স্পোর্টস ডেস্ক :
ওয়ানডের পর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতেও হলো ইতিহাস। প্রথমবারের মতো কিউইদের মাঠে এই ফরম্যাটে জয় পেলো বাংলাদেশ দল। নেপিয়ারে সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের মাত্র ১৩৪ রানে আটকে রেখে ৫ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
টাইগারদের এই ইতিহাস গড়ার নায়ক অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী হাসান। বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচ করে তিনি নিয়েছিলেন দুটি উইকেট। টিম শেইফার্ট আর ড্যারেল মিচেলকে বোল্ড করে কিউই ইনিংসের শুরুতেই কাঁপন ধরিয়ে দেন শেখ মেহেদী।
ব্যাট করতে নেমে ৯৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ক্রিজে আসেন শেখ মেহেদী। এবার ব্যাট হাতেও ঝলক। ১৬ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যে ইনিংসে হাঁকান একটি করে চার-ছক্কা।
তবে ম্যাচ শেষে সেরার পুরস্কার উঠেছে অলরাউন্ডিং পারফর্ম করা মেহেদী। এর আগে তিনি সর্বশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন। ফরম্যাটটিতে ১৬ মাস পর ফিরেই স্বাক্ষর রেখেছেন সেরা খেলোয়াড়ের।
প্রথম ওভারে বল করা কেমন চ্যালেঞ্জিং ম্যাচ শেষে জানতে চাওয়া হয় ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের কাছে, না, চ্যালেঞ্জিং না এটা। আমি তো টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ওভার করতে অভ্যস্ত। তবে যে কন্ডিশনেই হোক, অবশ্য চ্যালেঞ্জিংও। আমার কাজ বল করা, সেটা যখন যেখানেই হোক করতে হবে। টিম ম্যানেজমেন্ট আমার ওপর বিশ্বাস রাখছে বলেই প্রথম ওভারে বল দিয়েছে, যেকোনো কন্ডিশনেই হোক আমাকে তা করতে হবে।
ম্যাচ খেলবেন এই কথাটি কখন জানতেন এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বলেন, আগে না জানা থাকলে তো প্রথম ওভার করতাম না। জাস্ট বিফোর ওয়ার্ম আপের আগে আমাকে জানিয়েছে যে আমি খেলতেছি। ওভাবেই আমি প্রস্তুতি নিছি ততক্ষণের মধ্যেই।
বোলাররা ভালো করলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বলেও মনে করেন মেহেদী, বোলাররা যখন সাপোর্ট দেবে, দলের আত্মবিশ্বাস তখন অনেক বেড়ে যায়। শেষ ওয়ানডেতে বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। ওই মেসেজগুলো হয়তো বোলারের মধ্যে আছে যে এই কন্ডিশনে জিততে হলে বোলারদের এমন স্মার্ট বোলিং করতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ এজন্য সবাই চিন্তা করছে যে ভালো হবে। যে কয়জন বোলিং করছে সবাই ভালো করছে।
ম্যাচ জয়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিউজিল্যান্ডে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয় পেলাম। অবশ্যই এটা আমাদের দেশ, মানুষ ও দলের জন্য গর্বের ব্যাপার।
তিনি বলেন, আমরা সিরিজ জয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মাউন্ট মঙ্গানুইতে টেস্টে আমাদের অনেক ভালো সুখস্মৃতি আছে। এজন্য টি-টোয়েন্টিতে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বীতার সম্ভাবনা দেখছি পরের দুই ম্যাচে।
ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগেও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর চাওয়া ছিল সিরিজ জেতা। ওয়ানডেতে সেটি হয়নি, তবে টি-টোয়েন্টিতে তেমন কিছুর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মাহেদী। একই সঙ্গে তিনি বলছেন, অধিনায়কের বার্তা অনুপ্রাণিত করে তাদের।
মাহেদী বলেন, আমরা প্রতিটা সিরিজ যেগুলো খেলি না কেন। সবাই তো জেতার জন্য খেলে, কেউ হারার জন্য খেলে না। হয়তো ম্যাচের ওপর নির্ভর করে, উঠানামা হয়। এটা নির্ভর করে বাইশ গজে আপনি কীভাবে ব্যাটিং, বোলিং করতেছেন, প্রয়োগ কীভাবে করছেন। একটা খেলোয়াড়ও হারার জন্য এখানে আসে না, সবাই জেতার জন্য আসে।
‘অধিনায়ক তো সবসময় মোটিভেশনাল স্পিচ দিয়ে থাকে। খেলোয়াড়রা যেন সবাই আত্মবিশ্বাসী থাকে। হইতে পারে আমরা ফেইল করি, কিন্তু এই বিশ্বাসটা খেলোয়াড়দের মধ্যে কাজ করে। ’
তিনি বলেন, আমাদের পেস বোলার সবাই ভালো করছে। একটা দল জিততে হলে আসলে সবার পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ। এক দুই জনের পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ না। দল হয়ে খেলা, দলের পারফর্ম ছোটখাটো সবাই কমবেশি করে। আমরা স্পিনাররা ভালো বোলিং করেছি, পেস বোলাররা ভালো বল করেছে। এজন্য হয়তো কম রানে আটকাতে পারছি, আমরা জিতছি। বোলাররা যখন একটা ভালো সমর্থন দেবেন দলের জন্য। অবশ্যই দলের জন্য আত্মবিশ্বাস অনেক বড় হয়ে যায়। লাস্ট ম্যাচে বোলিং ইউনিটটা যে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছে। ওই মেসেজগুলো হয়তো বোলারের ভেতর আছে। এই কন্ডিশনে জিততে হলে বোলারদের এরকম স্মার্ট বোলিং করতে হবে। এজন্য সবাই চিন্তা করছে ভালোভাবে। আমাদের যে কয়জন বল করেছে, সবাই মিলে খুব ভালো বল করেছে।
মাহেদী হাসানকে নিতে হয়েছে বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। নেপিয়ারের পেস বান্ধব উইকেটে প্রথম ওভারটি তুলে দেওয়া হয় তার হাতে। এক বছরের বেশি সময় পর খেলতে নেমে দারুণ করেছেন তিনি। প্রথম ওভারে ১ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। সবমিলিয়ে ৪ ওভারে দেন কেবল ১৪ রান। প্রথম ওভার বল করা কি চ্যালেঞ্জিং ছিল?
মাহেদীর জবাব, ‘না, দেখেন চ্যালেঞ্জিং না। আমি টি-টোয়েন্টিতে তো প্রথম ওভার করতে অভ্যস্তই। এটা চ্যালেঞ্জিং না আমার কাছে সেটা যে কন্ডিশনে হোক। আমার কাজ বল করা সেটা যেখানেই হোক করতে হবে। আসলে এটা টিম ম্যানেজম্যান্ট আমার ওপর বিশ্বাস করেছে এজন্য প্রথম ওভার দিয়েছে। সেটা যে কন্ডিশনেই হোক আমাকে করতে হবে। ’
শেষদিকে ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন মাহেদী। লিটনের সঙ্গে কেবল ২৫ বলে ৪০ রানের জুটি গড়ে দলকে জিতেয়ে মাঠ ছাড়েন। নিজেও ব্যাট হাতে অপরাজিত থাকেন ১৬ বলে ১৯ রান করে। লিটনের সঙ্গে জুটিতে কী পরিকল্পনা ছিল মাহেদীর?
তিনি বলেন, যেহেতু লিটন লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করছিল, ওর আসলে উইকেট ও ম্যাচ সম্পর্কে ভালো আইডিয়া হয়ে গেছে। এই ম্যাচটা জিততে হলে আরও ছোট একটা জুটি হলে দলের জন্য ভালো। আমাদের ভালো জুটি হচ্ছিল, কিন্তু মাঝখানে দুই তিনটা ব্রেক থ্রু চলে গেছে। ওখান থেকে লিটন বলছিল ইতিবাচক থাকতে। যা হবে শেষ দুই ওভারে দেখা যাবে। শুধু এভাবে কথা বলে আমরা খেলছিলাম। ’