নিজস্ব প্রতিবেদক :
সুষ্ঠু নির্বাচনের পরও যদি কোনো দেশ নিষেধাজ্ঞা দেয় তা হবে দুঃখজনক। তবে তা মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ডিক্যাব) সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মার্কিন ভিসানীতিকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছি না আমরা। গেল কয়েক বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বহুদূর এগিয়েছে বাংলাদেশ। দাতাগ্রহীতা দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে অংশীদারত্বের পথে হাঁটছে অনেকের সঙ্গে।
নিষেধাজ্ঞা এলে সরকারের দিক থেকে নেওয়া প্রস্তুতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশে তাদের সার্বভৌমত্বের বিষয় আছে। আমরা সবাইকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাগত জানিয়েছি। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখবে, সবকিছু দেখবে। কমনওয়েলথ থেকে বড় একটি টিম আসছে। শহরে এনডিআই, আইআরআই টিম রয়েছে, ইইউর টিম রয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক পর্যবেক্ষক আসবে। আশা করছি উৎসবুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে।
আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি। নির্বাচনের পর নিষেধাজ্ঞা আসা না আসা নিয়ে এখনই অস্থিরতা বা ভীতির কোনো কারণ দেখছেন না তিনি।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, আমরা সবচেয়ে খারাপটা চিন্তা করব কেন? আমাদের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিশ্রুতি কথা; প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, কাজ করে যাচ্ছে। আমরাও আশা করছি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেজন্য আমরা সবাই কাজ করছি।
তিনি বলেন, আশা করছি, নির্বাচন ভালো হবে। আর নির্বাচনের সময় যদি কোনো রকমের সমস্যা হয়, সেটা তখন আমরা দেখব। আমরা এই মুহূর্তে মনে করছি না, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। যদি ওরকম পরিস্থিতি (নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়) আসে তখন আমরা নিশ্চই পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আগে থেকে আমরা কেন চিন্তা করব?
নির্বাচন পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা আশা করছি, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। কোনো পার্টিকুলার (নির্দিষ্ট) দেশ যদি মনে করে তারপরও নিষেধাজ্ঞার ইস্যু আসে তখন আমরা সেটা তুলব। এটার জন্য এখনই আমরা অস্থির হয়ে যাওয়া বা প্যানিক (ভীতি) সৃষ্টির কোনো কারণ দেখছি না।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, সমস্যা টুকটাক থাকবে এটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কোন দেশ কি ভাবলো বা কি করল সেটা নিয়ে আসলে এতটা দুশ্চিন্তা করার কিছু নাই। আমরা নিজেরা যদি ঠিক থাকি, নির্বাচন যদি আমরা সুষ্ঠু করতে পারি, ভোটাররা যদি ভোট দেনৃ। আমরা চাই না, নির্বাচনে সংঘাত হোক। তারপরও অতীত অভিজ্ঞাতায় আমরা দেখেছি, স্থানীয়ভাবে সংঘাত হতে। এটাকে কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সেই চেষ্টা থাকবে।
নিষেধাজ্ঞা এলে সরকারের দিক থেকে প্রস্তুতি নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রত্যেকটা দেশে তাদের সার্বভৌমত্বের ব্যাপার রয়েছে। আমরা সবাইকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাগত জানিয়েছি। তারা নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখবে, সবকিছু দেখবে। কমনওয়েলথ থেকে বড় একটা টিম আসছে। শহরে এনডিআই, আইআরআই টিম রয়েছে, ইইউর টিম রয়েছে। এছাড়া আরও অনেক পর্যবেক্ষক আসবে। আমরা আশা করছি, উৎসবুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা এখন মনোযোগ দিচ্ছি, নির্বাচন যাতে আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারি। সেজন্য কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে পারব। যুক্তরাষ্ট্রের দিকে থেকে নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বলছে। যেহেতু আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করব সেই ভয় থাকছে না। এখন আমাদের ফোকাস হচ্ছে ৭ জানুয়ারি যাতে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। তারপরে যদি কোনো সমস্যা হয় সেটা আমরা রেইজ করব।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আপাতত বাংলাদেশের লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন। কোন দেশ কী ভাবলো, কী করলো তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এছাড়াও আগামীতে বিদেশে প্রশিক্ষিত শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।
বাংলাদেশ এ অঞ্চলে ছায়াযুদ্ধ চায় না বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান। মিয়ানমারকে কেন্দ্র করে গত কয়েক মাসে ভূ-রাজনৈতিক নানা সমীকরণ দেখা যাচ্ছে। তাহলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ কোনো ছায়াযুদ্ধের আশঙ্কা করছে কি না- জানতে চাওয়া হয় পররাষ্ট্রসচিবের কাছে।
উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিনি (মন্ত্রী) কোন প্রেক্ষাপটে বলেছেন, এটি আমার জানা নেই। অবশ্যই আমরা কোনো ধরনের যুদ্ধ- তা বাস্তব হোক আর ছায়া যুদ্ধ হোক, এর বিপক্ষে আমাদের অবস্থান। মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। ভারত আমাদের প্রতিবেশী। এ দুই আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের সীমান্ত রয়েছে। সুতরাং আমাদের লক্ষ্য হলো উন্নয়ন, আরও কীভাবে উন্নয়ন করা যায়।
তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের দ্বন্দ্ব, ছায়াযুদ্ধ বা অন্য কিছু আমাদের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে। সেজন্য আমরা সবসময় চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আসছি।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বন্দ্বে না জড়ানোর প্রসঙ্গ টানেন মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমার যখন রোহিঙ্গাদের পাঠাল তখন নানা রকমের উসকানি ছিল। কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে বলা হয়েছে, কোনো দ্বন্দ্বে না জড়াতে। কোনো কিছুতে জড়াইনি। কারণ, আমরা কোনো দ্বন্দ্ব চাই না।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ আমাদের যে ভূমি, আমাদের যে ল্যান্ড বা সয়েল, সেটি আমরা কখনো ব্যবহার করতে দেব না, সেটা যদি আমাদের প্রতিবেশী, অন্য কারও বিরুদ্ধে যায় অথবা অন্য কারো স্বার্থ উদ্ধার হয়। এ বিষয়ে আমরা ক্লিয়ার। আমরা সব ধরনের যুদ্ধের বিপক্ষে।