা করেছেন।
এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কোনো অপশক্তি যেন কোনো হামলা, সহিংসতা করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পাহারায় থাকতে হবে।
ভোটারদের প্রতি সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে ও অন্যকে ভোট দিতে উৎসাহীত করতে আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
ভোট ঠেকাতে বিএনপির হরতাল প্রসঙ্গে কাদের বলেন, হরতাল হলো একটা মরিচা ধরা হাতিয়ার, এই অস্ত্র বিএনপি আগেও ব্যবহার করেছে; লাভ হয়নি। এবারও হবে না।
তিনি বলেন, কেন্দ্রে আনার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। আমাদের কর্মীরা, সব সময় দেখা যায়, ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, কেন্দ্রে আনা এটার নেতাকর্মীদের টিম আছে। তারা সে কাজ করবে। বেশির ভাগ ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসবে। এটা বিএনপির হরতাল অবরোধের সময় কয়েকদিন আগেও আমরা দেখলাম। হরতালের দিন ঢাকা শহরে যানজট আরও বেশি।
বিএনপির ঢাকা অবরোধও পালিত হয়নি বলে মনে করেন কাদের।
তিনি বলেন, গ্রাম-শহর আমি ওইভাবে পার্থক্য করি না। আমি শুধু একটা কথাই বলবো টার্নআউট সন্তোষজনক হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো রাষ্ট্রীয় প্রটোকল গ্রহণ করেননি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাগ ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা সিলেটে হযরত শাহজালাল (রা.) ও হযরত শাহ পরান (রা.)-এর মাজার জিয়ারতের পর আওয়ামী লীগের প্রথম বিভাগীয় জনসভায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি রংপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি ২৩ জেলায় ভার্চুয়াল নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম অর্থনীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৯৩ মার্কিন ডলার। শেখ হাসিনার ওয়াদা অনুযায়ী আজ দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। পাশাপাশি, দারিদ্যের হার কমে হয়েছে মাত্র ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, অতি দারিদ্র কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর ৮ মাস হয়েছে।