Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ, কি বাহে এক্কান ভোট পামু না : প্রধানমন্ত্রী

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জে নির্বাচনী জনসভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে নিজেকে এই এলাকার পুত্রবধূ পরিচয় উল্লেখ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার এটিই আবেদন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ। কী বাহেরা, একখান ভোট মুই পামু না, হামাক একখান ভোট দিবা না, হামাকে একখান ভোট দিবা?

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। আমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো। আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটা আমরা কার্যকর করবো। সামনে আমরা উন্নতসমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকতে না, একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।, একটি মানুষও বিনা চিকিৎসায় থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা আমরা ব্যবস্থা করবো।

আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসীদের নাশকতা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস করতে যারা আসবে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হবে। উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দিন-রাত পরিশ্রম করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তারা আসে ধ্বংস করতে। প্রয়োজনে বাড়ির পাশে রেললাইন থাকলে পাহারা দিতে হবে। জনগণকে প্রতিরোধ করতে হবে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কাজ করে, মানুষ খুন করে, তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ করছি।

নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ: শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসে জনগণের সেবা করতে। জাতির পিতাকে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এসেছিল লুটপাট করতে। লুটপাট, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ- এগুলোই ছিল তাদের কাজ। তারা মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত থেকেছে। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এই স্থিতিশীলতা অনেকেই চায় না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যেসব দল উঠে এেেসছে, তারা মানুষের শান্তি দেখতে পারে না। যে কারণে অগ্নিসন্ত্রাস করছে, বাসে-ট্রেনে আগুন দিচ্ছে। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে বিএনপি-জামায়াত ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে দিয়েছে। যাতে ট্রেনের বগি পড়ে গিয়ে মানুষ মারা যায়। মানুষ মারার ফাঁদ তারা তৈরি করে দিয়েছে। এর থেকে ঘৃণার আর কী থাকতে পারে। অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। মানুষের জন্য আমরা রাজনীতি করি, মানুষকে মেরে কিসের আন্দোলন, সেটাই আমার প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, মানুষের জন্য আমরা রাজনীতি করি। মানুষকে হত্যা করে, মানুষ খুন করে কী আন্দোলন? প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করতে আসবে, তাদের সাথে সাথে ধরে শাস্তি দিতে হবে। পুলিশে দিতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে আমরা কাউকে খেলতে দেব না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শুধু তাই না, ট্রেনে আগুন দিয়েছে। মা আর শিশু, মা তো সন্তান ফেলতে পারে না। মা সন্তানকে বুকে নিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এই দৃশ্য যারা দেখে সহ্য করা যায় না। ওই বিএনপি-জামায়াত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তারা মানুষ মেরে আন্দোলন করে। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষকে হত্যা করে, মানুষকে খুন করে কিসের আন্দোলন। আমাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। যারা এসব ঘটাতে আসবে তাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। পুলিশকে দিতে। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দিন রাত পরিশ্রম করে মানুষের ভাগ্য বদলাতে কাজ করছি। আর তারা আসে ধ্বংস করতে। দরকার হলে আমাদের আশেপাশে রেললাইন পাহারা দিতে হবে। আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন, কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকেরই একটা ঘর হবে। রংপুর বিভাগের প্রায় প্রতিটি উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হয়েছে। এভাবে দেশের ৩৪টি জেলা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত। বাকি জেলাগুলোও খুব অল্পসময়ে আমরা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত করে দিতে পারব।

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নৌকা অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। (উন্নয়ন) অব্যাহত থাকতে হলে কী দরকার বলেন? নৌকা মার্কায় ভোট দরকার। একমাত্র নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর নৌকা, মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।

সরকার প্রধান বলেন, ১৫ বছর আগে কী অবস্থা ছিল, আজ কী অবস্থা। যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মানুষের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করছি। দেশের মানুষকে শিক্ষিত করতে এবং প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনশক্তি গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলার দুঃখী মানুষের উন্নয়নে সারা জীবন কাজ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পীরগঞ্জের সঙ্গে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছি। ওয়াজেদ মিয়া সেতু করে দিয়েছি, তার সুফল জনগণ পাচ্ছে। রেল, সড়কসহ বিভিন্ন ব্রিজ তৈরি করে গতি এনেছি। যুবকরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা করতে পারছে। আর এসব হয়েছে নৌকাকে ভোট দেয়ার জন্য।

প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ করেছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে কারও হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। এখন হাতে হাতে মোবাইলফোন। ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আমরা তরুণদের প্রযুক্তি জ্ঞানের ব্যবস্থা করেছি। এতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবথেকে অবহেলিত রংপুর। আমি নির্বাচনে আসার পর বিভাগ হিসেবে চালু করি। রাস্তা-ঘাট কালভার্ট ব্রিজসহ সার্বিকভাবে রংপুরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা, যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। আমরা পীরগঞ্জের সাথে দিনাজপুরের সংযোগে ওয়াজেদ মিঞা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছি। যাতে পীরগঞ্জের মানুষ সহজেই দিনাজপুর যেতে পারে। রংপুর বিভাগের প্রতিটি উপজেলা ভূমিহীনমুক্ত হয়েছে। আমি এভাবে সারা বাংলাদেশ ভূমিহীনমুক্ত করতে কাজ করছি। সবচেয়ে বেশি মঙ্গাপীড়িত রংপুর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আর মঙ্গা হয়নি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা হচ্ছে নুহ নবির (আ.) নৌকা। মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। আমার মেয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দিয়ে গেলাম আপনাদের কাছে। শিরীন শারমিন চৌধুরী আমার মেয়ের মতো। নৌকায় ভোট দেওয়া মানে আমাকে ভোট দেওয়া, জয়কে ভোট দেওয়া। সে জয়-পুতুলের বোন। এসময় শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শিরীন শারমিন চৌধুরী অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে জীবনে কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। সে অত্যন্ত মেধাবী। ২০০৮ থেকে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন আপনারা। তার নেতৃত্বে পীরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আগামীতেও যেন এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে সেজন্য তাকে ভোট দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জবাসীর উদ্দেশে বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, এজন্য আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা ২০০৮ এর নির্বাচন, ২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। আপনারা এমন একজনকে ভোট দিয়েছেন, যিনি আমার কন্যার মতো। তাকে আমি এনেছি এখানে। অত্যন্ত মেধাবী, সেই সাথে পার্লামেন্টের স্পিকার। পার্লামেন্টের স্পিকার হচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরেই যার অবস্থান। আমি পার্লামেন্টের সংসদ নেতা। পার্লামেন্ট পরিচালনা করেন স্পিকার। আমি গোপালগঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রী আর এখান থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার।

‘হামাক একখান ভোটার দিবান না’

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আমি মনে করি পীরগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্পিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন পদ। রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। আপনারা কি বুঝতে পারেন, এই শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নির্বাচিত করে পীরগঞ্জবাসী কত উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এজন্য আমি পীরগঞ্জবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি যে প্রার্থী দিয়েছি, উপহার দিচ্ছি, এই যে শিরীর শারমিন চৌধুরী জীবনে কোনো দিন ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি। বিদেশ থেকেও ডিগ্রি নিয়ে এসেছে। অত্যন্ত মেধাবী। আমরা চাই সবাই শিক্ষায় দীক্ষায় এগিয়ে যাক। এই পীরগঞ্জে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই ছিল না। আমরা শিরীন শারমিনের নেতৃত্বে মেরিন একাডেমি করে দিয়েছি। অনেকগুলো ট্রেনিং একাডেমি করে দিয়েছি। এখানকার রাস্তাঘাট পাকা করে দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যায়লগুলো ঠিক করে দিয়েছি। জরাজীর্ণ ভবন নতুন করে দিয়েছি। জয়িতা ফাউন্ডেশন এই শিরীন শারমিন মন্ত্রী থাকাকালীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পীরগঞ্জ অত্যন্ত অবহেলি একটা জায়গা ছিল। সবাই পীরগঞ্জকে চেনে, পীরগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে ব্যপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমি বলব, ১৫ বছর আগের কথা চিন্তা করবেন। এই পীরগঞ্জ কেমন ছিল। আর এখন কেমন হয়েছে। গোটা রংপুর বিভাগকে দারিদ্র বিমোচন একাডেমি করে দিচ্ছি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণায় রংপুর সফরে এসে দুপুর আড়াইটার দিকে পীরগঞ্জের ফতেহপুরে স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি ‘জয়সদনে’ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছে ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন এবং শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিয়োগ করেন। এরপর মধ্যাহ্নভোজ শেষে রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে সড়কপথে সৈয়দপুর গিয়ে বাংলাদেশ বিমানযোগে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরআগে দুপুর ১২টার দিকে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনীয় জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

কুড়িগ্রামে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষ

আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ, কি বাহে এক্কান ভোট পামু না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০৭:৪৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩

রংপুর জেলা প্রতিনিধি : 

শ্বশুরবাড়ির এলাকা রংপুরের পীরগঞ্জে নির্বাচনী জনসভা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে নিজেকে এই এলাকার পুত্রবধূ পরিচয় উল্লেখ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আপনাদের কাছে আমার এটিই আবেদন, আমি আপনাদের এলাকার পুত্রবধূ। কী বাহেরা, একখান ভোট মুই পামু না, হামাক একখান ভোট দিবা না, হামাকে একখান ভোট দিবা?

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, কেউ পিছিয়ে থাকবে না। আমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাবো। আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, এটা আমরা কার্যকর করবো। সামনে আমরা উন্নতসমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। একটি মানুষও ক্ষুধার্ত থাকতে না, একটি মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।, একটি মানুষও বিনা চিকিৎসায় থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা আমরা ব্যবস্থা করবো।

আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসীদের নাশকতা প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস করতে যারা আসবে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ধরতে হবে। উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে, পুলিশে সোপর্দ করতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে খেলতে দেব না। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দিন-রাত পরিশ্রম করি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। তারা আসে ধ্বংস করতে। প্রয়োজনে বাড়ির পাশে রেললাইন থাকলে পাহারা দিতে হবে। জনগণকে প্রতিরোধ করতে হবে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কাজ করে, মানুষ খুন করে, তাদের ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ করছি।

নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ: শেখ হাসিনা

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসে জনগণের সেবা করতে। জাতির পিতাকে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা এসেছিল লুটপাট করতে। লুটপাট, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ- এগুলোই ছিল তাদের কাজ। তারা মানুষের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি।

তিনি আরো বলেন, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন। প্রতিটি নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র অব্যাহত থেকেছে। একটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এই স্থিতিশীলতা অনেকেই চায় না। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর পকেট থেকে যেসব দল উঠে এেেসছে, তারা মানুষের শান্তি দেখতে পারে না। যে কারণে অগ্নিসন্ত্রাস করছে, বাসে-ট্রেনে আগুন দিচ্ছে। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে বিএনপি-জামায়াত ট্রেনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে দিয়েছে। যাতে ট্রেনের বগি পড়ে গিয়ে মানুষ মারা যায়। মানুষ মারার ফাঁদ তারা তৈরি করে দিয়েছে। এর থেকে ঘৃণার আর কী থাকতে পারে। অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও এটাই নাকি তাদের আন্দোলন। মানুষের জন্য আমরা রাজনীতি করি, মানুষকে মেরে কিসের আন্দোলন, সেটাই আমার প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, মানুষের জন্য আমরা রাজনীতি করি। মানুষকে হত্যা করে, মানুষ খুন করে কী আন্দোলন? প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। অগ্নিসন্ত্রাস যারা করতে আসবে, তাদের সাথে সাথে ধরে শাস্তি দিতে হবে। পুলিশে দিতে হবে। মানুষের জীবন নিয়ে আমরা কাউকে খেলতে দেব না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শুধু তাই না, ট্রেনে আগুন দিয়েছে। মা আর শিশু, মা তো সন্তান ফেলতে পারে না। মা সন্তানকে বুকে নিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এই দৃশ্য যারা দেখে সহ্য করা যায় না। ওই বিএনপি-জামায়াত মিলে অগ্নিসন্ত্রাস যারা করে, তারা মানুষ মেরে আন্দোলন করে। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষকে হত্যা করে, মানুষকে খুন করে কিসের আন্দোলন। আমাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে। যারা এসব ঘটাতে আসবে তাদের ধরে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। পুলিশকে দিতে। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করি। দিন রাত পরিশ্রম করে মানুষের ভাগ্য বদলাতে কাজ করছি। আর তারা আসে ধ্বংস করতে। দরকার হলে আমাদের আশেপাশে রেললাইন পাহারা দিতে হবে। আমি সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে কেউ ভূমিহীন, কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকেরই একটা ঘর হবে। রংপুর বিভাগের প্রায় প্রতিটি উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হয়েছে। এভাবে দেশের ৩৪টি জেলা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত। বাকি জেলাগুলোও খুব অল্পসময়ে আমরা ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত করে দিতে পারব।

আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নৌকা অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। (উন্নয়ন) অব্যাহত থাকতে হলে কী দরকার বলেন? নৌকা মার্কায় ভোট দরকার। একমাত্র নৌকা মার্কা স্বাধীনতা দিয়েছে, নৌকা হচ্ছে নূহ নবীর নৌকা, মহাপ্লাবন থেকে মানুষকে রক্ষা করেছে। এই নৌকা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে, এই নৌকাই দেবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ।

সরকার প্রধান বলেন, ১৫ বছর আগে কী অবস্থা ছিল, আজ কী অবস্থা। যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটা করাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মানুষের জীবনমান উন্নত করতে কাজ করছি। দেশের মানুষকে শিক্ষিত করতে এবং প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ জনশক্তি গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলার দুঃখী মানুষের উন্নয়নে সারা জীবন কাজ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রংপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, পীরগঞ্জের সঙ্গে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করেছি। ওয়াজেদ মিয়া সেতু করে দিয়েছি, তার সুফল জনগণ পাচ্ছে। রেল, সড়কসহ বিভিন্ন ব্রিজ তৈরি করে গতি এনেছি। যুবকরা ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা করতে পারছে। আর এসব হয়েছে নৌকাকে ভোট দেয়ার জন্য।

প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ করেছে। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার আগে কারও হাতে মোবাইল ফোন ছিল না। এখন হাতে হাতে মোবাইলফোন। ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে গ্রামে-গঞ্জে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আমরা তরুণদের প্রযুক্তি জ্ঞানের ব্যবস্থা করেছি। এতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবথেকে অবহেলিত রংপুর। আমি নির্বাচনে আসার পর বিভাগ হিসেবে চালু করি। রাস্তা-ঘাট কালভার্ট ব্রিজসহ সার্বিকভাবে রংপুরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা, যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। আমরা পীরগঞ্জের সাথে দিনাজপুরের সংযোগে ওয়াজেদ মিঞা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছি। যাতে পীরগঞ্জের মানুষ সহজেই দিনাজপুর যেতে পারে। রংপুর বিভাগের প্রতিটি উপজেলা ভূমিহীনমুক্ত হয়েছে। আমি এভাবে সারা বাংলাদেশ ভূমিহীনমুক্ত করতে কাজ করছি। সবচেয়ে বেশি মঙ্গাপীড়িত রংপুর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আর মঙ্গা হয়নি। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কা হচ্ছে নুহ নবির (আ.) নৌকা। মহাপ্লাবন থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করেছিল। আমার মেয়ে শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দিয়ে গেলাম আপনাদের কাছে। শিরীন শারমিন চৌধুরী আমার মেয়ের মতো। নৌকায় ভোট দেওয়া মানে আমাকে ভোট দেওয়া, জয়কে ভোট দেওয়া। সে জয়-পুতুলের বোন। এসময় শিরীন শারমিন চৌধুরীর হাত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শিরীন শারমিন চৌধুরী অত্যন্ত মেধাবী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে জীবনে কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। সে অত্যন্ত মেধাবী। ২০০৮ থেকে তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন আপনারা। তার নেতৃত্বে পীরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। আগামীতেও যেন এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকে সেজন্য তাকে ভোট দেবেন।

প্রধানমন্ত্রী পীরগঞ্জবাসীর উদ্দেশে বলেন, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, এজন্য আপনাদের কাছে এসেছি। আপনারা ২০০৮ এর নির্বাচন, ২০১৪, ২০১৮ এর নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। আপনারা এমন একজনকে ভোট দিয়েছেন, যিনি আমার কন্যার মতো। তাকে আমি এনেছি এখানে। অত্যন্ত মেধাবী, সেই সাথে পার্লামেন্টের স্পিকার। পার্লামেন্টের স্পিকার হচ্ছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতির পরেই যার অবস্থান। আমি পার্লামেন্টের সংসদ নেতা। পার্লামেন্ট পরিচালনা করেন স্পিকার। আমি গোপালগঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রী আর এখান থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকার।

‘হামাক একখান ভোটার দিবান না’

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অত্যন্ত গর্বিত। আমি মনে করি পীরগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্পিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন পদ। রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। আপনারা কি বুঝতে পারেন, এই শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নির্বাচিত করে পীরগঞ্জবাসী কত উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এজন্য আমি পীরগঞ্জবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি যে প্রার্থী দিয়েছি, উপহার দিচ্ছি, এই যে শিরীর শারমিন চৌধুরী জীবনে কোনো দিন ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি। বিদেশ থেকেও ডিগ্রি নিয়ে এসেছে। অত্যন্ত মেধাবী। আমরা চাই সবাই শিক্ষায় দীক্ষায় এগিয়ে যাক। এই পীরগঞ্জে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাই ছিল না। আমরা শিরীন শারমিনের নেতৃত্বে মেরিন একাডেমি করে দিয়েছি। অনেকগুলো ট্রেনিং একাডেমি করে দিয়েছি। এখানকার রাস্তাঘাট পাকা করে দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যায়লগুলো ঠিক করে দিয়েছি। জরাজীর্ণ ভবন নতুন করে দিয়েছি। জয়িতা ফাউন্ডেশন এই শিরীন শারমিন মন্ত্রী থাকাকালীন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, পীরগঞ্জ অত্যন্ত অবহেলি একটা জায়গা ছিল। সবাই পীরগঞ্জকে চেনে, পীরগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নে ব্যপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আমি বলব, ১৫ বছর আগের কথা চিন্তা করবেন। এই পীরগঞ্জ কেমন ছিল। আর এখন কেমন হয়েছে। গোটা রংপুর বিভাগকে দারিদ্র বিমোচন একাডেমি করে দিচ্ছি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণায় রংপুর সফরে এসে দুপুর আড়াইটার দিকে পীরগঞ্জের ফতেহপুরে স্বামী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বাড়ি ‘জয়সদনে’ পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে পৌঁছে ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন এবং শ্বশুরবাড়ির স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিয়োগ করেন। এরপর মধ্যাহ্নভোজ শেষে রংপুর-৬ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে সড়কপথে সৈয়দপুর গিয়ে বাংলাদেশ বিমানযোগে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরআগে দুপুর ১২টার দিকে রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের নির্বাচনীয় জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।